রামাদান বা রমজান শব্দটা এসেছে আরবি মূল রামিদা বা আর রামাদ থেকে, যার মানে প্রচণ্ড উত্তাপ কিংবা শুষ্কতা। ইসলামিক বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস হলো এই রমজান মাস।
এই মাসেই বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা রোজা পালন করে থাকেন। রমজান মাসে রোজা পালন ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়। অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণ। এই মাসেই নাজিল হয়েছিল পবিত্র কুরআন। কোরআন নাজিলের রাতকে বলা হয় লাইলাতুল কদর। এই রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদতের থেকে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।
রোজা শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘দিন’। আর আরবিতে এর নাম সাওম বা সিয়াম। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং সেই সঙ্গে যাবতীয় ভোগ-বিলাস, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ এবং (স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে) যৌনসংগম থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। রোজা রাখার উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা, পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নিজেদের কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরহেজগারি বা তাকওয়া বৃদ্ধি করা।
ইসলামি বিধান অনুসারে প্রতিটি সুস্থ সবল মুসলমানের জন্য রমজান মাসের প্রতিদিন রোজা রাখা ফরজ বা অবশ্য পালনীয়। বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে তাকে অবশ্যই কাজা-কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোজা ভঙ্গ হবে, ততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট। আর কাফফারা আদায়ের তিনটি বিধান রয়েছে, একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে, যদি কারও জন্য ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয় তবে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খাওয়াতে হবে ও গোলাম বা দাসী আজাদ করে দিতে হবে।
বস্তুত রোজা রাখার বিধান সবযুগেই ছিল । এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’
‘সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩’
হযরত আদম (আ.)-এর রোজার ধরন কেমন ছিল তা সঠিকভাবে বলা যায় না। বলা হয়ে থাকে আদম (আ.)-এর সৃষ্টির পর তাকে ‘নিষিদ্ধ ফল’ বর্জনের যে আদেশ দিয়েছেন আল্লাহ এটাই মানব ইতিহাসের প্রথম সিয়াম সাধনা। বলা হয়ে থাকে হযরত মুসা (আ.)ও ৩০ দিন রোজা রেখেছিলেন। তুর পাহাড়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা তাকে আরও অতিরিক্ত ১০টি রোজা রাখার আদেশ দেন। ফলে তার রোজা হয়েছিল মোট ৪০ দিন। হযরত ঈসা (আ.)ও মুসা (আ.)-এর মতো ৪০ দিন রোজা রাখতেন। হযরত ইদ্রিস (আ.) সারা জীবন রোজা রেখেছিলেন। হযরত দাউদ (আ.) একদিন পর পর অর্থাৎ বছরে ছয় মাস রোজা রাখতেন।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে তিনদিন করে রোজা রাখার বিধান প্রচলিত ছিল। তবে এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। তাছাড়া প্রথম কবে ও কোন রোজা ফরজ করা হয়েছিল এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, ১০ মহররম অর্থাৎ আশুরায় রোজা ফরজ ছিল, আবার কারও কারও মতে, ‘আইয়ামুল বিজ’ অর্থাৎ প্রত্যেক চন্দ্র মাসে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা ফরজ ছিল। পরে রমজানের রোজা ফরজ হলে তা বন্ধ বা রহিত হয়ে যায়।
পুরো এক মাস পবিত্র রমজান মাসের রোজা রাখার আদেশ অবতীর্ণ হয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং সাহাবিদের মক্কা থেকে মদিনাতে হিজরতের ১৮ মাস পরে। তখন আরবি শাবান মাস চলছিল।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে
‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।
‘সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫’
Leave a Reply