1. kalamazad28@gmail.com : risingcox.com : Rising Cox
  2. msalahuddin.ctg@gmail.com : RisingCox :
  3. engg.robel@gmail.com : risingcoxbd :
শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১০:৩৮ অপরাহ্ন

ভিন্ন এক বৈশাখ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০
  • ১০ Time View

কাজল ঘোষ : একবছর আগে নিশ্চয়ই এটা বললে লোকে পাগল বলত। ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন, নিরাপদে থাকুন। কিন্তু এবার এটাই যৌক্তিক। এটাই বাস্তব। এমন নিয়ন্ত্রিত পরিবেশেই এবার হাজির হয়েছে বাঙালির চিরায়ত এক উৎসব। পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ।

বছরের শুরুর দিনটিতে শহরের লোক দলবেঁধে রমনায় যাবে না; পান্তা ইলিশ খাবে না; বাউলা গান গাইবে না; রেশমি চুরি আর লাল ফিতেতে চুল বাঁধবে না; বাঁশি আর মুখোশে নিজেকে ঢাকবে না; এটা হতেই পারে না। কিন্তু এসব কিছুই এবারের বৈশাখে নিয়ন্ত্রিত হয়ে এসেছে সবার জন্য। নতুন বছরের উৎসব করা যাবে। তবে বাইরে নয়। ঘরে। বাংলা নববর্ষ এবার এভাবে কাটবে এটা কেউ কষ্মিনকালেও ভাবতে পারেননি। বাঙালির জন্য এমন বৈশাখ বরণ আগে আর কখনও হয়নি। এবার পুলিশ রমনায় বাড়তি নিরাপত্তার ধকল সইবে না। র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড টহল দেবে না। একের পর নিরাপত্তা ব্রিফিং মিডিয়াকে কভার করতে হবে না। রমনা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটতে পারে এমন বাড়তি উদ্বেগ নিয়ে দিনভর টেলিভিশন স্ক্রল আর অনলাইনে চোখ রাখতে হবে না; অপেক্ষায় থাকতে হবে না।

নাগরিকদের জন্য ঘরে ফিরতে সূর্যাস্ত আইন বাতলে দেবে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছায়ানট প্রথম প্রহরে রমনার বটমূলে গেয়ে ওঠবে না ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।’ পুরো বিষয়টি একটু অন্যভাবে ভাবতে ইচ্ছে হয়। কবিগুরু ১৪০০ সাল নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন। যদি আজ তিনি বেঁচে থাকতেন তবে নিশ্চয়ই অন্য গান লিখতেন। মন খারাপ হয়, এক বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে করোনা ভাইরাসের থাবার কারণে। না হলে যেখানে উৎসবমূখর একটি সময় আমরা কাটাতাম সেখানে একরাশ দুশ্চিন্তার কালো মেঘ আর উদ্বেগ নিয়ে কাল কাটাচ্ছি। শতবর্ষ পরিক্রমায় ইতিহাসের এক ভিন্ন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে পুরো বিশ্বই। সেখানে আমরাও এর ব্যতিক্রম নই। পাকিস্তানি শাসকচক্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও ছায়ানট গেয়ে ওঠতো পুরোনো আর জীর্ণকে বিদায় দিয়ে নূতন শক্তির জাগরণের গান। কিন্তু করোনায় তা বন্ধ। রমনায় কোন আয়োজন নেই। হয়তো তা হবে কিন্তু নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে।

ইলিশ নিয়ে এবার আর ব্যবসায়ীদের বাড়াবাড়ি রকমের বাড়াবাড়ি দেখতে হবে না। জোড়া ইলিশ বা এক হালি ইলিশের চড়ামূল্যের খবরগুলো এবার শিরোনাম হবে না। পত্রিকাগুলো বর্ষশুরুর বিশেষ সংখ্যা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামবে না। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবার নিশ্চয় করোনা মুক্ত বিশ্ব কল্পনা করে শিল্পীরা আঁকবেন ছবি। যেখানে থাকবে যে সকল যোদ্বারা দেশে দেশে করোনা রোগিদের সেবায় অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিচ্ছেন তাদের প্রতিকৃতি। থাকবে মাস্ক আর গ্লাভসের ব্যবহার। যদিও আগেই ঘোষণা দেয়া আছে, এবার সবরকম আয়োজন বন্ধ। এ পরিস্থিতি যেন কবিগুরুর সেই আহ্বানকেই মনে করিয়ে দেয়, ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’ গগন জুড়ে আজ করোনার ভয়াল থাবার বিষাক্ত ছোবল। বাংলাদেশেও সরকারি হিসাবেই প্রতিদিন রোগি বাড়ছে। অঅর বেসরকারি হিসাব তো অনেক দূর। করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতেই বাইরে যাওয়া বারণ। সব আয়োজন ভেতরেই সীমাবব্ধ।

সামাজিক মাধ্যমেও নানা আলোচনা এবারের বৈশাখ পালন নিয়ে। জনৈক দম্পতি ফেসবুকে ভিডিও আপ করেছেন বৈশাখ নিয়ে। মজার এই ভিডিওতে দেখা যায়, বাসায় রান্নাঘরে পান্তা, কাঁচামরিচ নিয়ে স্ত্রী বলছেন, ইলিশ কোথায়? স্বামী একটি ছোট পোনা মাছ থালায় রেখে বলছেন, এই নাও তোমার ইলিশ। স্ত্রী বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই স্বামী বলে উঠেন, লকডাউন চলছে। এটা তুমি পানিতে ভিজিয়ে রাখো, দেখবে একদিন পর ফুলে তা ইলিশ হয়ে ওঠবে। বুঝলাম, আমাকে এবার মেলায় নেবে না। রেডি হয়ে নাও বলতেই স্ত্রী মাস্কের ওপর মেকাপ দিয়ে তৈরি। স্বামী স্ত্রী দুজন মাস্ক পড়ে বাসার বারান্দায় যাবে বের হতেই পুলিশের সতর্কতার সাইরেন। ঘরে ফিরে বন্ধ দরোজার ভেতর গান বাজিয়ে ‘বৈশাখ ১৪২৭’ বরণ করে নিলেন দম্পতি। তারা গাইলেন ‘ডোন্ট গো আউটসাইড, সেলিব্রেট ইনসাইড’। করোনা আতঙ্কের মধ্যেই কাটবে এবারের বৈশাখ। তবু, প্রার্থনা অন্ধকার কেটে আমরা দেখা পাব আলোর। চারিদিকে মঙ্গলবার্তা ছড়িয়ে যাবে নূতন গানের, নূতন দিনের।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 Rising Cox
Theme Customization By NewsSun