মুহম্মদ নূরুল হুদা
শুনুন শুনুন জাঁহাপনা, শুনুন শুনুন বিশ্বজন
কবির বাড়ি আসল বাড়ি, জানেন বলুন কয়জন!
জমিদারের বাড়ি ছিল এখন শুধু কবির বাড়ি
কবিদারি জারি যখন, খতম তখন জমিদারি।
দেবেন্দ্রনাথ আর সারদা যেই বানালো জীবন-সাঁকো
উড়তে উড়তে দেখলো কবি বালিহাঁসের বিশাল ঝাঁকও।
ঘূর্ণি উড়াল দিয়ে কবি ডাকলো কোঁয়াক কোঁয়াক ডাক,
এক পলকে এলো ঘুরে হাজার নদীর হাজার বাঁক।
মহানন্দার তীর পেরিয়ে পদ্মা-পাড়ে যখন এলো
চরের পরে চর পেরিয়ে সোনার তরী তখন পেলো।
এইতো হেথা এই তো হেথা অন্য কোথা আর তো নয়
কবি-পাখি পরিযায়ী, ঘর করেছে এখন জয়।
বুকের ভিতর মুখ লুকিয়ে গুটিয়ে দুটি সুঠাম ডানা,
চন্দ্রালোকে দিলো কবি বাসর ঘরে হঠাৎ হানা।
বাবা-মায়ের বিরল ক্ষণে ফুটলো মুখে তখন হাসি:
এমন সাঁকো মিলন সাঁকো যুগলাঙ্গে মোহন বাঁশি।
তারও আগে নামটি ছিলো, সেদিন থেকে হলো খাস
জোড়াসাঁকোর আঙিনাতে কবিহাঁসের আসল বাস।
উঠোন জুড়ে শঙ্খচিলের, মগ্ন-উজাড় ডাকাডাকি,
কবির ডাকে ভিড়ছে নীড়ে হাজার হাজার কবি-পাখি।
দেশ-মহাদেশ পেরিয়ে কবি এলো আবার ঋষির বাড়ি:
কৃষিকাজে মন দিলো সব, দিলো না আর দূরের পাড়ি
ইরান-তুরান মাদাগাসকার দূরের নদী আমাজন
বনের পাখি মনের পাখি, মন যে সদা উচাটন;
জোড়াসাঁকোর তরুর ডালে বাঁধলো তারা আপন বাসা:
তপোবনের ঋষির মনে খুঁটলো আপন ভালোবাসা।
ভালোবাসাই শস্যদানা, ভালোবাসাই আসল সুখ
জগতে আনন্দযজ্ঞে লুকায় কবি আপন মুখ।
সব দেখলো সব বুঝলো যখন শেষে সবাই তারা,
দ্বাদশ শিশুর আগমনে ঘরে ফেরার হঠাৎ তাড়া।
তারপরেই সকল পাখি নীলে ভাসায় নিজের ডানা,
হাসলো যখন চতুর্দশে আকাশজোড়া আকুল ছানা।
জোড়াসাঁকোয় এসেছিলো জোড়াসাঁকোয় আজো আছে
জলও পড়ে পাতাও নড়ে পাতায় পাতায় গাছে গাছে।
মনমানুষের মিলন থেকে জন্ম যখন মগ্ন কবির
পাখিরা সব মেললো ডানা, পেলো সাহস বীর দধীচির।
পাখি ছিল বাংলা পাখি, বিশ্বপাখি সেই থেকে আজ
দেহেমনে বিশ্বপাখির বিরল চিরল কারুকাজ।
অন্য সকল বন্য পাখি সঙ্গে নিয়ে দিলেন পাড়ি
দিলেন তিনি মুহূর্তেই বিশ্বে পাড়ি তাড়াতাড়ি।
পাখিমানুষ মানুষপাখি অভিন্ন এক গড়ে বাড়ি
বিশ্ববাড়ি জোড়াসাঁকো, কবির সদ্য আঁতুর-নাড়ি।
এই বাড়িতে জন্ম কবির, সংসারও এই একটি বাড়ি
মরণ যখন মহামিলন, তখনো তারঁ একটি বাড়ি :
এমন কবির জারি শুনতে লাগলো কানের কাড়াকাড়ি
শুরু হলো, শেষ হলো না কবিমাঝির আলাপ জারি।
কুলে বসে দেখছি একা সোনার তরীর একা পাড়ি –
ওরে,
শুরু হলো, শেষ হলো না জোড়াসাঁকোর কবির জারি।
২৫ মে ২০২০
বি.দ্র. :
বাড়িতে করোনা-বন্দি থেকে বিশ্বকবির জন্য অশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি। সেইসঙ্গে আমাদের বর্তমান দীনতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে যৎকিঞ্চিৎ এই আহাজারি। জোড়াসাঁকো জগতের সকল কবির আপন বাড়ি।
Leave a Reply