অনলাইন ডেস্ক : কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর কর্মী ও গাড়ির প্রবেশাধিকার সীমিতকরণের লক্ষ্যে ডিজিটাল ট্র্যাকিং-ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ঝুঁকি প্রশমনে সরকার রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মী ও গাড়ির প্রবেশাধিকার সীমিত করার উদ্যোগ নেয়। জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি) জানায়, রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মী ও গাড়ির সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) পক্ষে ডব্লিউএফপি একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং পদ্ধতি তৈরি করেছে। মানবিক সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলো যাতে সময়মতো জরুরি সেবাগুলো চালিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিত করাই এ পদ্ধতির লক্ষ্য।
ডব্লিউএফপি জানায়, আরআরসি গত এপ্রিল মাসের শুরুতে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রবেশ সীমিত থাকাকালীন সময়ে প্রতিদিন গাড়ির একটি তালিকা অনুমোদন করতো। সেই তালিকা অনুযায়ী স্থানীয় ও জাতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রতিটি গাড়ির অনুমোদনপত্র ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যাচাই করে দেখতো। এর ফলে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত গাড়িগুলোকে অপেক্ষা করতে হতো এবং রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চেয়ে কম সময় পাওয়া যেত। সেই প্রক্রিয়াকে দ্রুততর ও আরো সুদক্ষ করে তুলতে ‘হিউম্যানিটেরিয়ান একসেস প্রজেক্ট’ এর আওতায় ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে। এতে করে গাড়িগুলোর দেরি হবে না এবং চেকপয়েন্টে অপেক্ষার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা যাবে। এছাড়াও, যাত্রী ও চালকদেরকে এখন গাড়ি থেকে নেমে নির্ধারিত বইয়ে স্বাক্ষর করতে না হওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষের পক্ষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারটি সহজ হচ্ছে।
চেকপয়েন্টে কোন সংস্থার কোন গাড়ি আশ্রয় শিবিরে যাচ্ছে তা চিহ্নিত করতে কর্তৃপক্ষকে গাড়িগুলোর জন্য নির্ধারিত কিউআর কোড স্ক্যান করার কাজে সহায়তা করছেন ডব্লিউএফপির কর্মীরা। এর ফলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গাড়িগুলোকে চিহ্নিত করে ক্যাম্পে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের অন্যান্য শহর ও নগরে কভিড-১৯ এর বিস্তার শুরু হয়ে গেছে, তাই আরআরআরসি অফিস থেকে আমরা এমন একটি সমাধান বের করতে চেয়েছি যেন আমরা ক্যাম্পে জরুরি সেবাগুলো দেওয়ার পাশাপাশি সেখানে কভিড-১৯ এর বিস্তার বন্ধ করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, ডব্লিউএফপি, ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) ও লজিস্টিক সেক্টর সীমিত সংখ্যক কিছু গাড়ির জন্য কিউআর কোডসম্পন্ন গাড়ির পাসের আইডিয়াটি নিয়ে এসেছিল। গাড়ি পর্যবেক্ষণের এই পদ্ধতি ব্যবহার করে এখন আমরা প্রতিদিন কতগুলো গাড়ি ও কতজন যাত্রী যাচ্ছেন, তা যাচাই করে দেখতে পারি। এই প্রক্রিয়ার যারা সরাসরি যুক্ত আছেন, তাদের প্রতি আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ।’
বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির প্রতিনিধি রিচার্ড রেগান বলেন, ‘জরুরি অবস্থার মতো দ্রুত গতিশীল পরিবেশে প্রকল্প হাতে নেওয়া ও সেগুলোকে চালু রাখার জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ক্যাম্পে গাড়ি ও কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে আনার মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা দেওয়া ও ক্যাম্পে কভিড-১৯ এর ঝুঁকি কমানোর জন্য গোটা মানবিক সহায়তা গোষ্ঠী কঠোরভাবে পরিশ্রম করছে।
বর্তমানে আটটি চেক পয়েন্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে ডব্লিউএফপির ১২ জন কর্মী গাড়িগুলোকে চিহ্নিত করছেন।
Leave a Reply