1. kalamazad28@gmail.com : risingcox.com : Rising Cox
  2. msalahuddin.ctg@gmail.com : RisingCox :
  3. engg.robel@gmail.com : risingcoxbd :
বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৬:১৫ অপরাহ্ন

মেহেন্দিগঞ্জের প্রত্নস্থাপত্য : সলদী পাকা মসজিদ

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২০
  • ৯ Time View

আতিকুর রহমান হিমু

আরবি মসজিদ শব্দটি অধুনালুপ্ত আরমানিক ভাষার সাজাদা শব্দ থেকে এসেছে।
মতান্তরে সালাত শব্দ থেকে মুসল্লা এবং মুসল্লা থেকে মসজিদ শব্দের উৎপত্তি।
সাজদা অর্থাৎ সেজদা দেয়ার স্থান। ইসলাম ধর্মের অনুশাসনে মসজিদ সেজদার
জন্য অপরিহার্য নয়। পৃথিবীর যে কোন পবিত্র স্থানেই সিজদা দেয়া বা নামাজ
আদায় করা যাবে। তবুও প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মিয় গুষ্টির মতো মুসলমানদের নিজস্ব
স্বতন্ত্র এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রার্থনা ঘর মসজিদ। ধর্মিয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ
হিসেবে যুগে যুগে মুসলিম বিশ্বে মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। মুসলিম স্থাপত্য
রীতির উদ্ভাবে মসজিদের ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। আলো-বাতাস প্রবেশের দিকে
বিশেষ নজর রেখে বিশালাকারের নামাজ ঘর তৈরি, ফলে মসজিদকে অপরাপর উপাস্যনালয়
থেকে সহজেই পৃথক করা যায়। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) হিজরতের পরে ৬২২
খ্রিস্টাব্দে সর্ব প্রথম মসজিদ নির্মাণ হয় মদিনায়। এই মসজিদের প্রথম কিবলা
ছিল উত্তর মুখি অর্থাৎ জেরুজালিমের দিকে; পরিবর্তীতে ৬২৪ খিষ্টাব্দে
মহানবী (সঃ) একটি ওহি (অলৌকিক বাণী) লাভ করেন এবং কিবলা মক্কার ‘বয়তে
আর হারামের’ দিকে নির্ধারণ করেন। মদিনায় নির্মিত এই মদিনা মসজিদ বা
মসজিদে নবাবীর অনুকরণেই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানগণ মসজিদ
নির্মাণ করেন। ভারতবর্ষে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয় করাচি থেকে ৪০ মাইল
দূরের বামরো নামক স্থানে। দ্বাদশ শতাব্দীতে; দাস বংশীয় রাজাদের শাসন আমলে।
বাংলা কবে কখন প্রথম মসজিদ নির্মিত হয় তার ইতিহাস সঠিকভাবে জানা
যায়নি। মনে করা হয় ত্রয়োদশ শতকের প্রথমার্ধে (১২০৪-০৬) সেন বংশীয় রাজার লক্ষণ
সেনকে পরাজিত করে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি বাংলায়
মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করার অনেক আগে থেকেই মুসলিম ধর্ম প্রচারকগণ
ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য বাংলায় আসেন এবং বিভিন্ন স্থানে মসজিদ নির্মাণ
করেন। তবে বাংলায় সবচেয়ে বেশি মসজিদ নির্মাণ হয় সুলতানি আমলে (১৩৩৮-
১৫৩৮) স্বাধীন সুলতানি শাসনের ২০০ বছরে।
ষোলশ শতাব্দীতে নির্মিত পটুয়াখালির মির্জাগঞ্জ মসজিদ বরিশাল তথা
চন্দ্রদ্বীপের প্রথম মসজিদ বলে জানান গবেষক সাইফুল আহসান বুলবুল তার বৃহত্তর
বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন গ্রন্থে। আমাদের উল্লেখ্য,বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ
উপজেলা সদর (পাতারহাট) থেকে ৯ কি.মি দূরে অবস্থিত উলানিয়া ইউনিয়নের সলদী
গ্রামের পুরাতন মসজিদ। যা ‘পাকা মসজিদ’ নামে স্থানীয় ভাবে পরিচিত।
ভৌত অবকাঠামোর দিক দিয়ে ‘সলদী মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট, দেয়ালে
কোন টেরাকোটা নেই, ছিল কিনা তাও সঠিক ভাবে জানা যায়নি। (হতে পারে
বিভিন্ন সময়ে চুনকাম করায় মুছে গেছে) গম্বুজের উপর দিকে উল্টে দেয়া পদ্ম
পাপড়ি স্বদৃশ্য অলংকরণ বাদদিলে মসজিদটা বেশ সাদামাঠা ভাবেই নির্মিত।
বাহির দিক থেকে মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৭ফুট ৩ ইঞ্চি, প্রস্থ ৩১ ফুট ৯ ইঞ্চি। ভিতর দিক থেকে দৈর্ঘ্য: ৮ ফুট ৭ ইঞ্চি, প্রস্থ ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (দুই কাতার দাড়াবার
মতো)। মসজিদের দেয়াল ৪ ফুট ২ ইঞ্চি থেকে ৪ ফুট ৫ ইঞ্চি পুরো। মসজিদে
প্রবেশের জন্য (৫ ফুট ৮ ইঞ্চি, উচ্চতার ২ ফুট ৯ ইঞ্চি চওড়া) মোট ৫টি দরজা
রয়েছে। (পূর্বে ৩টি উত্তর এবং দক্ষিণে ১টি করে) উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ২টি করে
ছোট কুলঙ্গী এবং পশ্চিম দেয়ালে ২টি বড় কুলঙ্গী রয়েছে। মসজিদে ৫ ফুট লম্বা ও
৩ ফুট ১০ ইঞ্চি চওড়া মেহেরাব রয়েছে, মেহেরাবের উপরের অংশ ধ্বংসপ্রাপ্তের পরে
পুনরায় ভিন্ন ভাবে স্থাপন করা হয়; এ ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত ভাবে কিছুটা
পরিবর্তন দেখা যায়। ৫/৭ বছর আগে মসজিদটিতে জায়গা স্বল্পতার কারণে পূর্ব
দিকে মূল মসজিদের সাথে সংযোগ করে আরো একটি বিশালায়তন কক্ষ নির্মাণ
করেন। ফলে মূল মসজিদটা বাহির থেকে ভিন্ন অবকাঠামোর দেখায়।] সলদী
গ্রামের এই মসজিদটা কবে কে বা কারা নির্মাণ করেছে এর সঠিক কোন
প্রমাণ নেই; মসজিদের দেয়ালে বা অন্য কোথাও কোন শিলালিপি কিংবা
লিপিবদ্ধভাবে কিছু দেখা যায় না। হয়তো এসব কারণেই মসজিদটি নিয়ে
এলাকায় ‘মাটি ফুড়ে উঠেছে’ কিংবা ‘জ¦ীনেরা নির্মাণ করেছে’ বলে
স্থানীয়দের ভিতর মিথ ও লোকবিশ্বাস প্রচলিত আছে। যতদূর জানা যায় ১০০/১২০
বছর আগে মসজিদটির অনেকাংশ উইপোকা ঢিবি বা বাল্মীকির নিচে চাপা
পরেছিল। মিনার ঘিরে বুনোলতা আর মোতরার ঝোঁপঝাড়। এরপর মাটি খুড়তেই এক
সময় বেরিয়ে আসে ইটের গাথুনি, এই খনন কালে ধ্বংস প্রাপ্ত হয় মিহেরাবের
উপরদিকের একাংশ। এভাবেই মসজিদটি আবিস্কার হয়। শুরু হয় নিয়মিত ভাবে
আজান ও নামাজ। ধারাবাহিকভাবে মসজিদের ভিতরে পুরানো গন্ধবাহ সুরকী
মুছে টাইলস বাহিরে সংযুক্ত হয় নবধারায় নির্মিত বিশালায়াতন বারান্দা।
অবকাঠামো ও স্থাপত্য শৈলির দিক থেকে আমাদের ধারণা মসজিদটি মোগল আমলে
নির্মিত। মসজিদটির ছবি দেখে প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান জনাব
গোলাম ফেরদৌসও মোগল আমলের স্থাপত্য বলে মন্তব্য করেন। মেহেন্দিগঞ্জের
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এই অঞ্চলে মোগল সুবেদার শাহাবাজ খাঁ
(১৫৮৩-৮৫) অবস্থান করার পূর্বে বিপুল সংখ্যক মুসলিম ধর্মালম্বিদের বসতি ছিল
(বুদ্ধ ধর্মালম্বিদের থেকে অনেক বেশি এবং হিন্দু ধর্মালম্বিদের কাছাকাছি
সংখ্যক)। ১৫৮৩-৮৫ সময়ের শাহবাজ খাঁ থেকে সতের শতকের শেখ মোহাম্মদ হানিফ
এর মাঝামাঝি যে কোন সময়ে মসজিদটি নির্মিত হতে পারে বলে আমাদের
প্রাথমিক ধারণা। তবে মসজিদটি কে বা কারা নির্মাণ করেছেন? কোন
মুসলিম ধর্ম প্রচারক? এই অঞ্চলের কোন মুসলিম শাসক ? নাকি সাধারণ
জনগণ! শাসকদের নির্মিত মসজিদে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশালায়তন দৃষ্টিনন্দন
বারান্দা লক্ষ্যনীয় (তৎকালিন সময়ে মসজিদের বারান্দায় বসে ছোটখাটো বিচার
কার্য, বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় বিধান দেবার মতো রীতি
প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়।) অন্যদিকে ধর্ম প্রচারকদের মসজিদ কেবল মাত্র
প্রার্থনা এবং ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যেই নির্মিত হতো। সে ক্ষেত্রে আমরা
প্রাথমিকভাবে সলদী মসজিদের সাদামাঠ নির্মাণ শৈলির দিকে লক্ষরেখে ধারণা করতে পারি কোন ধর্ম প্রচারক নির্মাণ করেছেন। অন্যদিকে মসজিদটা সম্পর্কে
আমরা বিক্ষুব্ধভাবে হলেও কিছুটা তথ্য পাই ইতিহাসবিদ সিরাজ উদ্দীন আহমেদ
রচিত বরিশালের ইতিহাস (প্রথম খণ্ড) গ্রন্থে। এখানে জনাব আহমেদ
মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া ইউনিয়নের (শৌলদি) সলদী গ্রামের একটি এক গম্বুজ
বিশিষ্ট (যদিও এই গ্রামে এক গম্বুজ বিশিষ্ট কোন মসজিদ ছিল বলে জানা
যায়নি।) একটি মসজিদের কথা জানান যেখানে মসজিদের শিলালিপিতে লেখা
আছে যে জনৈক মোহাম্মদ শফি ১১৬১ সন মোতাবেক ১৭৫৪ খ্রিঃ এই মসজিদ
নির্মাণ করেছেন। আমরা সলদী গ্রামে এই বিশেষ মসজিদটি ব্যতিত অন্য কোন
পুরাতন পাকা মসজিদের সন্ধান পাইনি, বিশেষ কারণে এই মসজিদকেই মোহাম্মদ
শফি কর্তৃক ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত বলে মনে করতে পারি। যদিও মসজিদটির
দেয়াল বা অন্য কোথাও বর্তমানে কোন শিলালিপি বা বিশেষ কোন স্মারকচিহ্ন
স্থাপিত নেই, হতে পারে চুনকাম বা টাইলস স্থাপনের সময় স্মারক লিপিটি লুপ্ত
হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মেহেন্দিগঞ্জের অপরাপর দুইটি স্থাপনা ‘পাক্কা বাড়ি’ ও
উলানিয়া ‘জমিদার বাড়ি’ কে স্বীকৃতি দিয়ে সংরক্ষণের আশ্বাস দিয়েছে
ঠিক তেমনিভাবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এগিয়ে আসলে আমরা ‘সলদী’ গ্রামের
প্রাচীন এই মসজিদটির সঠিক ইতিহাস জানতে পারবো।

তথ্যসূত্রঃ
সৈয়দ মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশের মসজিদ; বাংলা একাডেমী-১৯৮৭
সিরাজ উদ্দীন আহম্মেদ- বরিশালের ইতিহাস (১ম খণ্ড); বাকেরগঞ্জ জেলা পরিষদ-১৯৮২
সাইফুল আহসান বুলবুল- বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন গতীধারা-২০১২
শ্রী সুখময় মুখোপাধ্যায়- বাংলার ইতিহাসের দু’শ বছর স্বাধীন সুলতানদের আমল; কোলকাতা- ১৯৬২
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া- বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ; দিব্য প্রকাশ-২০০৭
মোহাম্মদ আব্দুল মন্নান- বাংলা ও বাঙালী মুক্তি সংগ্রামের মূলধারা; সৃজন- ১৯৯১

লেখকঃ কবি ও গবেষক

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 Rising Cox
Theme Customization By NewsSun