ক্রীড়া ডেস্ক, রাইজিং কক্স : সামিউল ইসলাম ফুটবল মৌসুমে খ্যাপ খেলে বেড়ান। গতির কারণে খুলনার ফুটবলে তাকে ডাকা হয় ‘এমবাপ্পে’। তবে ফুটবল মাঠে ঝলক দেখিয়ে আলোচনায় আসেননি তিনি। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ‘অবহেলিত’ অ্যাথলেটিক্সে নাম লেখান। আর প্রথমবার জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে খেলতে নেমেই বাজিমাত। গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আসরে বিজেএমসির হয়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ১১.৪১ সেকেন্ড সময় নিয়ে হন দ্রুততম মানব। এরপর ডিসেম্বরে হঠাৎই বিজেএমসি জানিয়ে দেয় তারা আর অ্যাথলেটিক্স দল রাখবে না। বিজেএমসির চাকরি হারালেন সামিউল।
এরপর পুরোপুরি ফুটবলে খ্যাপ খেলায় মনযোগী হন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে স্তব্ধ জনজীবন। সামিউলের খ্যাপ খেলাও তাই বন্ধ। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনাহারে দিন কাটছিল তাদের। একটি জাতীয় দৈনিকে এমন খবর প্রকাশের পর সামিউলের পাশে দাঁড়ান বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
২০ বছর বয়সী সামিউল স্বপ্ন দেখেছিলেন তার ক্রীড়া প্রতিভা দিয়ে পরিবারের হাল ধরবেন। সেটা তিনি ধরে ছিলেনও। বিজেএমসির চাকরিটা সামিউলের জন্য ছিল স্বপ্ন পূরণের মতো। চাকরির সুবাদে সপ্তাহে একহাজার ৮৫০ টাকা পেতেন। কিন্তু তিনি যে বেছে নিয়েছেন অবহেলিত অ্যাথলেটিক্সকে। ক্রীড়াঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ অ্যাথলেটিক্স। কিন্তু বাংলাদেশে তা নয়। প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে থাকা বিজেএমসির (বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন) অ্যাথলেটিক্স থেকে সরে আসায় কেউ তাই চমকে যাননি। চাকরি হারিয়ে সামিউলের সম্বল ছিল খ্যাপের ফুটবল। খ্যাপ খেলে প্রতি ম্যাচে পান ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা। সে আয় থেকে পিঠের ব্যাথার কারণে ভারী কাজ করার সামর্থ্য না থাকা বাবাকে করে দিয়েছিলেন ছোট্ট ডিজেলের দোকান। করোনা ভাইরাসের কারণে দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। খ্যাপও বন্ধ। ছয় সদস্যের সামিউলের পরিবারে ঘোর দুঃসময় চলছে। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রতিভাবান এই অ্যাথলেটের কঠিন সময়ে।
তামিম যখন সামিউলকে ফোন করেন সেটা বিশ্বাসই হয়নি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা থেকে উঠে আসা এই ক্রীড়াবিদের। সামিউল বলেন, ‘আমি ভেবেছি, তামিম ভাইয়ের নামে ফাজলামো করে কেউ ফোন দিয়েছে। তামিম ভাই আমাকে কোত্থেকে ফোন দেবেন! বিশ্বাসই করিনি, ফোন রেখে দিয়েছি। পরে আবার ফোন করায় যখন নিশ্চিত হলাম, আমার কী যে ভালো লাগল!’
‘অনেক কথা বলেছেন উনি। জানতে চাইলেন, আমাদের পরিবারের দৈনিক খাওয়ার খরচ কত। তারপর উনি যে টাকা পাঠিয়েছেন, এটা আমার ধারণারও বাইরে ছিল। ৩-৪ মাস তো অবশ্যই, হয়তো আরও বেশি চলে যাবে আমাদের। খুশিতে কান্না চলে এসেছিল আমার। উনি যে আমাদের কত বড় উপকার করেছেন, বলে বোঝাতে পারব না। বাবা-মা, সবাই খুব খুশি। তামিম ভাই এই দুঃসময়ে যা করেছেন, আমরা কখনোই ভুলব না।’
গতির কারণে ২০১৭ সালে সামিউলকে বিজেএমসিতে নিয়ে আসেন দেশের সাবেক দ্রুততম মানবী ও বিজেএমসির কোচ সুলতানা পারভিন লাভলী। জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা হওয়ার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছিলেন সামিউল। তখন বিজেএমসির চাকরির কথা ভেবে সেনাবাহিনীর প্রস্তাব না করে দেন। সেনাবাহিনীর প্রস্তাবে তখন কেন রাজি হলেন না? সেটা ভেবে হয়তো আক্ষেপ করেন তিনি। কিন্তু সামিউল যখন ভাববেন, এদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে অবহেলিত খেলাধুলার তালিকায় সবার উপরে অ্যাথলেটিক্স। তখন হয়তো আর আক্ষেপ পোড়াবে না তাকে।
Leave a Reply