তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার : কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে কিছু রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের খবরে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনার পর থেকে সীমান্তে বিজিবি’র পাহারা জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তের লোকজন নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবরে দলে দলে গিয়ে বিজিবি’র সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় টহল দিচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন-‘কক্সবাজার জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তাই কোনো লোক কক্সবাজার জেলার ভৌগলিক সীমানার ভেতর ঢুকতে পারবে না।’ তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে বেশ কিছু রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের কথা তিনি জানতে পেরে বিজিবিকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে জানিয়েছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন- ‘করোনাভাইরাস আক্রান্ত না হলেও নতুন করে দেশে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই। কেননা স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের নিয়ে অতিষ্ঠ। এলাকাবাসীর সঙ্গে দিন দিন রোহিঙ্গাদের দূরত্বও বাড়ছে।’ তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে কোনো রোহিঙ্গাকে স্থান দেওয়া যাবে না। এ জন্য তিনি সীমান্তবর্তী থানার পুলিশকেও এ বিষয়ে সজাগ থাকতে বলেছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত প্রায় সাড়ে ৮টা থেকে সীমান্তবর্তী এলাকাসমূহে এ ধরনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে স্থানীয় জনগণ নতুন করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে সীমান্তে নিজ নিজ উদ্যোগে পাহারা বসিয়েছে। উখিয়ার সীমান্তবর্তী পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন- ‘সীমান্ত এলাকার লোকজন এমনিতেই রোহিঙ্গাদের ওপর ক্ষিপ্ত। তদুপরি দেশের এমন সময়ে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ এলাকাবাসী কোনোভাবেই সহ্য করবে না।’ তিনি জানান, কোনো একজন আক্রান্ত রোহিঙ্গা যদি শিবিরে ঢুকে পড়ে তাহলে অবস্থাটা কি হবে তা ভেবে দেখা দরকার।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, এ কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবরে এলাকার লোকজন সারারাত ধরে বিজিবি’র সঙ্গে সীমান্ত পাহারা দিয়েছে। এখনো লোকজন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে সময় পার করছে এলাকাবাসী। টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং ফেরামের সভাপতি হারুন সিকদার কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন- ‘নাফনদের ওপারে চিংড়ি ঘেরে কাজ করতে যাওয়া স্থানীয় বাংলাদেশি লোকজন মোবাইলে এপারে খবর দিয়েছেন সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত কয়েকজন রোহিঙ্গা নিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে।
উখিয়ার রহমতর বিল, আনজুমান পাড়া এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়াসহ সীমান্তের কয়েকটি চোরাই পয়েন্ট দিয়ে দফায় দফায় এরকম কয়েকটি রোহিঙ্গার দল অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এরকম খবর পেয়ে সীমান্তের স্থানীয় লোকজন মসজিদেও মাইকে মাইকে ঘোষণা দেয়। এতে সীমান্তের লোকজন দলে দলে চোরাই পয়েন্টগুলোতে জড়ো হয়। তদুপরি স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার সুলতান আহমদ সহ অনেকেই ফেসবুক আইডিতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পোস্ট দিলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এদিকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে গতকাল শুক্রবার ভোর রাতে রোহিঙ্গাদের একটি দল গোপনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকেছে বলে নানা সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। তবে শাহপরীর দ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পুলিশ পরিদর্শক দীপক জানিয়েছেন, এরকম খবর তাদের কাছেও ছিল। তবে খোঁজ নিয়ে কোনো রোহিঙ্গার হদিস পায়নি।
এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের-বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ জানিয়েছেন, সীমান্তে নুতন করে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তবুও বৃহস্পতিবার রাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টার খবরের ভিত্তিতে সীমান্তে টহল বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। অপরদিকে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।
Leave a Reply