কালাম আজাদ :
মানব সভ্যতার অগ্রগতি সাধিত হয় উৎপাদন ব্যবস্থার বিকাশের সাথে এবং এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সংস্কৃতিসহ সভ্যতার অন্যবিধ উপাদান। উৎপাদনের সম্পর্কসমূহের সমহারই অর্থনীতি- যা সমাজের ভিত্তি। যার উপর দিয়ে গড়ে ওঠে উপরিকাঠামো। উৎপাদনের সুত্রপাত মূলত কৃষি ব্যবস্থা থেকে। কৃষি ব্যবস্থা প্রথমে ছিল নিছক রোপন ব্যবস্থা। পরে লাঙলের মাধ্যমে ভূমি কর্ষণ ব্যবস্থার সুত্রপাত। হল বা লাঙল কৃষি কাজের প্রধান হাতিয়ার। উৎপাদনের জন্য যা করা হয় তা হল কর্ষন। এই কর্ষনই জীবনের মৌলিক ভিত্তি তৈরী করে এবং তার উপরে নির্ভর করে যা কিছু বিকাশ করে যেমন রীতি-নীতি, পোষাক-পরিচ্ছদ, আইন-কানুন, সংস্কার-বিশ্বাস ইত্যাদিও হয় এই উৎপাদনের ব্যবস্থার উপরি কাঠামো। সে জন্য এ গুলোর সম্মিলিত নাম হয় কৃষ্টি, যা কর্ষণ শব্দ থেকে জাত। আর এই কর্ষণ থেকে সংস্কৃতির সুত্রপাত। মানুষের সৃষ্টিশক্তির পরিচয় তার সংস্কৃতিতে। এই সৃষ্টিশক্তির জন্যই মানুষ। মানুষ অন্যজীব থেকে স্বতন্ত্র। অন্যজীব প্রকৃতির বশ; কিন্তু মানুষ প্রকৃতিকেও বশে আনতে পারে,সৃষ্টি করতে পারে। সে কৃতি বা সৃষ্টির দ্বারা মানুষ। মানুষ তাই সংস্কৃতি। আর মানুষেরা সে সব রীতিনীতি, কলা-কৌশল মেনে চলে সংস্কৃতিকে ধারণ করে। তাই E.B Tailor এর মতে বলা যায়- Culture is that complex whole which includes knowledges beliefs, arts, morals law, custom and any other capabilities and habits acquired by man as a member of society (জ্ঞান, বিশ্বাস, কলা, নীতি, আইন, প্রথা এবং সমাজের সভ্য হিসেবে আহরিত অন্যান্য যোগ্যতা ও অভ্যাসের সমষ্টিকে সংস্কৃতি বলে)। এই বিচারে আর্ট বা শিল্পকলাও সংস্কৃতির অংশ। শিল্পকলা হলো সাহিত্য, চিত্রকলা, নৃত্য, সংগীত (যন্ত্র ও কণ্ঠ), ভাস্কর্য ও স্থাপত্য। আমি বক্ষমান নিবন্ধে কক্সবাজারের নাট্যচর্চা বিষয়ে আলোচনার প্রয়াসি হচ্ছি।
সমুদ্রতীরবর্তী কক্সবাজারের নান্দনিক সাংস্কৃতিক চর্চায় ভুমিকাও কম নয়। যদিও আমি কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক চর্চার পুর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে পারব না তথাপি কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক চর্চার ধারাবাহিকতার ইতিহাস প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক আলোচনা করার চেষ্টা করা গেল-সাংস্কৃতিক চর্চার বিভিন্ন অংশের মধ্যে নাট্য, সংগীত চিত্রকলা প্রভৃতি শাখার মধ্যে নাটক একটি সমৃদ্ধ শাখা।
কক্সবাজারে কখন কোথায় নাট্যচর্চার শুরু হয় তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও বৃটিশ আমলে এখানে নাট্যচর্চা শুরু হয় বলে জানা যায়। তাই কক্সবাজারের নাট্যচর্চার ইতিহাসের ধারাবাহিকতার সুবিধার্থে সময়চেতনার ভিত্তিতে তিনটি ভাগে করে ব্রিটিশ ও দেশভাগোত্তর নাট্যচর্চা/শতবর্ষী ঐতিহাসিক নাট্য চর্চা, দেশ-ভাগ পরবর্তী কক্সবাজারে নাট্য চর্চা এবং স্বাধীনতা পরবর্তী নাট্য আন্দোলন বা নাট্য চর্চা নামক তিনভাগে ভাগ করে আলোচনার প্রয়াসি হচ্ছি।
ব্রিটিশ ও দেশবিভাগোত্তর কালে কক্সবাজারে নাট্যচর্চা/শতবর্ষী ঐতিহাসিক নাট্য চর্চা
কক্সবাজারে কখন কোথায় নাট্যচর্চার শুরু হয় তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও বৃটিশ আমলে ১৯২৩ সালের জানুয়ারিতে চকরিয়া উপজেলার কাকারায় কে সি দে এর ভাই কে দে এর আগমন উপলক্ষ্যে উন্মুক্ত মঞ্চে চৌধুরী বাড়ি প্রাঙ্গনে হ্যামলেট নাটক সর্বপ্রথম মঞ্চস্থ হয়। এতে ফেরদৌস আহমদ চৌধুরীসহ স্বদেশিরা অংশ নেন।
‘হ্যামলেট’ নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে চকরিয়ায় নাট্যচর্চা শুরু হয়। এরপর ১৯২৭ সালে চকরিয়া এম. ই স্কুলে (চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) মঞ্চায়িত হয় ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ নাটকটি।
১৯৩০-৩২ এর দিকে একই স্থানে মার্চেন্ট অব ভেনিসের অংশ ‘সাইলক দ্যা জো’ মঞ্চস্থ হয়। এতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্ণেল হাইড, বোমাং রাজা ক্যজ্য প্রু চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
চকরিয়ার হারবাংয়েও সাংস্কৃতিক চর্চা ছিল তখন থেকে। তবে এর সাথে জড়িতদের ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া যায় নি। পরে ক্রমান্বয়ে সংস্কৃতিচর্চা চকরিয়ার সর্বত্র কমবেশি ছড়িয়ে পড়ে এবং এসব ঐতিহাসিক নাটকের সাথে সাথে ‘আজব ডাক্তার’, ‘বিষাদ সিন্ধ’ু, ‘সোহরাব রুস্তম’, ‘সিন্ধু বিজয়’ ইত্যাদি নাটকও মঞ্চস্থ হয়।
ত্রিশের দশকে রামুর বিখ্যাত ব্যবসায়ী উ-খিজারী দালালের আর্থিক সহায়তায় ‘রামু ক্লাব’ নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান রামু থানার উত্তরদিকে উমেশ ধূপীর ভিটায় দানবীর খিজারী দালালের আর্থিক সহায়তায় ক্লাবঘরসহ স্থায়ী মঞ্চ সম্বলিত বৃহদাকার একটি মিলনায়তন নির্মিত হয়। ওই মিলনায়তনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নাট্যকর্মী এনে নাটক মঞ্চায়ন করা হতো। এ সময় মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘সিরাজউদ্দৌলা’, ‘টিপু সুলতান’, ‘সাহাজাহান’ প্রভৃতি উল্লেখ যোগ্য।
চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে জীবন খাসনবিশ নামে একজন সংস্কৃতিবান এস.আই রামু থানায় বদলী হয়ে আসেন। তাঁর উৎসাহ ও উদ্দীপনায় রামুর নাট্যচর্চা আরো গতিশীল হয়। এ সময় জাকের আহমদ চৌধূরীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘রামু বাজার ড্রামাটিক এসোসিয়েশন’। রামুর নাট্যাঙ্গনে যারা অবদান রাখেন রাজ কিশোর চক্রবর্তী, রেবতী মোহন বড়ুয়া, শ্রীধন বড়ুয়া, রাস বিহারী চৌধুরী, শচীন বড়ুয়া, জীবন খাসনবীশ, রমনী গাঙ্গুলী, দীনেশ বড়ুয়া মহাজন।১
রামুতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যে সময় পর্যায়ক্রমে জড়িত ছিলেন শতীশ দাস, বিপিন দাশ, রাজ কিশোর চক্রবর্তী, রেবতী মোহন বড়ুয়া, শ্রীধন বড়ুয়া, শচীন বড়ুয়া, জীবন খাসনবীশ, রমনী গাঙ্গুলী, দীনেশ বড়ুয়া মহাজন, জাকের আহমদ চৌধুরী, ওবায়দুল হক, নুরুল ইসলাম বাচ্চু, সমীর বড়ুয়া, নুরুল হাকিম (অবসরপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা), বিমল বড়ুয়া, মাহফুজুর রাব্বী (অবসরপ্রাপ্ত আনসার এ্যাডজুটেন্ট)। এখানে নাট্যচর্চার পাশাপাশি সঙ্গীত চর্চাও চলত।
দেশভাগ পরবর্তী কক্সবাজারের নাট্য চর্চা (১৯৪৭-১৯৭১)
এ কে ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২) উত্থাপিত ও চৌধুরী খালেকুজ্জামান (১৮৮৯-১৯৬০) সমর্থিত লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগুরু মুসলিম অঞ্চলগুলি নিয়ে ‘স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ’ (ওহফবঢ়বহফধহঃ ঝঃধঃবং) গঠনের কথা উল্লেখ থাকলেও ১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল দিল্লীতে মুসলিম আইন পরিষদ সম্মেলনে বাংলার প্রতিনিধিদের প্রতিবাদকে স্তব্ধ করে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ (১৮৭৬-১৯৪৮) ‘স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ’ (ওহফবঢ়বহফধহঃ ঝঃধঃবং) থেকে ‘এস’ কে অসাবধানতাপ্রসূত ও ছাপাখানার ভুল বলে উল্লেখপূর্বক ‘পাকিস্তান’ এর পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ফলে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের মিথ্যা প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে এ সময় সারা প্রদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের অধিকাংশ নেতা পাকিস্তান আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ওই ইস্যুকে ঘিরে অনুষ্ঠিত ১৯৪৬ এর প্রাদেশিক নির্বাচনে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু ওই নির্বাচন হয়েছিল প্রদেশগুলোতে সরকার গঠনের জন্যে। কোনো প্রদেশ বিভক্ত করার কথা ছিলো না। কিন্তু মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও কূটকৌশলের কাছে ভারতের স্বাধীনতার জন্য সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বকারী প্রধান দল ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এর মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (১৮৬৯-১৯৪৮), পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু (১৮৮৯-১৯৬৪), সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল (১৮৭৫-১৯৫০) প্রমুখ কংগেস নেতা হার মানে। বৃটিশ শাসকদের সর্বশেষ প্রতিনিধি ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে ও তত্ত্বাবধানে ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলের-রাজস্থানের অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত সিন্ধু, পাঞ্জাবের পশ্চিম অংশ নিয়ে গঠিত পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (যা আফগানিস্তানের পাখতুন অঞ্চল নামে পরিচিত ছিল) এবং পূর্বাঞ্চলে তৎকালে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব বাংলা নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ পূর্ববঙ্গ নিয়ে গঠিত হয় একটি নতুন রাষ্ট্র, যার নাম পাকিস্তান। এই পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে প্রায় ১২০০ মাইল ব্যবধান; মধ্যবর্তী ভূভাগের পুরোটাই ভারতের। পরবর্তীতে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে পূর্বাংশের নাম দেওয়া হয় পূর্ব বাঙলা (পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান, আজকের বাংলাদেশ) আর পশ্চিমাংশের চার প্রদেশকে (পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তান) একত্রে নাম দেওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তান। যে নির্বাচনের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠিত হয় সে নির্বাচনে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের দাবিদার নিখিল ভারত মুসলিম লীগ কেবল পূর্বে বাংলাদেশ ও সিন্ধুতে সরকার গঠন করতে পারে। পাঞ্জাবে সরকার গঠন করে ইউনিয়নিস্ট পার্টি, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানে কংগ্রেস। অর্থাৎ এই প্রদেশসমুহে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়। সেই মতে, কেবল পশ্চিমে সিন্ধু ও পূর্বে বাংলাদেশ নিয়ে পাকিস্তান হওয়া উচিত ছিল। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের শেষ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম (১৯০৫-১৯৯৪), নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু (১৮৯৭-১৯৪৫)’র বড় ভাই কংগ্রেস নেতা শরৎচন্দ্র বসু (১৮৮৯-১৯৫০) এবং কংগ্রেস নেতা কিরণ শঙ্কর রায় (১৮৯১-১৯৫১), প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখের দাবি মোতাবেক বঙ্গদেশ তথা বাংলাদেশকে (আজকের পশ্চিমবঙ্গ-ত্রিপুরা-আসাম ও বাংলাদেশ) একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে নেয়া যেতো। যদি সেটাই হতো তাহলে ১৯৪০ সালে বাংলার বাঘ এ কে ফজলুল হক উত্থাপিত ও চৌধুরী খালেকুজ্জামান সমর্থিত লাহোর প্রস্তাবের ‘স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ’ (ওহফবঢ়বহফধহঃ ঝঃধঃবং) এর সাথে সংগতিপূর্ণ। তাহলে বাংলা হতো নিখিল বঙ্গভূমির বিরাট এক জনগোষ্ঠীর অবিসংবাদিত রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু বাস্তবে তা না করে, জনগণের কোনো ম্যাণ্ডেট না নিয়েই পশ্চিম পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে পাকিস্তানের সাথে জুড়ে দেয়। আর পূর্ব পাঞ্জাব এবং বঙ্গদেশের পশ্চিম অংশ ও উত্তরাঞ্চলের অনেকটা তুলে দেয়া হয় ভারতের হাতে। মোটকথা ভারত বিভাগ ছিল ভারত জাতীয় কংগ্রেস ও নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অদূরদর্শী ও স্বার্থপর কিছু নেতার দ্বারা বানরের পিঠা ভাগের মতো।
১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান ও ভারত নামক পৃথক দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হলে বৃটিশরা ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত হন। ভারত বিভক্তির সাথে সাথে পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ বিত্তবান শিক্ষিত হিন্দুরা চলে গেলো পশ্চিমবঙ্গে আর অধিকাংশ বাঙালি মুসলমান যারা শিক্ষিত ও নগরকেন্দ্রিক হয়ে উঠলো, তারা যেন রাতারাতি আরব সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ধর্মের আবেগে পাকিস্তানি ভাবধারায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। ফলে সংস্কৃতির অঙ্গনে দেখা দিল শূন্যতা। তবে বাঙালি মুসলমানদের পাকিস্তান প্রেমের আচ্ছন্নতা কেটে যেতে বেশি সময় লাগেনি।
সাম্প্রদায়িক ভাগ বাটোয়ারার মধ্য দিয়ে নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের শিক্ষা-দীক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অনগ্রসর মুসলিম সম্প্রদায়ের সামনে আত্মপ্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়। দেশ বিভাগের আগে এই অঞ্চলের শিল্প-সাহিত্যে থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে একক আধিপত্য ছিল বিত্তবান হিন্দু সম্প্রদায়ের দখলে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাজনীতি ধীরে কিন্তু সুনিশ্চিতভাবে দুই শিবিরে বিভক্তির দিকে এগোতে থাকে, যার একদিকে অবস্থান নেয় রক্ষণশীল ইসলামি মৌলবাদ এবং অন্যদিকে একত্রিত হতে থাকে প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক মানবতাবাদী শক্তি। ফলে এই সময়ে নাট্য রচনার ক্ষেত্রেও দুইটি ধারা বিকশিত হতে দেখা যায়। কয়েকজন নাট্যকার নতুন দেশের আদর্শ উদ্দেশ্য নিয়ে নাটক লিখতে শুরু করেন। মূলত রক্ষণশীল মৌলবাদীরা ইসলামি ঐতিহ্য প্রচারের লক্ষ্য নিয়ে ঐতিহাসিক নাট্য রচনায় আত্ম-মনোনিবেশ করেন। আর গণতান্ত্রিক মানবতাবাদীরা সমাজ জীবনের বিবিধ ঘটনা-সংঘাত, রাজনৈতিক অঙ্গিকার, শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে উপজীব্য করে নাট্য রচনায় ব্রতী হন। এই সময়ের উল্লেখ যোগ্য নাট্যকারদের মধ্যে আবুল ফজল রচনা করেছিলেন- কায়েদা আজম, ইব্রাহিম খাঁ কামাল পাশা , আনোয়ার পাশা, ইব্রাহিম খলিল স্পেন বিজয়ী মুসা, আকবর উদ্দীন নাদির শাহ, মুজাহিদ ইত্যাদি।
আবার অন্যদিকে ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে উপাদান নিয়ে নুতন দৃষ্টিভঙ্গির নাটকও লেখা হয়েছে এ সময়ে। যেমন, মুনীর চৌধুরী রক্তাক্ত প্রান্তর, আবদুর রশিদ ছিদ্দিকীর ‘পাকিস্তান বিজয়’, শওকত ওসমান বাগদাদের কবি, আসকার ইবনে শাইখ তিতুমীর ও রক্তপদ্ম এই ধরনের প্রবণতাকে ধারণ করে। ২
সমাজ ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন নাটকও রচনা হতে থাকে এ সময়ে। যেমন- আবুল ফজল লেখেন ‘প্রগতি’, ‘সয়ংম্বরা’, শওকত ওসমান ‘তস্কর’ ও লস্কর, আমলার মামলা, সিকান্দর আবু জাফর ‘মাকড়সা’, দূরন্ত ঢেউ, আনিস চৌধুরী মানচিত্র এবং এ্যালবাম, নুরুল মোক্তাদির ‘শপথ এবং ‘আশার মানিক’ প্রভৃতি। এই সমস্ত নাটকগুলোতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের জীবন যন্ত্রণা উপস্থাপিত হয়েছে। তাছাড়া একই সময়ে আধুনিক নাট্য ভাবনা নিয়ে সমাজ ও রাজনীতির বিষয়কে উপস্থাপন করার প্রবণতা দেখা যায় নাট্যকারদের মধ্যে। যেমন- নুরুল মোমেন নেমেসিস, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ‘নয়নচারা’, তরঙ্গভঙ্গ ও বহিপীর, মুনীর চৌধুরী ‘কবর’, ‘নষ্ট ছেলে’, সাঈদ আহমদ ‘কালবেলা’, আলাউদ্দীন আল আজাদ ‘ধন্যবাদ’ ইত্যাদি নাটক রচনা করেন।
অপরদিকে লোক বাংলার প্রচলিত কাহিনীরও রূপায়ণ লক্ষ্য করা যায় এ সময়ে। যেমন- জসিম উদদীন বেদের মেয়ে ও মধুমালা, ফররুখ আহমেদ নৌফেল ও হাতেম, আ. ন. ম. বজলুর রশীদ ধনুয়া গাঙের তীরে, সাঈদ আহমদ তৃষ্ণায় ইত্যাদি নাটক এই ধারার উল্লেখ যোগ্য রচনা।
দেশভাগ পরবর্তী নাট্যচর্চার প্রধান অন্তরায় ছিল নাট্যমঞ্চের অভাব। ফলে নাট্য সাহিত্যের সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে নিঃসন্দেহে। এই সময়ে যে সব নাটক রচিত হয়েছে তার অধিকাংশের মঞ্চায়িত হবার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। মূলত সাহিত্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে নাটকগুলো। সেই সময়ে পেশাদার বা সৌখিন কোনোধরনের নাট্যদল ওখানে ছিল না। অনেক সময় ব্যক্তিগত কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নাট্যচর্চার সুযোগ করে দেওয়া হতো।
১৯৪৭ সনে দেশবিভাগের পর কক্সবাজারে নাট্যচর্চার প্রাণ সঞ্চারিত হয়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নাট্যচর্চা সমান তালে চলে। যথেষ্ট সমস্যা বিদ্যমান সত্ত্বেও সুধীজন, ছাত্র, যুবা, চাকরিজীবীসহ অনেকে নাট্যচর্চা করেছেন। সে সময় কক্সবাজারে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র ও প্রধান কেন্দ্র ছিল কক্সবাজার ইনস্টিটিউট কাম পাবলিক লাইব্রেরি। ১৯০৬ সালেই এ প্রতিষ্ঠানটির জন্ম।
১৯৪৭ সালে এডভোকেট জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী কক্সবাজার ইনস্টিটিউট কাম পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক থাকাকালে মহকুমা হাকিম মৌলভী আবুল খায়েরের পৃষ্ঠপোষকতায় কাছারি পাহাড়ে (বর্তমান কোর্ট বিল্ডিং) ‘মহারাজ নন্দকুমার’ নাটকটি মঞ্চায়নের মাধ্যমে কক্সবাজার শহরে নাট্যচর্চা শুরু হয়। এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের দৃষ্টি কাড়েন দেবপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ওবাইদুল হাকিম, নজিবুর রহমান, নলিনী দত্ত, প্রবোধ কুমার রক্ষিত, নিরোদ চক্রবর্তী, অমরেন্দ্র নাথ মজুমদার, মনমোহন সেন, বজল আহমদ প্রমূখ।
মনমোহন সেন, ওয়াহিদুল আলম, মকবুল আহমদ, আবদুর রহিম চৌধুরী, বজল আহমদ, এডভোকেট সুরেশ চন্দ্র সেন, এডভোকেট মনীন্দ্র লাল চৌধুরী, মোজাম্মেল হক চৌধুরী, দেব প্রসাদ ভট্টাচার্য, বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, এডভোকেট জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী ছিলেন এ ক্ষেত্রে পথিকৃত। ওই সময়ে কক্সবাজার ইনস্টিটিউট কাম পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন এডভোকেট জ্যোতিশ্বর চক্রবতী। স্বদেশী আন্দোলনের বিপ্লবী কর্মী হিসেবে কারাবরণ শেষে কক্সবাজারে বসবাস শুরু করে তখন। স্বদেশী আন্দোলনের আরেক বিপ্লবী এডভোকেট সুরেশ চন্দ্র সেন মাস্টারদা সূর্যসেনের বিপ্লবী দলের সদস্য হিসেবে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে অংশ নেন। এ সময়ে মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘কংকাবতীর ঘাট’, ‘মহারাজ নন্দকুমার’, ‘মনিকাঞ্চন’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘মোহমুক্তি’, ‘জীবন ষ্ট্যাচু, ‘নাটক নয় ফাঁস’, ‘ক্ষুধা’, ‘পথের শেষে’, ‘মনিকাঞ্চন’, ‘আলোড়ন’, ডি.এল রায়ের ‘সম্রাট শাহজাহান’, ‘সিরাজদৌল্লা’, ‘আরঙ্গজেব’ প্রভৃতি।৩
১৯৪৯ সালে কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম পুরোধা ওস্তাদ আবু বকর সিদ্দিকী জড়িত হলে সাংস্কৃতিক অঙ্গন আরো বিকশিত হয়। অতঃপর ১৯৫০ সালে নুনিয়াছড়ার আবুল কাসেমের প্রযোজনায় ‘সিরাজদৌল্লাহ’ নাটকটি মঞ্চায়িত হয়। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে যারা দর্শকদের দৃষ্টি কাড়েন তাদের মধ্যে রয়েছে- ছালামত উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন, আলতাজুর রহমান, মোহাম্মদ আজিজ, মুহম্মদ নাসির উদ্দীন, লিয়াকত আলী, বদিউল আলম প্রমুখ।
মহকুমা প্রশাসক এ.কে.এম জাকারিয়া একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কক্সবাজারের মহকুমা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন আমেজ ফিরে পায়। ঘন ঘন নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদিতে মুখরিত হয়ে উঠে পাবলিক লাইব্রেরির মিলনায়তন। এই সময় মঞ্চস্থ হয় ‘টিপু সুলতান’, ‘সিরাজের স্বপ্ন’, ‘মীর কাসেম’, ‘জাহাঙ্গীর’, ‘বিশ বছর আগে’ প্রভৃতি নাটক। মহকুমা প্রশাসক একেএম জাকারিয়ার আমন্ত্রণে কক্সবাজার সফরে এসেছিলেন পল্লী কবি জসিম উদ্দীন ও প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী সোহরাব হোসেন। তাদের সম্মানে লাইব্রেরিতে আয়োজন করা হয় সম্বর্ধনা সভার। সেই সভায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন রামু খিজারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঙ্গীতজ্ঞ জগনানন্দ বড়ুয়া।’৪
এ সকল মঞ্চায়নের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন জ্যোতিশ^র চক্রবর্তী, নজিবুর রহমান, অমরেন্দ্রনাথ মজুমদার, নিরোধ বরণ চক্রবর্তী, বজল আহমদ, মকবুল আহমদ, আবদুল হাকিম, প্রবোধ কুমার রক্ষিত, মৌলভী ফরিদ আহমদ, ওবাইদুল হাকিম, ওস্তাদ স আ ম আবু বকর সিদ্দিকী, মনতোষ চৌধুরী, সুরেশ সেন প্রমুখ। ১৯৫৬ সালের ২৬ মার্চে কক্সবাজার ইনষ্টিটিউট কাম পাবলিক লাইব্রেরীর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘সঙ্গীত সমিতি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এ কে.এম জাকারিয়া এবং এস.ডি.এম সি.ও এন রহমান প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক ছিলেন। ৫
১৯৫৬ সালে একে এম জাকারিয়ার ব্যক্তিগত পৃষ্টপোষকতায় পাবলিক লাইব্রেরীর ‘জর্জ ও মেরী’ হলে ‘টিপু সুলতান’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অংশগ্রহণ করেন- বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, এডভোকেট সুরেশ চন্দ্র সেন, দেব প্রসাদ ভট্টাচার্য, ওবাইদুল হক, বজল আহমদ, নিরোদ বরণ চক্রবর্তী, মকবুল আহমেদ, আব্দুল হাকিম, প্রবোধ কুমার রক্ষিত, মনতোষ কুমার চৌধুরী, মৌলভী ফরিদ আহমদ, এডভোকেট মোহাম্মদ আলী, মোজাম্মেল হক চৌধুরী, আব্দুর রহিম চৌধুরী, সাইমুম শমশের, অমরেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রবোধ কুমার রক্ষিত, দুলাল পাল প্রমুখ।
এ সময়ে ‘লাইলি মজনু’, ‘টিপু সুলতান’, ‘সিরাজদ্দৌলা’, ‘ঝিলিমিলি’ (স্কুল), ‘মার্চেন্ট-অব- ভেনিস’, ‘মীর কাসেম’, ‘জাহাঙ্গীর’, ‘সাহজাহান’, ‘বিশ বছর আগে’, ‘মহুয়া’, ‘শিরি-ফরহাদ’, ‘উদয়নালা’, ‘সিরাজের স্বপ্ন’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়। আর এসব নাটকে পরিচালনায় ও নাট্য অভিনয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন- ওবাইদুল হাকিম, কবীর আহমদ, মফিজ, শাহজাহান মনির, নুর আহমদ, পেটান আলী, সেলিম রাহগীর, মোহাম্মদ আলী, নেজামুল হক, সিরাজুল মোস্তফা, আবুল কালাম আজাদ, শওকত, কাসেম, কালু, বদিউল আলম, মকবুল আহমদ, আব্দুল হাকিম, গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।
তখনও নাট্যাভিনয়ে মেয়েরা এগিয়ে না আসায় স্ত্রী চরিত্রে ওবাইদুল হক, নুরুল হুদা চৌধুরী, দুলাল পাল, প্রবোধ কুমার রক্ষিত, অমূল্য চক্রবর্তী, আতিকুল্লাহ প্রমুখ অভিনেতারা অভিনয় করে দর্শক মাতিয়ে রাখতেন।
এ দশকে পৌর এলাকা টেকপাড়ায় নাট্যানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ধুম পড়ে যায়। ‘লায়লী-মজনু’, ‘টিপু সুলতান’, ‘সিরাজদৌল্লা’, ‘মহুয়া’, ‘মহারাজ নন্দকুমার’, ‘সিন্ধু বিজয়’, ‘সোহরাব-রুস্তম’, ‘উল্কা’, কবি জসিম উদ্দীন রচিত ‘গ্রামের দাঙ্গা’, ‘পলাতক নই’, ‘জীবন সংগ্রাম’, ‘আড্ডা’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চস্থ হয়। আর এসব নাটকে অভিনয় করেন- দেবপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ওবাইদুল হাকিম, সুরেশ চন্দ্র সেন, জ্ঞানেন্দ্র লাল চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), ডাঃ কবীর আহমদ, মো. হাসান, জয়নাল আবেদিন, হরি চৌধুরী, মকবুল নাজির, নিরোধ চক্রবর্তী, গোপাল ভট্টাচার্য, শিশির নন্দী, প্রফুল্ল রক্ষিত, ফিরোজ আহমদ চৌধুরী, অহিদুল আলম, শামশুল হুদা, কবি সেলিম রাহগীর, ডাঃ কবীর আহমদ, মফিজ, শাহজাহান মনির, অধ্যাপক নুর আহমদ, পেটান আলী, সেলিম রাহগীর, মোহাম্মদ আলী, নেজামুল হক, সিরাজুল মোস্তফা, আবুল কালাম আজাদ, শওকত, কাসেম, কালু, বদিউল আলম, মকবুল আহমদ, আব্দুল হাকিম, গোলাম কিবরিয়া, জাফর আলম, মোহাম্মদ আলী, আব্বাছ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। এসব নাটক পরিচালনা ও প্রযোজনায় যাদের হাত বেশী তাদের মধ্যে এডভোকেট মমতাজুল হক, বঙ্গিম রক্ষিত, বোধেন্দু বিকাশ ভট্টচার্য্য (শহীদ বুদ্ধিজীবী), এডভোকেট এখলাছুর কবীর অন্যতম।
১৯৫৮ সালে এম জে আর খান কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসক হয়ে আসেন। তিনিও একজন সঙ্গীত প্রিয় মানুষ ছিলেন। তাঁর সার্বিক প্রচেষ্টায় কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর উদ্যোগে আয়োজন করা হয় রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী। তাঁর আমন্ত্রনে অতিথি শিল্পী হিসেবে অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিটিভির প্রথম কন্ঠশিল্পী ফেরদৌসি রহমান ও মোস্তফা জামান আব্বাসী।
১৯৫৮ সালে আবুল কালাম আজাদ ও দুলাল পাল’র পরিচালনায় মঞ্চায়িত হয় ‘আড্ডা’, ‘কুঁয়াশা’ প্রভৃতি নাটক। এসব নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- কবীর আহমদ, আবুল কালাম, খুরশেদ আলম (এডভোকেট), গোলাম নবী, অমূল্য চক্রবর্তী, নেজাম, বক্তিয়ার আহমদ, সিরাজুল মোস্তফা, বকর, ফখরুদ্দিন, লালু, গোলাম হাসান প্রমুখ।৬
১৯৬০ সালের প্রথম দিকে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর ‘জর্জ এন্ড মেরী’ (শহীদ সুভাষ হল) হলে দু’দিনব্যাপী ‘বন্ধুর চরিত্র’ নাটকটি কক্সবাজার হাই স্কুলের উদ্যোগে মঞ্চায়িত হয়। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নুর আহমদ, সেলিম রাহগীর, সুভাষ দাশ (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), লিয়াকত আলী, শামসুল আলম, বদিউর রহমান প্রমুখ। ষাটের দশকে পুরাতনদের সঙ্গে আরো অনেক নতুন মঞ্চাভিনেতা এসে যোগ দেন। এদের মধ্যে নুরুল হুদা চৌধুরী, অনিল বরণ চৌধুরী, এ.বি ধর, আবুল মনজুর, মোশতাক আহমদ, নেপাল ভট্টাচার্য, ইব্রাহিম খলিল, অজিত দে এবং নুরুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ। এই সময়ে ঐতিহাসিক নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি সামাজিক নাটক ও মঞ্চায়িত হয়েছিল। এ সময় নাট্যাভিনয় ও নির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন দুলাল পাল। তার পরিচালনায় ‘নাটক নয় ফাঁস’, ‘ক্ষুধা, ‘পথের শেষে’, ‘বাদশা’, ‘বিশ বছর আগে’, ‘এরাও মানুষ’, ‘মানময়ী গালর্স স্কুল’ প্রভৃতি নাটক সাফল্যজনকভাবে মঞ্চায়িত হয়। এ সময়ে মঞ্চায়িত অন্যান্য নাটকের মধ্যে ‘কেরানীর জীবন’, ‘কালো অধ্যায়’, ‘রক্তাক্ত গোলাপ’, ‘মাটির মায়া’,‘নিস্কৃতি’, ‘বারো ঘণ্টা’, ‘টিপু সুলতান’, ‘সম্রাট শাহাজাহান’, ‘উদয়নালা’, ‘মহারাজ প্রতাপাদিত্য’, ‘পলাশীর পরে’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
১৯৬৩-১৯৬৪ সালে সেলিম রাহগীর, ডাঃ কবীর আহমদ ও শামশুল হুদার পৃষ্টপোষকতায় মঞ্চায়িত হয় ‘বাগদত্তা’, ‘দেবী সুলতানা’, ‘বাঁশের বাশী’, ‘এক মুঠি অন্ন চাই’, ‘রুপবান’ প্রভৃতি নাটক। আর এ সব নাটকে অভিনয় করেন- নেপাল ভট্টাচার্য, ডাঃ কবীর আহমদ, সেলিম রাহগীর, নুর আহমেদ, নুর মোহাম্মদ, সুলতান আহমদ প্রমূখ।
১৯৬৩ সালে ‘টেকপাড়া ছাত্র সংঘ’ এর ব্যানারে নুরুল মোমেনের ‘যদি এমন হতো’ নাটক মঞ্চায়িত হয়। আবদুল্লাহ পেশকারের পৃষ্টপোষকতায় এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন কলিমুল্লাহ, বদরু, কামাল উদ্দিন, মোসলেম উদ্দিন মাস্টার।
ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে পেশাদার মঞ্চাভিনেত্রিদের এনে নারী চরিত্রে অভিনয়ের সূচনা করা হয়। যথাযথ সম্মানীর বিনিময়ে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশেষত পূর্ণিমা সেন (চট্টগ্রাম), আলো পাল (চট্টগ্রাম), কুমিল্লা থেকে গীতাশ্রী, জয়শ্রী, চিত্রনায়িকা চন্দনা, শাবানা, জহুরী, তন্দ্রা ভট্টাচার্য, কবরী ও বাণী সরকারসহ আরো কয়েকজন শিল্পী কক্সবাজারের বহু নাটকে অভিনয় করে সুনাম কুড়িয়ে গেছেন ।
১৯৬৭ সালে কক্সবাজার শহরে টেকপাড়ায় পৃথক নাট্যচর্চা শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘টেকপাড়া যুব সংঘ’ (ইংরেজিতে টেকপাড়া বয়েজ ক্লাব) সংগঠন থেকে নিয়মিত নাট্যচর্চা করা হত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতি বছর দুই ঈদে টেকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মঞ্চ তৈরি করে নাটক মঞ্চায়ন করা হতো। প্রস্তুতি চলতো নাটক মঞ্চায়নের দু’মাস আগে থেকেই। আবদুল হাকিম প্রকাশ অধদার নির্দেশনায় এ সংঘের প্রযোজনায় ‘গাঁয়ের ছেলে’, শাহাজান’, ‘পানিপথ’, ‘ইরান দুহিতা’, ‘আনার কলি’, ‘ঈশা খাঁন’, ‘গায়ের ছবি’, ‘বোবা কান্না’, ‘পরিণতি’, ‘হারানো মানিক’, ‘জীবন সংগ্রাম’, ‘আড্ডা’, ‘ভারাটে চাই’, ‘মুক্তাহার’, ‘সিরাজউদ্দৌলা’, ‘নাজেহাল’, ‘দস্যু আকরাম’ প্রভৃতি নাটক সফলভাবে মঞ্চায়িত হয়েছিল।
টেকপাড়ায় মঞ্চায়িত নাটকে পৃষ্টপোষকতা, সংগীত পরিচালনাসহ নানান বিষয়ে কুশলী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন আবদুল হাকিম, আবুল পেশকার, আদমজী জুট মিলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সিদ্দিক, গোলাম নবী, সিরাজুল মোস্তফা, আবুল কালাম আজাদ, নেজামুল হক, গোলাম কিবরিয়া, ওসমান গণি, খোরশেদ আলম, কবীর আহমদ, জাফর আলম, সেলিম রাহগীর, মোস্তাফিজুর রহমান লালু, কামাল উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আলম, মাস্টার তৈয়ব, মোহাম্মদ মুজিব, বখতিয়ার, আবদুল্লাহ পেশকার, মীর্জা মনোয়ার হাসান, আহসানুল করিম, মনজুরুল হাসান, আবদুর রশিদ কমিশনার, ছুরত আলম, মুশতাক আহমদ, গোলাম মোস্তফা, আবদুল হাকিম ওরফে কালা মিয়া, দলিলুর রহমান, শামসুল আলম মিন্টু, গোলাম হাসান প্রমূখ।
ষাটের দশকে নারীদের নাটকে অভিনয়ের পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় অনেক পুরুষেরা নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। মোহাম্মদ আলম, মাস্টার তৈয়ব, আহসানুল করিম, ছাত্রলীগ নেতা ছুরত আলম নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। ৭ একালের জনপ্রিয় ‘মা’ চরিত্রে সফল চলচ্চিত্র অভিনেত্রী খালেদা আকতার কল্পনা ১৯৭৬ সালে আবদুল হাকিমের নির্দেশনায় ‘ বোবা কান্না’ নাটকে টেকপাড়ার মঞ্চে অভিনয় করে তাঁর নাট্য ও অভিনয় জীবন শুরু করেন। এ সময় কল্পনার বাবা সরকারি কর্মচারি হিসেবে কক্সবাজারে বসবাস করতেন।
কক্সবাজার শহরকেন্দ্রীক নাট্যচর্চার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও নাট্যচর্চা হয়। উখিয়া উপজেলার প্রথম মঞ্চায়িত নাটক ‘পানি পথের যুদ্ধ’ । ১৯৬৭ সালে উখিয়া হাই স্কুল প্রাঙ্গনে মঞ্চায়িত এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- ফয়েজ বাঙালী, সিরাজুল হক সিকদার, এয়াকুব আলী মাস্টার, নজু মিয়া কন্ট্রাক্টর, ফতেহ আলী মুন্সী, কবির মিয়া, খাইরুল বশর চৌধুরী, বশির উল্লাহ, জাকের হোছেন মুন্সী প্রমুখ। ১৯৬৭-১৯৭০ সময়ে মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘শিরি-ফরহাদ’, টিপু সুলতান, ‘শহীদে কারবালা’, রুপবান, মলকা বানু (সুচরিত চৌধুরী রচিত), ‘লায়লী মজনু’, ‘অপারেশন’ প্রভৃতি।৮
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত যারা নাট্য সংগঠক, নাট্যাভিনয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তাদের মধ্যে জ্যোতিশ^র চক্রবর্তী, নজিবুর রহমান, অমরেন্দ্রনাথ মজুমদার, নিরোধ বরণ চক্রবর্তী, মনমোহন সেন, বজল আহমদ, মকবুল আহমদ, আবদুল হাকিম, প্রবোধ কুমার রক্ষিত, ওবাইদুল হাকিম, ওস্তাদ স আ ম আবু বকর সিদ্দিকী, মনতোষ চৌধুরী, সুরেশ সেন, দেবপ্রসাদ ভট্টাচার্য, নলিনী দত্ত, মৌলভী ফরিদ আহমদ, অমরেন্দ্র নাথ মজুমদার, আবদুর রহিম চৌধুরী, এডভোকেট মনীন্দ্র লাল চৌধুরী, মোজাম্মেল হক চৌধুরী, বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, মনতোষ কুমার চৌধুরী, সাইমুম শমশের, দুলাল পাল, জ্ঞানেন্দ্র লাল চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), হরি চৌধুরী, মকবুল নাজির, নিরোধ চক্রবর্তী, গোপাল ভট্টাচার্য, শিশির নন্দী, প্রফুল্ল রক্ষিত, ফিরোজ আহমদ চৌধুরী, অহিদুল আলম, শামশুল হুদা, ছালামত উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন, আলতাজুর রহমান, মোহাম্মদ আজিজ, মুহম্মদ নাসির উদ্দীন, লিয়াকত আলী, বদিউল আলম, সলিমুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ, আবুল মঞ্জুর (বর্তমান কানাডা প্রবাসী), ইউ সুয়ে জান, সেলিম রাহগীর, ছালামত উল্লাহ (বর্তমান সিনিয়র আইনজীবী), জয়নাল আবেদীন, কবীর আহমদ, মফিজ, শাহজাহান মনির, নুর আহমদ, পেটান আলী, সেলিম রাহগীর, মোহাম্মদ আলী, নেজামুল হক, সিরাজুল মোস্তফা, আবুল কালাম আজাদ, শওকত, কাসেম, কালু, বদিউল আলম, মকবুল আহমদ, আব্দুল হাকিম, গোলাম কিবরিয়া, নুরুল হুদা চৌধুরী, দুলাল পাল, অমূল্য চক্রবর্তী, ওবাইদুল হাকিম, ডাঃ কবীর আহমদ, মো. হাসান, শাহজাহান মনির, অধ্যাপক নুর আহমদ, পেটান আলী, সেলিম রাহগীর, মোহাম্মদ আলী, নেজামুল হক, সিরাজুল মোস্তফা, আবুল কালাম আজাদ, শওকত, কাসেম, কালু, বদিউল আলম মাস্টার, মকবুল আহমদ, আব্দুল হাকিম, গোলাম কিবরিয়া, জাফর আলম, ধর্মদর্শী বড়ুয়া, আব্বাছ উদ্দিন চৌধুরী, আবুল কালাম, খুরশেদ আলম (এডভোকেট), গোলাম নবী, অমূল্য চক্রবর্তী, বক্তিয়ার আহমদ, সিরাজুল মোস্তফা, বকর, ফখরুদ্দিন, লালু, গোলাম হাসান, নুর আহমদ, সুভাষ দাশ (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), লিয়াকত আলী, শামসুল আলম, বদিউর রহমান, অনিল বরণ চৌধুরী, এ.বি ধর, আবুল মনজুর, মোশতাক আহমদ, নেপাল ভট্টাচার্য, ইব্রাহিম খলিল, অজিত দে এবং নুরুল ইসলাম বাচ্চ,ু নুরুল আজিজ চৌধুরী, ফয়েজুল আজিম জেকব (চবি চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক), বদর উদ্দিন, সিরাজুল মোস্তফা, রাখাল মিত্র, একেএম নুর আহমদ, কলিমুল্লাহ, বদরুদ্দিন, কামাল উদ্দিন মাস্টার, মোসলেম উদ্দিন মাস্টার। আবদুল হাকিম, আবুল পেশকার, আদমজী জুট মিলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সিদ্দিক, গোলাম নবী, সিরাজুল মোস্তফা, আবুল কালাম আজাদ, নেজামুল হক, গোলাম কিবরিয়া, জালাল আহমদ, আবদুল আজিজ, আবদুর রশিদ, নেপাল ভট্টাচার্য্য, সুশীল ব্রহ্মচারী, বিপুল সেন, জামাল হোসেন মনু, আলী আহমদ, কালিপদ দাশ, দুলাল, হারাধন দে, শামশুল আলম, হায়দার আলী, আবদুল মালেক, শামসুল আলম, নুরু চৌকিদার, ডা. আনছার আলী, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, জাফর আলম ওসমান গণি, খোরশেদ আলম, মোস্তাফিজুর রহমান লালু, কামাল উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আলম, মাস্টার তৈয়ব, মোহাম্মদ মুজিব, বখতিয়ার, আবদুল্লাহ পেশকার, মীর্জা মনোয়ার হাসান, অধ্যাপক আহসানুল করিম, মনজুরুল হাসান, আবদুর রশিদ কমিশনার, ছুরত আলম, মুশতাক আহমদ, গোলাম মোস্তফা, আবদুল হাকিম ওরফে কালা মিয়া, দলিলুর রহমান, শামসুল আলম মিন্টু, গোলাম হাসান রঞ্জন পাল, আবদুল মতিন আজাদ, স্বপ্না ভট্টাচার্য, মাহবুবুর রহমান, রাখাল মিত্র, খোকা, মাফরোহা সুলতানা মেরী, মাহরুফা সুলতানা বেলী প্রমুখ।
স্বাধীনতা পরবর্তী নাট্য আন্দোলন বা নাট্য চর্চা
বাংলাদেশের মঞ্চনাটক মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সুকীর্তি। যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যে এক বিরাট পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। আর এই পরিবর্তনে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত নিয়ে হাজির হয় মঞ্চনাটক। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের মঞ্চনাটক নতুন এক ধারাবাহিকতার জন্ম দেয়। স্বাধীনতার পূর্বে এই অঞ্চলের নাটক শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের নাটক হয়ে গেল রাজনীতি, সমাজ-চিন্তা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে। নাটক হয়ে উঠল প্রতিবাদের ভাষা। নাট্যকর্মীরা নাটককে গ্রহণ করলেন সমাজ-বদলের হাতিয়ার হিসেবে। সমাজ সম্পর্কিত বিষয়কে প্রতিপাদ্য করে রচিত হতে লাগল নাটক। আর্বিভূত হলেন নতুন নতুন নাট্যকার। আগেকার নাটকের সাথে এই নতুন ধরনের নাটকের পার্থক্য হলো বিষয়বস্তুতে। বিষয়বস্তুর কারণেই নাটকে উপস্থিত হতে লাগল সমাজ পরিবর্তনের কথা। স্বাধীনতা লাভের পর বেশিরভাগ নাটক রচিত হয় সমকালীন সমাজ নিয়ে। সমাজের মূল্যবোধ-অবক্ষয়, মানুষের হতাশা-বঞ্চনাকে উপজীব্য করে নাটক লিখতে লাগলেন নাট্যকাররা। অবশ্য কিছু সময় শ্রেণি সংগ্রাম ও সমাজতন্ত্রের রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতি, ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরূদ্ধে রাজনীতির স্লোগান তোলে নাট্যকর্মীরা। এই সময় নাট্যকর্মী ও নাট্যদলগুলো নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে একটি সুুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিভিন্ন নাট্যদল বিভিন্নভাবে ব্যক্ত করে। সকলের চিন্তা কোনো একটি বিশেষ লক্ষ্যে ধাবিত হয় নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে চিন্তাগুলো বিভ্রান্তকরও ছিল। তা সত্বেও মঞ্চায়িত নাটকগুলোর মধ্যদিয়ে নানারকম প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশের মঞ্চনাটক তাই নতুন সব প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে।
গত শতকের আশির দশক থেকে বাংলাদেশের নাট্য-আন্দোলন ভীষণভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়তে থাকে। সমকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনায় নাট্যদলগুলো যেমন তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, তেমনি সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি স্বোচ্চার হয়ে ওঠে। নাটককে রাজনীতির পক্ষে ব্যবহার করার স্লোগান এবং সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে নাট্যকর্মীদের তৎপর হয়ে ওঠা এই সময়ের নাট্যচর্চাকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। এই সময়কার নাট্যচর্চার বিশেষ লক্ষণ হলো এই, নাট্যদলগুলো অনুধাবন করল রাজনীতির সাথে নাটকের কোনো বিরোধ নেই। ফলে কিছু কিছু নাট্যদল সরাসরি ঘোষণা দিল, নাটককে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। অবশ্য নাট্যদলগুলো এই ঘোষণা কতটা সমাজবিজ্ঞান মনস্ক হয়ে বলেছিল সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে নাটককে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করা নাট্যকর্মীর একটি মূল দায়িত্ব, সেটাই তারা সেদিন উপলব্ধি করতে পেরেছিল।
স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশের নাট্য প্রচেষ্টা বা নাট্য আন্দোলন কখনো স্থির থাকে নি। আর স্থির থাকে নি বলেই বারবার তার ধারা পাল্টেছে এবং নাট্যদলগুলোর বক্তব্যও পাল্টেছে সমানভাবে। কেমন যেন অস্থিরভাবে দিগবিদিক ছোটাছুটি করেছে বাংলাদেশের নাট্যচর্চা। বহু ধরনের স্লোগান তুললেও প্রকৃত অর্থে নাট্য আন্দোলন কোথাও এসে দাঁড়াতে পারে নি। নানা স্লোগানের আড়ালে নাট্যদলগুলো মূলত নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে নানাভাবে দর্শকদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করেছে মাত্র।
স্বাধীনতা উত্তরকালে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক অঙ্গন তরুণদের উদ্যম প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত হয়ে উঠে। পাবলিক লাইব্রেরি হয়ে উঠে প্রাণবন্ত। আর এ সময়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নাট্যচর্চার ঢেউ কক্সবাজারের নাট্যাঙ্গনকে আলোড়িত করে। এ সময় নাটক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তথা নাটকের নান্দনিক চিন্তা চেতনা তরুণ মানসে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। বিশেষ করে গণনাট্য আন্দোলন এবং গ্রুপ থিয়েটার চেতনায় যুব সমাজ সংগঠিত হয়ে উঠে। তখন থেকেই পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে দর্শনীয় বিনিময়ে নাট্য চর্চা শুরু হয় এবং ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও নাট্য চর্চায় এগিয়ে আসে।
১৯৭২ সালের শুরুতে প্রতিষ্ঠিত হয় পিনাক শিল্পী গোষ্ঠী। পিনাক শিল্পী গোষ্ঠী প্রযোজিত নাটকের মধ্যে আবদুল্লাহ আলম মামুন রচিত ‘সু-বচন নির্বাসনে’, ‘এখন দুঃসময়’, ‘চোরাগলি মন’, কল্যাণ মিত্রের ‘শুভ বিবাহ’, ‘সূর্য মহল’, ‘বারো ঘণ্টা’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়ন সূধী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়।
অতীত এবং বর্তমান দর্শকের চিন্তা-চেতনাকে ধারণ করে ১৯৭২ প্রতিষ্ঠিত হয় নবারুণ নাট্য সংস্থা। এ সংগঠনের উদ্যোগে মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘প্রদীপ শিখা’, ‘সূর্য মহল’ কল্যাণ মিত্রের ‘শুভ বিবাহ’ এবং ‘সাগর সেঁচা মানিক’ প্রভৃতি। তবে অবশ্য এর পূর্বে ১৯৭০ সালে মোস্তাফা মিয়ার তত্ত্বাবধানে সম্পাদন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে ‘নব আর্য অপেরা’ নামে যাত্রাদল গঠন হয়েছিল। এ যাত্রাদল ১৯৮০ পর্যন্ত কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ‘টিপু সুলতান’ , ‘সম্রাট আকবর’, ‘আলোমতি প্রেম কুমার’, ‘রহিম বাদশা রূপবান কন্যা’, ‘গরীব কেন মরে’, ‘লায়লী মজ্নু’, ‘সিদুঁর দিয়ো-না মুছে’, ‘কে দেবে কবর’ প্রভৃতি যাত্রাপালা প্রদর্শন করা হয়েছিল। এ যাত্রাপালায় নাট্যাভিনয় করেন ইন্দ্রসেন, জালাল আহমদ, আবদুল আজিজ, আবদুর রশিদ, নেপাল ভট্টাচার্য্য, সুশীল ব্রহ্মচারী, বিপুল সেন, জামাল হোসেন মনু, আলী আহমদ, কালিপদ দাশ, দুলাল, হারাধন দে, জামাল হোসেন মনু, শামশুল আলম, হায়দার আলী, আবদুল মালেক, শামসুল আলম, নুরু চৌকিদার, ডা. আনছার আলী, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, জাফর আলম প্রমূখ।৯
১৯৭৬ সালে অধ্যাপক মুফীদুল আলম রচিত প্রযোজিত ও পরিচালিত মৌলিক নাটক ‘কবন্ধ’ ও ‘লাবণী পয়েন্ট’ পাবলিক লাইব্রেরির হলে মঞ্চায়িত হয় এবং হিন্দি সাহিত্যের দিকপাল কৃষণ চন্দ্রের গল্প অবলম্বনে রচিত ‘পাষাণ’ নাটকটি বর্তমান জেলে পার্কে প্রদর্শনী মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়। ‘কবন্ধ’ ও ‘লাবণী পয়েন্ট’ নাটকে সর্ব প্রথম কক্সবাজারস্থ মহিলা শিল্পী কক্সবাজার সরকারি কলেজের ছাত্রী খালেদা বিলকিস (শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত ও আব্দুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘সারেং বউ’ ছায়াছবিতে অভিনয় করেন।) ‘পাষাণ’ নাটকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন কক্সবাজার কলেজের ছাত্রী আখতার।১০
১৯৭৭ সালে ব্যাংকার খোরশেদ আলম ও অধ্যাাপক সিরাজুল মোস্তফার উদ্যোগে শুদ্ধতম নাটকের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘রং বেরং নাট্য গোষ্ঠী’। টেকপাড়া স্কুলে ঐতিহাসিক নাটক ‘মীর কাশেম’ মঞ্চায়নের মধ্যায়নের এ নাট্যগোষ্ঠীর যাত্রা শুরু হয়। টেকপাড়া স্কুলে নাট্যগোষ্টীর পরিবেশিত অন্য নাটকের মধ্যে ‘রাস্তার ছেলে’ বেশ সুনাম অর্জন করে। পাবলিক লাইব্রেরি হলে কল্যাণ মিত্রের ‘নকল মানুষ’ মঞ্চায়নের মধ্যে দিয়ে টেকপাড়া ছেড়ে সাংস্কৃতিক চর্চার মূল জায়গায় চলে আসে এ নাট্যগোষ্ঠী। এই সংস্থার নিবেদিত নাটকের মধ্যে ‘নকল মানুষ, ‘অগ্রাহ্য’, ‘দন্ডোৎসব’, ‘হুজুর কখন মরবে’, ‘কাফন’, ‘এক যে ছিল দুই হুজুর’, খোরশেদ আলমের রচনায় ও নির্দেশনায় ‘পৃথিবীর ঘরে ঘরে’, আবদুল্লাহ আল মামুন রচিত ‘সুবচন নির্বাসনে’, ‘অরক্ষিত মতিঝিল’, ‘তৈল সংকট’ প্রভৃতি নাটক দর্শকের ভিন্ন ধরনের স্বাদ প্রদানে সমর্থ হয়। আর এ সব নাটকে অভিনয় করেন- মো. খোরশেদ আলম, সিরাজুল মোস্তফা, মোহাম্মদ আকতার শাহনেওয়াজ শাহীন, আবুল কালাম, সানাউল্লাহ, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, মুজিব (নাজমা ফার্মেসির মালিক), শাহ আলম শানু, আনোয়ার, নজরুল আর্টের নজরুল, রাজা মিয়া, মোবারক, শাহানা, স্বপ্না ভট্টাচার্য, এম.এস.মার্শাল, রতন দাশ, বিশ্বজিত সেন, বাবুল পাল, মোঃ ফারুক, মফিজুল হক, জসিম উদ্দিন বকুল, মুজিবুর রহমান, নজরুল ইসলাম বকসী প্রমুখ। এ নাট্যগোষ্ঠীর উদ্যোক্তা ব্যাংকার খোরশেদ আলম বেশ কয়েকটি নাটক লিখেন এবং সেগুলো মঞ্চায়নও করেন। তার লিখিত ‘আলীমুদ্দীনের দুঃস্বপ্ন, ‘পৃথিবীর ঘরে ঘরে’, ‘মানবো না এ বন্ধনে’, ‘বোমা’ ও ‘আদম সুরত’। ‘মানবো না এ বন্ধনে’ নাটকের সংগীত পরিচালনা করেন রায়হান উদ্দিন।
রংবেরং নাট্যগোষ্ঠীর আমন্ত্রণে ১৯৭৮ সনে কলকাতার স্বনামধন্য লহরী শিল্পীগোষ্ঠী কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি হলে রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি ” নাটক মঞ্চস্থ করে। রংবেরং নাট্যগোষ্ঠী পরিবেশিত এ সব নাটকের আবহ সংগীত পরিচালক ছিলেন রায়হান উদ্দিন, দৌলনচাঁপা চৌধুরী এবং আলোকসজ্জায় ছিলেন জামাল হোসেন মনু।
খোরশেদ আলম রচিত ও নির্দেশিত ‘আদম সুরত’ নাটকটি কক্সবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যানারে বিটিভিতে প্রচারিত হয়।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ১৯৭৮ সালের প্রথম সম্মেলনেও কক্সবাজারের নাট্যগোষ্ঠীর পক্ষে রংবেরং নাট্যগোষ্ঠীর খোরশেদ আলম প্রধিনিধিত্ব করেন।
১৯৭৮ সনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘এক পা সামনে নাট্যগোষ্ঠী’, ‘নাট্যসংস্থা অর্ণব’। এ সংগঠনসমূহের মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘এবার ধরা দাও’, ‘সেনাপতি’, দিলারা জামান নির্দেশিত ‘সামনে যাই থাক ট্রেন চলবে’, ‘ফলাফল নিম্নচাপ’, ‘আয়নায় বন্ধুর মূখ’, ‘একাত্তরের তেলেসমাতি’, ‘জননীর মৃত্যু চাই’, ‘আয়না’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত করে দর্শকদের দৃষ্টি কাড়ে। এ সময় প্রতিষ্ঠিত ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠী, গ্যাংচিল, সমকাল নাট্য ও সাহিত্য সম্প্রদায়, সপ্তরুপা, পূর্বাচল প্রভৃতি সংস্থা নাট্য প্রযোজনায় সার্থক অবদান রেখেছিলেন।১০
১৯৭১-১৯৭৯ পর্যন্ত সময়ে উখিয়ায় মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে- ‘১৯৭১’, বেদের মেয়ে জোছনা, ‘ফেরারী সম্রাট’, ‘বিজয় নিশান’, ‘সাগর সেঁচা মানিক’, ‘স্মৃতি ৭১’ প্রভৃতি। আর এসব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ইয়াকুব আলী মাস্টার, সাধন মোহন দে, সিরাজুল হক বি এ, সুলতান আহমেদ (সিনিয়র আইনজীবী ও কবি), রফিক উদ্দিন বাবুল (সাংবাদিক), মাস্টার শামসুল আলম, মাস্টার শাহ আলম, পরিমল বড়ুয়া, আবদুল মালেক আজাদ, বাদশা মিয়া চৌধুরী, দিদারুল আলম চৌধুরী, হাজী নুরূল হক, আবু বকর ছিদ্দিক, আবদুল মোনাফ প্রমুখ।
১৯৮০ সালে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ সুভাষ হলে মঞ্চায়িত হয় আজম ওবায়দুল্লাহ রচিত ‘মিছিল আসছে’। এ নাটকে অভিনয় করেন মোহাম্মদ সিরাজুল হক, নেজাম উদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন বাহারী, আবুল কালাম এডভোকেট, মোহাম্মদ নাযিম উদ্দিন, এডভোকেট মোস্তফা কামাল চৌধুরী, তোফাইল উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, আকবর উদ্দিন প্রমূখ।
১৯৭১-১৯৮০ সাল যারা সরবকর্মী ও পৃষ্ঠপোষকতায় এবং নাট্যাভিনয়ে যারা অবদান রাখেন অধ্যাপক মুফীদুল আলম, সোমেশ্বর চক্রবর্তী, অধ্যাপক মনজুরুল হক হেলাল, অধ্যাপক একে এম নুরুল হক চৌধুরী, সমশের বেলাল, এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তাফা, মো. খোরশেদ আলম, দুলাল পাল, আবদুল হাকিম, পীযূষ চৌধুরী, নুরুল আবছার, মোহাম্মদ শাহজাহান, মোহাম্মদ আকতার শাহনেওয়াজ শাহীন, আবুল কালাম, সানা উল্লাহ, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, মুজিব (টেকপাড়া), শাহ আলম শানু, আনোয়ার, নজরুল আর্টের নজরুল, রাজা মিয়া, মোবারক, শাহানা রেজা, স্বপ্না ভট্টাচার্য, অমিতা চৌধুরী, শাহানা রেজা, এস.এম মার্শাল, রতন দাশ, বিশ্বজিত সেন, বাবুল পাল, মোঃ ফারুক, মফিজুল হক, জসিম উদ্দিন বকুল, মুজিবুর রহমান, নজরুল ইসলাম বকসী, আতাহার ইকবাল, করিম উদ্দিন ইউসুফ, নুরুল মুকতাদির, ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, দিলীপ, প্রদীপ চৌধুরী, আশীষ ধর, রঞ্জন পাল, সন্ধ্যা ভট্টচার্য, জসিম উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, রায়হান উদ্দিন, ছানাউল্লাহ, আবদুল মতিন আজাদ, মোহাম্মদ সিরাজুল হক, আবুল কালাম এডভোকেট, মোহাম্মদ নাযিম উদ্দিন, এডভোকেট মোস্তফা কামাল চৌধুরী, তোফাইল উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, আকবর উদ্দিন, আবুল কালাম, জসিম উদ্দিন বকুল, প্রদীপ চক্রবর্তী, কানন দাস, বাবুল পাল, অমিতা চৌধুরী, দৌলনচাঁপা চৌধুরী, শীলা পাল, শিরিন জাহান, মনিকা বড়ুয়া, খালেদা বিলকিস বানু, রিকা বড়ুয়া, খালেদা আক্তার কল্পনা, মোহাম্মদ ফারুক, ইলা চৌধুরী, হোসেন আরা স্বপ্না, যমুনা পাল, উষা ভট্টাচার্য, শাহীদ চৌধুরী প্রমুখ।১২
১৯৮২ সনে পাবলিক লাইব্রেরি হল ময়দানে মঞ্চায়িত হয় ‘ওরা আছেই বলে’। এ নাটক মঞ্চাভিনয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এন এম হাবিব উল্লাহ, আবু হায়দার ওসমানী, অরুপ বড়ুয়া তপু, তৌহিদুল আলম, তাপস রক্ষিত, জসীম উদ্দিন বকুল, সন্তোষ শর্মা, মুহসিন উদ্দিন আনোয়ার, এ কে এম ফারুক আহমদ রকি, ইয়াছিন মোহাম্মদ শামশুল হুদা, আবুল কাশেম প্রমূখ।
শিক্ষা-সাহিত্য- সংস্কৃতি চর্চা উন্নত করার লক্ষে প্রতিষ্ঠিত হয় শিশু কিশোর সংগঠন সৈকত খেলাঘর আসর। এ আসর প্রতিষ্ঠায় যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাদের মধ্যে করিম উদ্দিন ইউসুফ, আশীষ ধর, দোলন চাঁপা চৌধুরী, তাপস রক্ষিত, অরুপ বড়ুয়া তপু, তৌহিদুল আলম, নীলা পাল, রনজিত দাশ, শিবানী ধর, সুবিমল পাল পান্না, ইসমাঈল মার্শাল প্রমূখ। সৈকত খেলাঘর আসরের উদ্যোগে মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘এরা শপথ, ‘বকুলপুরের স্বাধীনতা’, ‘বন্দি ছেলে’, ‘মন্টুর পাঠশালা’, ‘টোকাই, শোকার্ত শহীদ মিনার’, নৌকা বিলাস প্রভৃতি নাটক। এসব নাটক কিশোরদের সঙ্গে বড়দেরও প্রশাংসা কুড়াতে সক্ষম হয়।১৩
১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে বাম রাজনৈতিক ধারার গণসংস্কৃতি চর্চা ও প্রসারের উদ্দেশ্যে এইচএম রিয়াজ শহিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় হেমন্তিকা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। হেমন্তিকা সাংস্কৃৃতিক গোষ্ঠীর প্রথম সভাপতি ছিলেন চট্টগ্রামের প্রখ্যাত যাদু শিল্পী পার্থ সারথি চক্রবর্তী। রিয়াজ শহীদ ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাংষ্কৃতিক সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের পরিচালক থাকাকালে হেমন্তিাকার মাধ্যমে বিপ্লবী বার্তা নিয়ে গণসংষ্কৃতি প্রসারে সর্বত্রে সাংষ্কৃতিক আন্দোলকে এগিয়ে নেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও হেমন্তিকার ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে গান-নাটক-গণসংগীত দিয়ে কক্সবাজারের গণমানুষের মুক্তির প্রয়াসে ১৯৯১ সালের ২৩ নভেম্বও হেমন্তিকা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর কক্সবাজার শাখার খোলা হয় । এইচএম রিয়াজ শহীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শম্ভুনাথ চক্রবর্তী, সুজন কল্যান বড়ুয়া, অনিল দত্ত, লিনা বড়ুয়া, রিকা বড়ুয়া, হিমু, টুটুল পাল, সুভাশিষ বড়ুয়া পিকু, উত্তম নন্দী, জহির উদ্দিন, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, লিটন পাল, প্রদীপ পাল প্রমুখকে দিয়ে কক্সবাজারে হেমন্তিকা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর যাত্রা শুরু হয়।১৪
১৯৯৩/৯৪ সালের দিকে সাংস্কৃতিক সংগঠক তপন মল্লিককে সভাপতি ও সুনয়ন বড়ুয়াকে সম্পাদক করে হেমন্তিকা রামু শাখা গঠন করা হয়। হৈমন্তিকার প্রতিষ্ঠাতা রিয়াজ শহীদ ‘তুই তো শালা ঘাতক দালাল একাত্তরের রাজাকার ’ ওরা মানুষ মারে, বুঝেনারে মানুষের ক্ষতি, কী সৌন্দর্য্যা সৈকত নগরী কক্সবাজার’সহ ১০০টির গান রচনা করেন এবং সুরারোপ করেন। এ যাবৎ পর্যন্ত হেমন্তিকা নিজস্ব রচিত নাটক মঞ্চায়ন করেছেন। তার মধ্যে এইচ এম রিয়াজ শহীদ নির্দেশিত গীতি আলেখ্য ‘বকুলপুরের স্বাধীনতা, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন রচিত ‘মহারাণীর কাণ্ড’ (২০০৪), জসিম উদ্দীন রচিত ও নির্দেশিত ‘একাত্তরের শকুন’ (২০১১), ‘জাতিশত্রু, ‘দূরে আলো’, শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, কামরুল হাসান রচিত কাব্য নাটক ‘মুক্তিযুদ্ধ ফিরে ফিরে ডাকে’। আর এসব নাটক নিদের্শনা ও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন রিয়াজ শহীদ, অনিল দত্ত, লিনা বড়ুয়া, রিকা বড়ুয়া, হিমু, টুটুল পাল, সুভাশিষ বড়ুয়া পিকু, উত্তম নন্দী, জহির উদ্দিন, লিটন পাল, প্রদীপ পাল, তপন মল্লিক, তাপস মল্লিক, আবু বকর ছিদ্দিক খোকন, ফাতেমা আক্তার মার্টিন, লিটন দেবনাথ সৈকত, আবদুল নবী, মঞ্জু বড়ুয়া, শহিদুল ইসলাম সাহেদ, আবু সুফিয়ান এনাম, হারুন অর রশিদ, নারগিস আক্তার রনি, রিফাত হোসেন নির্যাস, রুনা আক্তার, কনা দাশ, লিটন কান্তি দে মিন্টু, তাকবিন আক্তার কলি, রবিউল হাসান, মরিয়ম আক্তার, মনির মোবারক, রবিউল হাসান, অজয় মজুমদার , আরিফুল করিম, উম্মে হাবিবা উর্মি, সিফাত খান শান্ত, শ্রাবণ বড়ুয়া শান্ত, শ্রাবণী দাশ শাওলি, শতাব্দী বড়ুয়া তৃষা, সিফার আরা আইয়ুব, রীমা বড়ুয়া, প্রিতম পাল প্রিতু, সুজয় পাল জিতু, নবরাজ পাল প্রিয়ন, নন্দিনী পাল প্রমুখ। চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের বিজয় মেলা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে হেমন্তিকা মেলা উদযাপনের সাথে জড়িত আছেন। সাংস্কৃতিক দল নিয়ে ভারতও সফর করে হেমন্তিকা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী।
টেকপাড়ার গুণী নাট্য প্রযোজক, লেখক মোহাম্মদুল হক আঞ্চলিক নাটক রচনা করে বিশেষ ভুমিকা রেখেছিলেন। তাঁর লেখা ‘পানওয়ালী’, ‘বার্মাইয়া সুন্দরী’ সহ বেশ কয়েকটি নাটক পাবলিক লাইব্রেররিতে সফল মঞ্চায়ন হয়। এতে বর্তমান রেহানা ইলেক্ট্রিকের সত্বাধীকারী জামাল হোসেন মনুসহ অনেকে অভিনয় করেন। তাছাড়া তিনি “সাম্পান ওয়ালা’ নাটকটিও মঞ্চায়ন করেন।
১৯৮৫ সালে কুতুবদিয়া সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘এবার ধরা দাও’, ‘সুবচন নির্বাসনে’, স্বয়ম্বরা প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়। এসব নাটক পরিচালনা ও নাট্য নির্দেশনায় ছিলেন কণ্ঠ শিল্পী শেখ মোরশেদ আহমেদ এবং পৃষ্টপোষকতায় ছিলেন তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর আলম সিকদার। যারা নাট্যভিনয় করেন তাদের মধ্যে শেখ মোরশেদ আহমদ, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, গোপা রানী, সুরেশ দে, সিরাজুল হক, নুর আল আলম, আবদুল মান্নান, তাওলাদ হোসেন প্রমুখ।১৫
আশির দশকের শুরুতে উখিয়ার নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস শুরু হয়। অন্যান্য সময়ের মত অন্যজনের নাটকের ওপর নির্ভর করতে হয়নি। নিজস্ব রচিত নাটক মঞ্চায়ন করে আসছে উখিয়ার নাট্যকর্মীরা। এ ধারার নাট্যচর্চা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে উপলক্ষ্য করে মাস্টার শাহ আলমের রচনায় ও নির্দেশনায় ‘কবরের বুকে হিজল তরু’ উখিয়া হাই স্কুলে মঞ্চায়িত হয়। এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ফয়েজ বাঙালী, রুহুল আমিন মেম্বার, জাহানারা বেগম, রেজিয়া বেগম, সন্তোষ বড়ুয়া, শীলানন্দ, দীপক মল্লিক, ফরিদুল আলম, জাহেদা বেগম, মোজাম্মেল হক আজাদ, কোহিনুর আকতার, আবু আহমদ প্রমুখ। এ ছাড়া মাস্টার শাহ আলমের লেখা নাটক আশির দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন দিবস এবং জাতির যে কোনে সংকট মুহুর্তে সময়ের তাল মিলে নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে এ রকম নাটকের মধ্যে -‘একটি তারা একটি গোলাপর’ (১৯৮৮), ‘শুকনো ক্ষতে রক্ত’ (২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯), ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের কঙ্কাল’ (২৬ মার্চ ১৯৯১), ‘অতঃপর ধানের শীষ’ (১৬ ডিসেম্বর ১৯৯২), ‘শয়তানের কামড় ’( ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২), আত্মসমর্পণ (১৫ জানুয়ারি ১৯৯৩), ‘একাত্তরের মলিন জ্যোতিস্ক’ (১৬ ডিসেম্বর ১৯৯৩) ‘ওদের ধরিয়ে দিন’ (১৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭), ‘মাথিনের প্রেম কাহিনী’ (২২ ডিসেম্বর ১৯৯৭), ‘সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ চাই’ (১৯৯৮), ‘আন্তর্জাতিকতায় সমৃদ্ধ একুশ’ (২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯) ‘রমজানের স্বপ্ন’ (১৯ জানুয়ারি ২০০৬), ‘আরকাইন্যা সুন্দরী’ (২৮ আগস্ট ২০০৮ ), ‘হাইস্যা বর হাতের লাঠি’ (৮ আগস্ট ২০০৯), ‘বিয়া হা গরালী’ (২০০৮), হাজেরার পিরিতি (২০০৭) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
মাস্টার শাহ আলমের রচনায় ও পরিচালনায় বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজারে প্রচারিত নাটিকার মধ্যে ‘অভিবাদন (২০১৪, ‘শোকাহত বাংলা’(২০১৪), কমিউনিটি ক্লিনিক (২০১৪), ‘আলোয় অবগাহন’ (২০১১), ‘বিচার চাই’ (২০১২), ‘তইলে বাজি আঁই নাই ’(২০১৪)। এসব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- নুরুল আলম সরকার, বশির আহমদ, ফিরোজ বাঙাল, মোজাম্মেল হক আজাদ, মুজিবুল হক আজাদ, জিয়াউল হক আজাদ, সিরাজুল কবির বুলবুল, শামসাদ রেজা মুন্নী, হারুন আল রশিদ, পারভীন আকতার, শিউলি আকতার, নুরুল হক, শায়লা শারমিন রনি, এস.এম.জসিম, খোরশেদ আলম সুজন, আবদুল হামিদ তালুকদার, হিল্লোল দাশ, দীপক মল্লিক, কালাম আজাদ, জাকের হোসেন জাকের, মর্জিনা আকতার, সামিরা আকতার, জুলেখা বেগম,বুলবুল আকতার মনি, রেহেনা আকতার, নাসির উদ্দিন, হেকিম জাফর,ইমতিয়াজ সুলতান জনি, গিয়াস উদ্দিন, রিয়াজুল হক, মোসলেহ উদ্দিন, নাজিম উদ্দীন, ইদ্রিস, মো.হোসেন, রফিক মাহমুদ, হোসেন মো. জুলু, আফিয়া মুবাশ্বিরা মীম, ফরিদুল আলম প্রমুখ।১৬
১৯৮৭ সালে চকরিয়া কলেজের অধ্যাপক সুুকুমার দত্ত(পরবর্তীতে বান্দরবান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত), বাম নেতা পিজি ভট্টাচার্য, ফাতেমা বেগম, মাসুদ সরওয়ার, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক (মানিক বৈরাগী) প্রমুখের তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন মাতামুহুরী খেলাঘর আসর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংগঠন কর্তৃক প্রযোজিত ও নির্দেশিত নাটকের মধ্যে ‘ক্ষুদিরামের দেশে’, ‘অবশেষে জেনারেল’ (অভীক ওসমান রচিত), ‘সাহজাহান’, ‘টিপু সুলতান’, ‘স্মৃতি ৭১’, ‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাচাল,’ ‘ওরা কদম আলী’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়।১৭
স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় বিপ্লবী নাটক্যার আশীষ কুমার রচনায় এবং নির্দেশনায় গীতিনাট্য ‘মর শালা পাবলিক’, ‘এ লাশ ঢাকা আসবেই’ নামে দুটি কালজয়ী নাটকসহ একত্রিশটি নাটক কক্সবাজার, রামু, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চায়ন করা হয়।
১৯৮৮ সালের দিকে সিমুনিয়া নাট্য সংস্থা নামে নাটকের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন খেলাঘর এর অনুমোদন লাভ করে।
‘কক্সবাজারের নাটকের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এসো পাড়ায় পাড়ায় নাটক মঞ্চায়ন করি’, শ্লোগানকে ধারণ করে মাস্টার শাহ আলম রচিত ‘শুকনো ক্ষতে রক্ত’ বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদেও সহায়তায় এন্ডারসন রোডে মঞ্চায়িত করার মধ্যে সিমুনিয়ার নাট্যচর্চার যাত্রা হয়। সিমুনিয়া খেলাঘর আসর প্রযোজিত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে ‘চাপা পড়া মানুষ’, ‘সবুজের বুকে লাল সূর্য জ্বলবে’, মাস্টার শাহ আলমের রচনা ও নির্দেশিত ‘শুকনো ক্ষতে রক্ত, ‘মা ও ছেলে’, ‘বকুলপুরের স্বাধীনতা’র সফল মঞ্চায়নের কৃতিত্ব বহন করে। দিদার স্পোটিং ক্লাবের সহযোগিতায় টেকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে, স্নিগ্ধ কিশোর সংসদের সহযোগিতায় বইল্লাপাড়া সিএনবি কলোনি মাঠে, ঘোনার পাড়া, গোলদিঘীরপাড় এবং পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ সুভাষ হলে এসব নাটক মঞ্চায়ন করা হয়।
২০১০ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী আয়োজিত শিশু নাট্য উৎসবে শ্রেষ্ঠ পরিবেশনা পুরস্কার লাভ করেন।
এসব নাটকে অভিনয় এবং সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন, নারায়ন দাশ, এম জসিম উদ্দিন, জাহেদ সরওয়ার সোহেল, স্বপন দাশ, সঞ্জীব শর্মা, জহর লাল, উৎসব পাল, দীপক দাশ, পলাশ চৌধুরী, রিনা পাল,বীনা পাল, সেলিনা আকতার, খোকন বড়ুয়া, ললিত বড়ুয়া, উদার বড়ুয়া, মোহাম্মদ ইউনুস বাবুল, আবদুল খালেক, ডালিম বড়ুয়া, শহীদুল্লা কায়সার, মাহবুব কামাল হিমেল, রফিকুল ইসলাম বাবর,এসকে বোরহান, পিপলু বড়ুয়া, সোনামিয়া জাহেদের নেতৃত্বে শক্তিশালী একটি টিম কক্সবাজারের নাট্যাঙ্গনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।
১৯৮০-১৯৯০ পর্যন্ত সে সব নাট্যকর্মী ও নাট্যনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখেন এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক সোমেশ^র চক্রবর্তী, প্রফেসর সিরাজুল মোস্তফা, এন.এম হাবিব উল্লাহ, নুরুল মুক্তাদির, প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, আবদুল হামিদ সমশের বেলাল, নুরুল আবছার, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবু হায়দার ওসমানী, করিম উদ্দিন ইউসুফ, আহসানুল মওলা, পীযুষ চৌধুরী, আবদুল মতিন আজাদ, রনজন পাল, আশীষ ধর, বাবুল পাল, একে এ ফরিদ আহমদ, জসীম উদ্দিন, নজরুল ইসলাম বকসী, জসীম উদ্দিন বকুল, অরুপ বড়ুয়া তপু, মোঃ হোছাইন মাসু, শাহানা শানু, সজল ধর, কামরুল হাসান, বিশ্বজিত সেন, আবদুল খালেক, পরেশ কান্তি দে, জাহেদুল ইসলাম, তৌহিদুল আলম, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, বিশ্বজিৎ পাল বিশু, আশরাফুল হুদা সিদ্দিকী জামশেদ, সুবিমল পাল পান্না, ইয়াছিন মুহাম্মদ শামদুল হুদা, এ কে এম ফারুক আহাম্মদ রকি, আবুল কাসেম বাবু, নজরুল ইসলাম বাচ্চু, সমীরণ চক্রবর্তী, সনজিৎ ধর, আজিজ উদ্দিন, খোরশেদ আলম, মোহাম্মদ আলমগীর, শিমুন চক্রবর্তী, এসবি ধর, শাহানা বিলকিস বানু, উষা ভট্টাচার্য্য, অমিতা চৌধুরী, রিকা বড়ুয়া, শিরিন জাহান, ইলা চৌধুরী, স্বপ্না পাল, শীলা পাল, কৃষ্ণা বড়ুয়া, আবদুল মতিন, মোহাম্মদ ফারুক, দীল মোহাম্মদ, শুক্লা ধর, শিবানী ধর প্রমুখ।১৫
‘গান হোক গণমানুষের মুক্তির হাতিয়ার‘ শীর্ষক শ্লোগানে নব্বইয়ের উত্তাল সময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার প্রত্যয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠক আবদুল মতিন আজাদকে আহ্বায়ক, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন ও সুশান্ত পাল বাচ্চুকে যুগ্ন আহ্বায়ক করে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গঠন করা হয় সম্মিলিত সাংস্কৃুতিক জোট। প্রাচীন সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান ‘সঙ্গীতায়তন’, আগামী শিল্পী গোষ্ঠী, রিঙ্গন শিল্পী গোষ্ঠী, সৈকত খেলাঘর আসর, ঝিনুক শিল্পী গোষ্ঠী, প্রতিবাদ নাট্যগোষ্ঠীসহ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন মিলে গঠিত হয় এ সংগঠন। এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মধ্যে জয়নাল আবেদিন চুন্নু, পরেশ কান্তি দে, রমজান আলী সিকদার, রথীন্দ্রনাথ মজুমদার, আবুল কাসেম বাবু। পর্যায়ক্রমে অনেক কমিটি গঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে অনেক সংগঠন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জড়িত হয়। ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী-মোহাম্মদ শাহজাহান-আবদুল মতিন আজাদ, মোহাম্মদ শাহজাহান-তাপস রক্ষিত, অরুপ বড়ুয়া তপু-নজিবুল ইসলাম, তাপস রক্ষিত-নজীবুল ইসলাম, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন- নজীবুল ইসলাম কমিটি গঠিত হয়েছে। বর্তমানে সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন-নজীবুল ইসলাম কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। এ সংগঠনের উদ্যোগে ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ৭ দিন ব্যাপী নাট্যোৎসব হয়। এ সংগঠন থেকে যে সব নাটক মঞ্চায়িত হয়- ‘চাঁদকুমারী’, ‘টু-ইডিয়টস’, ‘ময়ুর সিংহাসন’, ‘সম্পর্কের আবর্তে’, ‘ মৈনকুমার ও তামাটে কিশোর’, ‘নীল সমুদ্রের ঝড়’, ‘মাধবী’, ‘টাকা দে’, ‘ওরা আছেই বলে’, সিরাজ উদ্দৌলাহ, ময়ুর সিংহাসন, মানুষ ভূত, বার্মাইয়া সুন্দরী ইত্যাদি। সম্মিলিত জোটের পরিচালনা, নির্দেশনা ও নাট্যাভিনয়ে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন- ইউসুফ মোহাম্মদ শামসুল হদা মোহাম্মদ আলী জিন্নাত, ইকবাল মুহাম্মদ শামশুল হুদা, তাপস রক্ষিত, , ইয়াছিন মুহাম্মদ শামশুল হুদা, অরুপ বড়ুয়া তপু, রনজিত দাশ, জাহেদ সরওয়ার সোহেল, অনিল দত্ত, নজীবুল ইসলাম, আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ, দীপক শর্মা দীপু, মুহম্মদ সেলিম রেজা, মাহবুবুর রহমান, বাবুল পাল, শ্যামা পাল, নাজমুল করিম জুয়েল, রহমান মুফিজ, মনির মোবারক, শহীদুল্লাহ শহীদ, রিদুয়ান আলী, ফাতেমা আক্তার শাহী, গিয়াস উদ্দিন মুকুল প্রমুখ।১৯
‘নাটক হোক গণমানুষের হাতিয়ার’ শ্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৯২ সনে প্রতিষ্ঠিত হয় ঝিনুক নাট্য গোষ্ঠি। হামিদ উদ্দিন ইউসুফ গুন্নু, পরেশ কান্তি দে, বিশ^জিত পাল বিশু, আবুল কাসেম বাবু, সুবিমল পাল পান্না, আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ, প্রুনু পাল, নিবেদিতা ভৌমিক, টকি মল্লিক, দীপক শর্মা দীপু এ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এদের প্রযোজিত ও নির্দেশিত নাটকের মধ্যে আবদুল মতিন আজাদ রচিত ও নির্দেশিত ‘স্বাধীনতা একটা রক্তাক্ত বিলাপ’ এবং ‘এই সেই কণ্ঠস্বর’,, পরেশ কান্তি দে নির্দেশিত ‘নির্বাচনী প্রেম’, মনোজ মিত্র রচিত ও স্বপন ভট্টাচার্য নির্দেশিত ‘পালিয়ে বেড়ায়’, ‘আমাদের সন্তানেরা’, ‘স্বাধীনতার ময়নাতদন্ত’, ‘কন্ঠক বলয়’, ‘‘চাঁদ মিঞার বাইস্কোপ’, ‘চন্দ্রধরের পালা’ কামরুল হাসান রচিত ও নির্দেশিত ‘ মোক্তার বলি ও নাফকন্যা ম্যামাচিং’ প্রভৃতি নাটক।
ঝিনুক নাট্য কেন্দ্রের ব্যানারে ২৫ আগষ্ট ১৯৯৪ তিন দিনব্যাপী নাট্যবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে এ পর্যন্ত ১৪ টি নাটক ঝিনুক নাট্য কেন্দ্রের উদ্যোগে প্রযোজিত হয়। আর এ সব নাটকে অভিনয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তাদের মধে পরেশ কান্তি দে, বিশ^জিত পাল বিশু, আবুল কাসেম বাবু, সুবিমল পাল পান্না, আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ, নজরুল ইসলাম বাচ্চু, প্রুনু পাল, নিবেদিতা ভৌমিক, দীপক শর্মা দীপু, টকি মল্লিক, সকু মল্লিক, রতন বড়ুয়া, বিমল কান্তি দে প্রমুখ।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৯৪ সনে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে মঞ্চায়িত করা হয় কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার মৌনকুমারী, জন্মজাতি এবং আমরা তামাটে জাতি’ অবলম্বনে কামরুল হাসান রচিত ও নির্দেশিত ঝিনুক নাট্যকেন্দ্রের মৌলিক নাটক ‘ মৌন কুমারী ও তামাটে কিশোর’, কক্সবাজার থিয়েটারের ‘টু ইডিয়টস’ এবং কোয়েল নাট্যগোষ্টীর ‘সমুদ্র সওয়ার’ নটক।২০
উদীচী কক্সবাজার জেলা সংসদ প্রযোজিত নাটক ও গীতিনাট্যের মধ্যে রয়েছে ‘সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলনের নির্দেশিত ‘বিবি সাব (২০০২)। কক্সবাজারের প্রগতিশীল কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী রহমান মুফিজের রচনায় ও নির্দেশনায় ‘কান্তি দাশ’ নাটক, গীতিনৃত্য নাট্য ‘দইজ্জার ফুল (২০০৬), পথ নাটক ‘মানুষ জাগবে ফের (২০০৬), ‘জাতিস্মর সাম্পান’ মঞ্চায়িত হয়। কক্সবাজার বিজয় মেলা, কক্সবাজার পৌরসভা, রামু বিজয় মেলা, উদীচীর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন এবং উদীচী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় সংসদের উদ্যোগে মঞ্চায়িত হয়। রহমান মুফিজের রচনায় ও নিদের্শনায় ‘দইজ্জার ফুল’ গীতিনাট্যে অভিনয় করেন দীলিপ দাশ, সোমা দাশ, রুমি প্রভা দে, অসীম কুমার দে, সেলিম, কাঞ্চন, তনু, মহুয়া দাশ, ইসমত আরা ইসু প্রমুখ।২১ পরে এই গীতিনৃত্য নাট্যটি ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর কক্সবাজার উদীচী আয়োজিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন, রামু বিজয় মেলা এবং ঢাকায় বেশ কয়েকবার মঞ্চস্থ করা হয়।
উদীচী কক্সবাজার জেলা সংসদের প্রযোজিত মাস্টার শাহ আলমের গ্রন্থনা ও দিলীপ দাশের নির্দেশনায় গীতিনাট্য ‘হাজেরার পিরিতি’ জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন ২০১৭ অনুষ্ঠানে মঞ্চায়িত করা হয়। এ নাটকে অভিনয় করেন বোরহান মাহমদু, ইরশাদ ছিদ্দিকী মিশু, জাহেদুল হক সুমন, ফাল্গুনী হৈমু, আবছার, জিয়ন্ত রাজু, তাপস মল্লিক, মুরাদ, অর্পা দাশ, তর্পনা দে ডিকি প্রমুখ। সংগীতে পরিচালানায় ছিলেন সোমা দাশ, আয়াজ মাবুদ, কল্যাণ পাল।
উদীচী কক্সবাজার সরকারি কলেজের উদ্যোগে ৩০ বছর পরেই কলেজ মাঠে জাহেদুল হক সুমনের নেতৃত্বে ‘রাজার বিকার’ নাটক মঞ্চায়ন হয়। অবশ্য এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট উদীচী কক্সবাজার সরকারি কলেজ সংসদের উদ্যোগে কক্সবাজার সরকারি কলেজ উদীচীর উদ্যোগে সাতদিন ব্যাপী নাট্য প্রশিক্ষণের সমাপনী দিনে কক্সবাজার সিটি কলেজের প্রভাষক মো. ইমরান হোসাইন ইমুর রচনায় ও নির্দেশনায় ‘রাজার বিকার’ নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। এ নাটকে অভিনয় করেন জাহেদুল হক সুমন, ফাল্গুনী দাশ হৈমু, ইরশাদ সিদ্দিকী মিশু, সিফাত আল নুর, আরমান মালিক, সাহেদুল হক সাইমুন, তর্পনা দে ডিকি, মোঃ আবছার, সৌরভ শর্মা, আশফাক শাহরিয়ার, শাফকাত শাহরিয়ার, সুমাইয়া ফেরদৌসি, রুপন দাশ। ‘রাজার বিকার’ নাটকটি এ পর্যন্ত কক্সবাজার বিজয় মেলা, কক্সবাজার কলেজ, রামু বিজয় মেলাসহ ৫বার শো করা হয়েছে।
একই দিন মামুনুল হকের রচনা ও নির্দেশানায় ‘অগ্নিচোখ’ মঞ্চায়িত হয়। এ নাটকে অভিনয় করেন রুবেল ধর, ফাতেমা আক্তার মার্টিন, সোহেল রানা, ফাতেমা জান্নাত লুমা, বিকাশ দাশ, ইনজামামুল হক, মুরাদ মুক্তাদীরু ত্বোহা, মুন্না দাশ, নুসরাত সিদ্দীকা, সোনারাম দাশ, কানজন দে, ব্রজ গোপাল রয়।
২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর উদীচী কক্সবাজার সরকারি কলেজ সংসদের আয়োজনে ও কক্সবাজার সরকারি কলেজ প্রশাসনের সহায়তায় চঞ্চল গুপ্ত রচিত ও ইমরান হোসেনের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ ‘গর্ত’। এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন জাহেদুল হক সুমন, রুবেল ধর, সিফাত আল নুর, ইরশাদ সিদ্দিকী মিশু, আসিফ, মো. আবছার, আরমান মালিক, বৃষ্টি ধর, তর্পনা দে ডিকি, প্রীতার্থী বৈদ্য প্রিতু প্রমুখ। ২২
১৯৯২ সনে ঝিনুকমালা খেলাঘর আসরের সম্মেলনে পরেশ কান্তি দে রচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক শিশুতোষ নাটক ‘সূর্যের সন্ধানে’ মঞ্চায়ন করা হয়। অরুপ বড়ুয়া তপুর নির্দেশনায় কক্সবাজার ইনস্টিটিউট কাম পাবলিক লাইব্রেরি হলে মঞ্চায়িত ‘সূর্যের সন্ধানে’ নাটকে অভিনয় করেন সুশান্ত পাল বাচ্চু, আবুল কাসেম বাবু, টকি মল্লিক, সকু মল্লিকসহ ৬/৭ জন শিশুশিল্পী। সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা উপস্থিত থেকে সম্মেলন শেষে ‘সূর্যের সন্ধানে’ নাটক সফল মঞ্চায়ন উপভোগ করেন। ২৩
১৯৯২ সনের সেপ্টেম্বরের শুরুতে কিশোর থিয়েটার প্রযোজিত ও মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘হাতেম আলীরা স্বপ্ন দেখে’, ‘সুমনের নাটাই’ (১৯৯৫), ‘পদ্মাপারের সাজু’ (৮৭, ৯২), ‘অনেক বৃষ্টি অনেক রোদ’ (১৯৯০), ‘নতুন জোয়ার’ (১৯৯৪), সংবাদ শিরোনাম (১৯৯৩), কুতুবদিয়ার আ.স.ম. শাহরিয়ার রচিত ‘মুকুট বিড়ম্বনা’ (১৯৯৩), উপদ্রুত স্বপ্নেরা’ (১৯৯৪), ‘মানুষ মানুষের জন্য (২০০৫), ‘দস্যি ছেলের কান্ড’ (২০০১), একটু মেঘের ছায়া’ (২০০২), ‘সেভেন ক্রিকেট’(২০০৭) প্রভৃতি।
১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাবলিক লাইব্রেরির দৌলত ময়দানে মঞ্চায়িত হয় মাষ্টার শাহ আলম রচিত ‘ওদের ধরিয়ে দিন’। আর এ নাটকে অভিনয় করেন আবুল কাশেম, মোজাম্মেল হক আযাদ, সিরাজুল কবির বুলবুল, আমানুল হক বাবুল, শামসাদ রেজা মুন্নী, হারুন-আল-রশিদ, পারভিন আকতার, রনি, মনি প্রমূখ।
১৯৯৮ সালে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে মঞ্চায়িত হয় মাস্টার শাহ আলম রচিত, প্রযোজিত ও পরিচালিত ‘মাথিনের প্রেম কাহিনী’। এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- আবদুল কুদ্দুস রানা, পারভীন আকতার, জিয়াউল হক আযাদ, হুসনে আরা বেবী, দীলিপ মল্লিক, দীপক মল্লিক, সুজন বড়ুয়া, সিরাজুল কবির বুলবুল, শামসাদ রেজা মুন্নী, হারুন-আল রশিদ প্রমূখ। এ নাটকটি মঞ্চায়িত করার সময় দর্শকদের অশ্রুর জল টলমল হয়েছিল বলে জানা যায়।২৪
১৯৯৯ সালের শুরুতে ডুলাহাজারায় ‘নাট্য হোক প্রগতি ও মানব মুক্তির হাতিয়ার’ শ্লোগানকে সামনে রেখে আমির উদ্দিন বুলবুল, মাহফুজুল করিম, আবুল ফজল প্রমূখের উদ্যোগে বৈশাখী নাট্যসংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংগঠন থেকে প্রতিটি দিবস বিভিন্ন স্কুলে নিয়মিত নাট্যও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। বৈশাখী নাট্য সংগঠন প্রযোজিত নাটক‘ ক্ষুদিরামের দেশে,’ ‘পতন, ‘ওরা কদম আলী’, ‘দস্যি ছেলের কান্ড’, ‘জরিনা সুন্দরী’, ‘রুপবান’, ‘শহীদে কারবালা’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়। আর এসব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- আহমদ হোছন, কবির আহমদ (কালা সোনা), আব্বাছ মিয়া, জাফর আলম, শামসুল আলম, মনিন্দ্র মাস্টার, আবু সুফিয়ান দফাদার, বাবুল চন্দ্র শীল, বাবু মোহনদে প্রমুখ। বৈশাখী নাট্য সংগঠনটি বর্তমানে নিস্ক্রিয়।
২০০৪ সালের ১ মার্চ কক্সবাজারের চাউল বাজার গীতা সংঘের উদ্যোগে দীপক শর্মা দীপুর রচনায় ও স্বপন ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় ‘শ্রী কৃষ্ণের জীবন চরিত অবল্বনে ‘শ্রী কৃষ্ণ লীলা’ নাটক ঘোনারপাড়াস্থ শ্রী শ্রী কৃষ্ণানন্দ ধাম প্রাঙ্গনে মঞ্চায়িত হয়। এ নাটকে অভিনয় করেন সুশান্ত পাল বাচ্চু, পরেশ কান্তি দে, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, দীপ্তি মহাজন প্রমুখ।
২০০৪ সালের শুরুতে সোহিনী শিল্পী গোষ্ঠীর উদ্যোগে কামরুল হাসানের নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয় জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার মৈনাক’ উপন্যাস অবলম্বনে কামরুল হাসান রচিত ‘মৈনকুমার ও তামাটে কিশোর’ নাটকটি। এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- মো. নাছির উদ্দিন, সাইফূল ইসলাম আদর, আবুল কাসেম, সাইফুল ইসলাম কাজল, রিংকু বড়ুয়া, শেখ ফেরদৌস আক্তার রিমি, তছলিমা আকতার প্রমুখ।
২০০৫ সালে জসীম উদ্দিন বকুল রচিত ও নির্দেশিত উপকূলীয় জেলে জীবন নিয়ে নাটক ‘সূর্য উড়ের লাল মারি’ কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মঞ্চে মঞ্চায়িত হয়। এতে অভিনয় করেন জসীম উদ্দীন বকুল, পরেশ কান্তি দে, শামীম আকতার, মীর হোসেন বাবুল ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় মৎস্যজীবী সংগঠনের সদস্যবৃন্দ।২৫
বিদ্যায়তনে নাট্যচর্চা
১৯৫০ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেব প্রসাদ ভট্টাচার্য’র পরিচালনায় ‘সিরাজের স্বপ্ন’ নাটকটি কক্সবাজার হাই স্কুলে মঞ্চায়িত হয়। এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- সলিমুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ (তৎসময়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্র ও বর্তমান সিনিয়র আইনজীবী), আবুল মঞ্জুর (কানাডা প্রবাসী), ইউ সুয়ে জান, সেলিম রাহগীর, ছালামত উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন প্রমুখ। কক্সবাজার হাইস্কুলে এ নাটকটি মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে স্কুলে নাট্যচর্চার ইতিহাস শুরু হয়। ২৬
১৯৫৬ সালের শুরুর দিকে দেব প্রসাদ ভট্টচার্যের নির্দেশনায় কক্সবাজার হাইস্কুলে ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। এ নাটকে সক্রিয়ভবে অংশগ্রহণ করেন ছালামত উল্লাহ, কবি সেলিম রাহগীর, অধ্যাপক নূর আহমদ এডভোকেট, লিয়াকত আলী, মুহাম্মদ নাসির উদ্দিনসহ স্কুলের কয়েকজন ছাত্র। ১৯৬৪ সালে কক্সবাজার মডেল হাই স্কুল (বর্তমান কক্সবাজার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়) এর বার্ষিক নাটক নাট্যকার নুরুল মোমেন রচিত ‘যদি এমন হতো’ তৎকালিন ইংরেজি শিক্ষক শাহনেওয়াজ আহমদ জাহাঙ্গীরের পরিচালনায় মঞ্চায়িত হয়। আর এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- সুভাষ দাশ (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), নুরুল আজিজ চৌধুরী, ফয়েজুল আজিম জেকব (চবি চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক), বদর উদ্দিন, সিরাজুল মোস্তফা, রাখাল মিত্র, একেএম নুর আহমদ প্রমুখ।
১৯৬৭ সালে উস্তাদ নুরুল মুক্তাদিরের পরিচালনায় শিশু কিশোর নাটক মঞ্চায়নের সূচনা হয়। তাঁর রচিত ‘শপথ’ ও ‘আশার মানিক’ নামক দুটো তিনি নিজস্ব পরিচালনায় কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারেটরি হাই স্কুলে মঞ্চায়িত করেন। এ দুটো নাটকে অভিনয়কারীদের মধ্যে- আবদুল মতিন আজাদ, রঞ্জন পাল, স্বপ্না ভট্টাচার্য, মাহবুবুর রহমান, রাখাল মিত্র, খোকা, মাফরোহা সুলতানা মেরী, মাহরুফা সুলতানা বেলী প্রমূখ।
নুুরুল মোক্তাদিরের মাধ্যমে কক্সবাজারের এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয় যা সকলকে নাড়া দেয়। তিনি প্রথম মহিলা দিয়ে নারী চরিত্রে চিত্রায়ণ করে সফল মঞ্চায়িত করিয়েছিলেন। এর আগে নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে পুরুষরা পালন করত নারীর দায়িত্ব অর্থাৎ পুরুষরাই নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন।
১৯৭৩ সালে স্কুলভিত্তিক নাট্যচর্চার পাশাপাশি কক্সবাজার কলেজেও নাট্য চর্চা শুরু হয়। অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী ও অধ্যাপক মঞ্জুরুল হক হেলালের নির্দেশনায় ‘রুপোর কৌটা’ নাটকটি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয়। সূচনা হয় কক্সবাজার কলেজে (তখনো কলেজ সরকারি হয়নি) নাট্যচর্চার ইতিহাস। বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জরুল হক হেলাল এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তফা’র যৌথ নির্দশনায় কক্সবাজার কলেজ চত্বরে ১৯৭৭ সনে সর্বপ্রথম ‘জনৈকের মহাপ্রয়াণ’ এবং পরে ‘লাশ ৭৪’ মঞ্চায়িত হয়। পরবর্তীতে অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তফা‘র নির্দেশনায় কক্সবাজার সরকারি কলেজে ‘ওরা কদম আলী’, ‘ওর আছে বলেই’, ‘গলাকাটা লাশ’, ‘কবর হুজুর কখন মরবে’, ‘সুঁচ’,‘টিপু সুলতান’, ‘মহারাজ প্রতাপাদিত্য’, ‘স্বয়ম্বরা’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়। এসব নাটকে যারা অভিনয় করেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক মুফীদুল আলম, অধ্যাপক মকবুল আহমেদ, অধ্যাপক মনজুরুল হক হেলাল, অধ্যাপক একেএম নুরুল হক চৌধুরী, প্রফেসর এম এ বারী, অধ্যাপক মনোজ সেন, নাসিমা আক্তার লিপি, যমুনা দাশ, তোফায়েল আহমদ (সাংবাদিক ও আইনজীবী), মহিবুল্লাহ, করিম উদ্দিন ইউসুফ, লূৎফেন্নছা, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, তৌহিদুল আলম, এস.এম আকতার চৌধুরী, মাফরোহা সুলতানা মেরী, আবু হায়দার ওসমানী, হামিদা আক্তার পারুল, মাসুদা মোর্শেদা আইভি, শামীম ইকবাল, এরশাদ উল্লাহ, এ কে.এম.ফারুক আহমদ রকি, অরুপ বড়ুয়া তপু, মোজাম্মেল হক প্রমূখ। এর ধারাবাহিকতা ১৯৮৬ পর্যন্ত বজায় থাকে। ১৯৮৭ সালে প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির কলেজ ছাত্র সংসদে প্রবেশ করলে এখনো পর্যন্ত কোন নাটক মঞ্চায়িত হয়নি। যা একটি সরকারি কলেজের জন্য খুবই দুঃখজনক। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী কোনো নাটক মঞ্চায়িত না হলেও এনামুল হক সিকদারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির পরিচালিত ছাত্র সংসদ ‘বহে রক্ত নদী’ নামে একটি মৌলবাদী ও জামায়াতি নাটক মঞ্চায়ন করেন। এ নাটকে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু বিরোধী চিত্র ফুটে উঠে। এর প্রতিবাদে কক্সবাজার সরকারি কলেজে স্বাধীনতা পক্ষের নাট্যকর্মীরা মৌলবাদ বিরোধী নাটক ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি হলে মঞ্চায়ন করে। তবে ১৭ সালের দিকে উদীচী কক্সবাজার সরকারি কলেজ সংসদের উদ্যোগে কক্সবাজার সরকারি কলেজের বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে ইমরান হোসেন ইমুর রচনা ও নির্দেশনায় ‘রাজার বিকার’ মঞ্চায়িত করা হয়। এতে অভিনয় করেন জাহেদুল হক সুমন, ইরশাদ সিদ্দিকী মিশু, রুবেল ধর, সিফাত আল নুর, লিপিকা ধর, আরমান মালিক, জয় মল্লিক, মোঃ আবছার, তর্পনা দে ডিকি, শাওন শর্মা নিশান।
১৯৮১ সালে মহেশখালীতে স্কুলভিত্তিক নাট্যচর্চা শুরু হয়। ১৯৮১ সালে ইউনুছখালী নাসির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়’র উদ্যোগে ছাত্র শিক্ষকের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রতিবছর দুটি করে নাটক মঞ্চায়িত করা হতো। আখতার আহমদ, সাইফুল্লাহ খালেদ এর যোথ পরিচালনায়ও নিদের্শনায় মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে-‘‘সাগর সেঁচা মানিক’, সিরাজউদৌল্লাহ’, ‘মলকা বানু’, ‘স্মৃতি ৭১’,‘আলোড়ন’, ‘সিন্ধু বিজয়’ প্রভৃতি। এ সব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- সাইফুল্লাহ খালেদ, মাস্টার আবু সৈয়দ, জয়নাল আবেদীন, গোলাম কুদ্দুছ চৌধুরী, আবদুশ শুক্কর, আবুল হোসেন মাস্টার, ওসমান গনি, নুরুল ইসলাম খান, মাস্টার মমতাজ প্রমুখ।২৭
১৯৮৪-১৯৮৬ সময়ে কালারমার ছড়া উচ্চ বিদ্যালয়েও প্রতিটি বছরে দুইটি এবং বিভিন্ন উৎসবে নাটক মঞ্চায়ন করেন। এদের মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘বিজয় নিশান’, ‘লাশ ৭৪’, ‘গরীবের ছেলে’, ‘ সোহরাব-রুস্তম’, ‘ওরা আছেই বলে’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আর এ সব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- সাইফুল্লাহ খালেদ, সৈয়দ লকিতুল্লাহ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, নুরুল আবসার, খালেদ মাহবুব মোর্শেদ (কবি-প্রাবন্ধিক), সুলজিৎ রুদ্র, মনজুর আহমদ, ওসমান সরওয়ার, দিলিপ দাশ প্রমুখ।
২০১০ সালে কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে শিক্ষক পরেশ কান্তি দে এর রচনায় ও নির্দেশনায় ‘সখিনার একাল- সেকাল’ নাটক মঞ্চায়ন করা হয়।
২০১৮-২০১৯ সালে পরেশ কান্তি দে এর নির্দেশনায় শিশুতোষ নাটক ‘হিংসুটে ছেলে’ কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি দৌলত ময়দানের উন্মুক্ত মঞ্চে মঞ্চায়িত হয়। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির আয়োজনে এ নাটকে অংশগ্রহণ করেন কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিথিলা সেন, পুজা চক্রবর্তী, সুষ্মিতা চৌধুরী, নওরিন হুদা অমি, বেবি আক্তার, মিথিলা সরকার, অনামিকা শীল, নাফিস মোহাইমিন, জাফরিন আক্তার জয়া, নাইমুল নাহিদ, সিরাজুল মোস্তফা জিসাদ প্রমুখ। এছাড়া ২০১৯ সালে ‘সুখ-দুঃখ’ নাটকে অভিনয় করেন পরেশ কান্তি দে, নওরিন হুদা অমি, মিথিল সেন, সুষ্মিতা চৌধুরী, পুজা চক্রবর্তী প্রমুখ। ২৮
কক্সবাজারে গ্রুপ থিয়েটার চর্চা
স্বাধীনতা-উত্তর কক্সবাজারের নাট্যচর্চা বিকশিত হয় মূলত গ্রুপ থিয়েটারকে কেন্দ্রে করে। সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতায় দলীয়ভাবে অনেক নাট্যকার, নাট্যকর্মী এবং নাট্যনির্দেশকের আবির্ভাব হয়। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে এবং নাট্যকারের নাটক প্রকাশিত হয়েছে তাতে ফুটে উঠেছে সমাজের রূঢ় বাস্তবতার চিত্র। প্রতিবাদ প্রতিরোধ চেতানা এ সময়কালের নাট্যসাহিত্যের মূল প্রবণতা। এ প্রবণতাকে সামনে সামনে রেখে সমাজের সংকট, ব্যক্তির নৈতিক স্খলন, জীবনের বিচিত্র দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় চিত্র ধারণ করে নাটক মঞ্চায়ন করেছেন কক্সবাজারের নাট্যকর্মীরা। কক্সবাজারে প্রথমবারের মত গ্রুপ থিয়েটার ভিত্তিক সংগঠন ‘ব্যতিক্রম নাট্য সংস্থা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যতিক্রমী প্রত্যয়ে ব্যতিক্রমই প্রথম নাটককে যৌথ শিল্প কর্ম হিসেবে গ্রহণ করে কক্সবাজারের নাটকে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অবর্তীণ হয়। ব্যতিক্রম নাট্য সংস্থা প্রতিষ্ঠায় যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক মুফীদুল আলম, অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তফা, এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী প্রমূখ। এদের প্রযোজিত নাটক- অধ্যাপক মুফীদুল আলম রচিত নাটকত্রয় ‘কবন্ধ’, ‘পাষাণ’ এবং ‘লাবনী পয়েন্ট’, দীপক চৌধুরী রচিত ও সিরাজুল মোস্তফা নির্দেশিত ‘জননীর মৃত্যু চাই’, ‘সমাপ্তি অন্যরকম’, ‘ছায়াছবির অঙ্গনে’, ‘হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার’, ‘হরিণ চিতা চিল’, ‘এবার ধরা দাও’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়ে নাটকের ক্ষেত্রে প্রত্যয়ের প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়।
১৯৮৪ সনে শুদ্ধতম নাটকের প্রতিশ্রুত নিয়ে রিঙ্গণ থিয়েটার (প্রাথমিক নাম রিঙ্গণ নাট্য গোষ্ঠী) জন্ম লাভ করে। রিঙ্গণ থিয়েটার প্রযোজিত নাটকের মধ্যে ‘তালতলার উপাখ্যান’, দীপক চৌধুরী রচিত ‘রাজা এলেন রাজাকার’, ‘ ফেরাতে এসো না’, ‘সাহজাহান’ প্রভৃতি নাটক। রিঙ্গণ নাট্যগোষ্ঠীর সাথে জড়িত ছিলেন সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, শিমুন চক্রবর্তী, খোরশেদ আলম, ঝুলন দাশ, তাপস চক্রবর্তী পিকলু, পুলক দাশ, পীযুষ, আজিজুর রহমান আজিজ, সনজিত ধর সনজু, বিপ্লব বিশ^াস, সাইদুল ইসলাম, রিঙ্কু চক্রবর্তী প্রমুখ।
১৯৮৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ‘ঝিনুক শিল্পী গোষ্ঠী’ ‘রং বেরং নাট্য গোষ্ঠী’, পূর্বাচল, সমকাল, এক পা সামনে’সহ কয়েকটি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘কক্সবাজার থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ঝিনুক শিল্পী গোষ্ঠী, রংবেরং নাট্যগোষ্ঠী, পূর্বাচল যৌথ আয়োজনে এস এম সোলাইমানের ‘ইঙ্গিত’ নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। ‘ইঙ্গিত’ নাটকের মঞ্চায়ন শেষে অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তফা এসব সংগঠনের সমন্বয়ে ‘কক্সবাজার থিয়েটার’ সংগঠনের কথা ঘোষণা করে। কক্সবাজার থিয়েটার ৪০টি নাটক সাফল্যজনকভাবে প্রযোজনা করেছে। কক্সবাজার থিয়েটার প্রযোজিত নাটকের মধ্যে- এস এম সোলাইমান রচিত ‘ইঙ্গিত’, ‘সুবচন নির্বাসনে’, ‘এখানে নোঙ্গর’, ‘রাজনিদ্রা’, মনোজ মিত্র রচিত এবং স্বপন ভট্টাচার্য ও অনিকেত পাল বাবু নির্দেশিত ‘মেষ ও রাক্ষস’, খোরশেদ আলম রচিত ‘মানব না এই বন্ধন’ এবং ‘আলিমুদ্দিনের দুঃস্বপ’্ন, চন্দন সেন রচিত ও স্বপন ভট্টাচার্য নির্দেশিত ‘টু ইডিয়টস’, ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’, ‘মানুষ ভূত’, উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কাহিনী অবলম্বনে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার কাব্যোপন্যাস ‘নীল সমুদ্রের ঝড়’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে ‘যখন বৃত্তের বাইরে’, ‘হ্যামলেট’, ‘মনপুরা’, ‘শাহাজাহান’, ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’, ‘মাধবী’, ‘অভীপ্সিত’ প্রমূখ। এ সংগঠনের সংগঠকের মধ্যে রয়েছেন আবুল কালাম আজাদ, খোরশেদ আলম, সিরাজুল মোস্তফা, গোলাম কিবরিয়া, প্রবীর বড়ুয়া, মোহাম্মদ শাহজাহান, জামাল হোসেন মনু, জসীম উদ্দিন বকুল, রায়হান উদ্দিন, ইকবাল মোহাম্মদ শামসুল হুদা টাইডেল, এডভোকেট তাপস রক্ষিত, এডভোকেট সৈয়দ রাশেদ উদ্দিন, ইকবাল মোহাম্মদ শামসুল হুদা টাইডেল, ফারুক আহমদ রকি, নজরুল ইসলাম বকসী, আবদুল খালেক, অরুপ বড়ুয়া তপু, পরিতোষ চৌধুরী, আক্তার শাহনেওয়াজ করিম শাহীন, সাহানা রেজা, এসএম আকতার চৌধুরী প্রমুখ।
পরবর্তীতে কক্সবাজার থিয়েটার আন্দোলনে জড়িতেরা হলেন, ইকবাল মোহাম্মদ শামসুল হুদা টাইডেল, তাপস রক্ষিত, অরুপ বড়ুয়া তপু, বিভাষ সেনগুপ্ত জিগমী, ইয়াছিন মুহম্মদ শামসুল হুদা, সুশান্ত পাল বাচ্চু, স্বপন ভট্টাচার্য, সাইফুল ইসলাম, ব্যাংকার জাহেদুল ইসলাম, ডালিম, নীলু, ডলি, রবি, রিয়াদ, অপু, নজীবুল ইসলাম, বনানী চক্রবর্তী, আবু হানিফ, আবুল মনজুর, প্রকাশ পাল, সাগর পাল, এহসান আক্তার পারুল, সুমন দাশ, গিয়াস উদ্দিন মুকুল, আবু দাউদ চৌধুরী রিপন, তাপস বড়ুয়া, দিলীপ দাশ, দেবাশীষ দাশ দেবু, অমির দাশ, ফাতেমা আক্তার শাহী, আশুতোষ রুদ্র, ইব্রাহিম খলিল, সুলতান আহমদ, নাজমুল করিম জুয়েল, শাহানা মজুমদার চুমকী, ইসমত আরা ইসু, রুনা আক্তার, আজাদ মনসুর, ঈস্পিতা আবরার সুহা, রেহনুমা কামাল কাশপিয়া, হামিদা আক্তার সুমি, প্রবাল পাল, দোলন পাল, জাহেদুল হক সুমন, ফাল্গুনী হৈমু, কামাল উদ্দিন আরমান মানিক, মিম আকতার তুই, আরিফুর রহমান ফাহিম প্রমুখ।
নাট্য প্রযোজনা ছাড়াও নাট্য প্রশিক্ষণ ও নাট্য বিষয়ক ওয়ার্কশপের মাধ্যমে কক্সবাজার থিয়েটার নতুন নতুন নাট্যকর্মী তৈরি করার ব্যাপারে বেশ যত্নবান ছিলেন। ১৯৯৪ সালে কক্সবাজার ইনস্টিটিউট এন্ড পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে রুশ গল্পকার আন্দ্রে সালতিকভ শ্চেদ্রিনের ছোটগল্প অবলম্বনে ভারতের প্রখ্যাত নাটক্যকার চন্দন সেনের ‘দুই হুজুরের গপ্পো’ নাটকের রূপান্তর ‘টু ইডিয়টস’ নাটক প্রথম মঞ্চায়ন হয়। এরপওে স্বপন ভট্টাচার্য্যরে নির্দেশনায় ‘টু-ইডিয়টস’ চট্টগ্রামেও মঞ্চায়িত হয়। ১২
ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মঞ্চায়ন শেষে নাট্যতীর্থের আমন্ত্রণে ২০১৯ সালের ৪ মে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মঞ্চে মঞ্চনাটকের শততম মঞ্চায়ন সম্পন্ন হয়।
শততম মঞ্চায়নের কারিগর স্বপন ভট্টাচার্য্য নির্দেশিত প্রথম মঞ্চনাটক সমীকরণ থিয়েটারের প্রযোজনায় হিন্দি কথাসাহিত্যিক প্রেমচন্দের গল্প অবলম্বনে সৌমেন্দু ঘোষের নাটক ‘ঋণশোধ’। তার নির্দেশিত নাটকের মধ্যে ঋণশোধ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে ‘তোতা কাহিনী’, তোমরাই, সম্প্রীতি, পুতুলখেলা, ‘মেঘ ও রাক্ষস’, প্রজন্মের অঙ্গীকার, ‘ঘটনা যা ঘটলো’, ‘টু ইডিয়টস’, ‘মাধবী’, ‘বিবাহ বিভ্রাট, ‘ক্রসবাঁধ’, ‘সম্পর্কের আবর্তে’, ‘নীল সমুদ্রের ঝড়’, ‘পালিয়ে বেড়ায়’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘কবর’, ‘পরীবানু’, ‘শ্রী কৃষ্ণায়ন’, ‘রাধাকৃষ্ণ সুধা’, ‘পরমহংস শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ’, ‘মানুষ ভূত’, ‘যখন বৃত্তের বাইরে’, ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’, ‘আত্মদহন’, দেনা পাওনা, বাঁধ ও বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব, শব্দের বিজয় গাঁথা ও ‘মনবৈরি’ অন্যতম।
তাঁর রচিত ও রূপান্তরিত নাটকের মধ্যে ‘পুতুলখেলা’, ‘প্রজন্মের অঙ্গীকার’, ‘দুষ্টু মোরগ’, ‘ট্রাংক রহস্য’, ‘অভীপ্সিত, ‘সম্পর্কের আবর্তে’, ‘নীল সমুদ্রের ঝড়’, ‘যখন বৃত্তের বাইরে’, ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’, ‘দেনাপাওনা’, ‘আত্মদহন’, ‘বাঁধ ও বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব’, ‘শব্দের বিজয়গাঁথা’ ও ‘মনবৈরি’ উল্লেখযোগ্য।
১৯৯৫ সালে কক্সবাজার থিয়েটার থেকে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের তত্ত্বাবধানে সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিভাগের অধ্যাপিকা ক্রিষ্টিনা ইগ্রেনর পরিচালনায় একটি লেকচার প্রদান করা হয়। কক্সবাজার থিয়েটারের আমন্ত্রনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়ার নাট্যসংস্থা এসে তাদের উল্লেখযোগ্য নাটক প্রদর্শন করেছে। এদের ব্যবস্থাপনায় কলকাতার লহরী সাংস্কৃতিক সংগঠন পাবলিক লাইব্রেরি হলে ‘রক্তকরবী’ নাটকসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে দর্শকদের নজর কাড়ে। কক্সবাজার থিয়েটারের উদ্যোগে এ পর্যন্ত চার বার সপ্তাহব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়।
১৯৯১ সালে মোহাম্মদ শাহজাহান, অরুপ বড়ুয়া তপু, আবদুল মতিন আজাদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় কক্সবাজার থিয়েটার মঞ্চ। কক্সবাজার থিয়েটার আর্ট প্রযোজিত নাটকের মধ্যে আমিনুর রহমান মুকুল রচনায় ও মুসলেহ উদ্দিন সিকদার লিটনের নির্দেশনায় ‘মলকা বানু’, স্বপন ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় ‘উজান পবন’, হুমায়ুন আহমদের রচিত ‘১৯৭১’, ‘ক্রসবাঁধ’, ‘জুতা আবিষ্কার’, প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত করে কক্সবাজার নাট্য অঙ্গণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। কক্সবাজার থিয়েটার মঞ্চ প্রযোজিত নাটকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল মতিন আজাদ, কামরুল হাসান, অরুপ বড়ুয়া তপু, বাবুল পাল, জাবেদ আবেদিন শাহীন, শামীম আক্তার, মইন উদ্দিন কোহেল, গিয়াস উদ্দিন, শাহারা খাতুন রিমা, রোজিনা আক্তার রোজি, বর্ণা পাল, দেবাশীষ বড়ুয়া রিংকু, রিপন বড়ুয়া অর্ণব, করিম উল্লাহ কলিম, আবুল কালাম আজাদ, টকি মল্লিক, সকু মল্লিক, মলি দে প্রমুখ।৩০
১৯৮৪ সালের ২৬ শে মার্চ উপলক্ষ্য করে প্রতিষ্ঠিত হয় ধ্রুপদী-৪। এ সংগঠন হিসেবে যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তার মধ্যে হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এ কে এ ফরিদ আহমদ, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, শিমুন চক্রবর্তী, ঝুলন দাশ, তাপস চক্রবর্তী পিকলু, পুলক দাশ, পীযুষ প্রমূখ। এদের প্রযোজিত নাটক ‘সেনাপতি’, ‘এখানে নোঙ্গর’, ‘ইবলিশ’, মাননীয় মন্ত্রির একান্ত সচিব’, মলকা বানু’, ‘ওদের ধরিয়ে দিন’ (মাষ্টার শাহ আলম রচিত) প্রমূখ।৩১
সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, শিমুন চক্রবর্তী, খোরশেদ আলম, বিপ্লব বিশ^াস প্রমুখের নেতৃত্বে ‘নাটক হোক গণমানুষের মুক্তির উচ্চারণ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ১২ ডিসেম্বর ১৯৯২ সনে ‘গণমুখ থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠিত হয়। গণমূখ থিয়েটার প্রযোজিত নাটকের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহানের নির্দেশনায় ‘তালতলার উপাখ্যান’, ‘যায় দিন ফাগুন দিন’, ‘মাদারীর খেলা’, ‘নাটকের শুরু’, ‘ক্ষুদিরামের দেশে’, ‘বানরের কিস্যা’, কবি অনুবাদক ও নাট্যকার বদরুজ্জামান আলমগীরের ‘পূণ্যাহ’ অবলম্বনে ও কামাল উদ্দিন কবিরের নিদের্শনায় ‘জীবন পশরা’, মমতাজ উদ্দিন আহমদ রচিত ও খোরশেদ আলম নির্দেশিত ‘স্বাধীনতার মূলমন্ত্র’, স্বপন ভট্টাচার্যের রচনা ও নির্দেশিত ‘সম্পর্কের আবর্তে’, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন নির্দেশিত ‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাঁচাল, এই পিরিতি সেই পিরিতি নই’, কবি আসিফ নূরের কবিতা ‘অমাবস্যা দেখিলে গাঁয়ের মাইন্ষে কয়’র ভাব অবলম্বনে সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন রচিত ও নির্দেশিত ‘অমাবস্যার হিস্যা’ নাটক প্রভৃতি। গণমুখ থিয়েটারের সংগঠক ও নাট্যাভিনয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, খোরশেদ আলম, শিমুন চক্রবর্তী, পরেশ কান্তি দে, তাপস চক্রবর্তী পিকলু, ঝুলন দাশ, আসিফ নূর, বশির আহমদ, আবছার উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন বাবুল, সেলিম হোসেন লিটন, বিপ্লব বিশ^াস, মরজিনা আক্তার, পীযুষ দাশ, কমল দাশ সাধন, মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, বাবুল পাল, আবীর বড়ুয়া, প্লাবন দাশ, জাবেদ আবেদিন শাহীন, অনুপম দাশ, রনি, রহমত উল্লাহ, আজিম, লিটন ধর, প্রদীপ দাশ, সুব্রত দাশ, শিপক কুমার নন্দী, নাসিমা আকতার বকুল, বিকাশ দাশ, বকুল, আবু সুফিয়ান রুমি, উত্তম পাল, আবু সায়েম ডালিম, রুবায়েত, শাহীন মাহমুদ, রেজাউল কবির বিবন, এবি ছিদ্দিক খোকন, এডভোকেট শাহাদাত হোসেন, গিয়াস উদ্দিন, কাউসার আজম বাবু, শাহজালাল বাবু, জয় দেব, মুনমুন চক্রবর্তী, খাইরুল হাসান মনি, উম্মে হাবিবা, আজিজ উদ্দিন, কাজল শর্মা, সাংবাদিক মাহবুবর রহমান, রিদুয়ান আলী, লিটন ধর, আবুল কাসেম লিটন, মেঘলা চৌধুরী, আবুল কাসেম, জরিনা আক্তার আঁখি, হাসিনা আক্তার, জোবায়দা আক্তার, সুভাষ ধর, তুষার ধর, সাজ্জাদ হোসেন শুভ, ফাতেমা আক্তার মার্টিন, শাহ মোহাম্মদ আবদুল হান্নান, রুপঙ্কুর বড়ুয়া রুপা, হাবিবা আক্তার, রুমি প্রভা দে, মোবারক আলী মনির, ফয়সাল মাহমুদ সাকিব, জয়নাব রহমান রাবু, অজয় মজুমদার, জুয়েল কুমার ধর, অধরা দাশ, সোহেলী আকতার মনি, দোলন দাশ, অলক চক্রবর্তী, আরেফিন, কাজল প্রমুখ।
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘শিল্পের জন্য নাটক’ স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয় থিয়েটার আর্ট কক্সবাজার। থিয়েটার আর্ট কক্সবাজার-এর প্রযোজিত নাটকের মধ্যে আফসার আহমদ রচিত ও মুসলেম উদ্দিন সিকদার নির্দেশিত ‘প্রেমপুরাণ, মান্নান হীরা রচিত ও মুসলেম উদ্দিন সিকদার নির্দেশিত ‘একজন লখিন্দর’, আমিনুর রহমান মুকুল রচিত ও মুসলেম উদ্দিন সিকদার নির্দেশিত ‘ফুলকুমারী’, জহির রায়হানের গল্প অবলম্বনে স্বপন ভট্টাচার্যের নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় এবং সহকারী নির্দেশক নজিবুল ইসলামের ‘বাঁধ ও বিশ^াসের দ্বন্দ্ব’, তৌফিক হাসান ময়না রচিত ও নজিবুল ইসলাম নির্দেশিত পথ নাটক ‘যুদ্ধ স্বাধীনতা’ প্রভৃতি। এসব নাটকে অভিনয় করেন আবুল কালাম আজাদ, দীপঙ্কর বড়ুয়া, দীপ্তি মহাজন, নজীবুল ইসলাম, আল্পনা দাশ, এমএম সাদেক লাবু, রিয়াজুল কবির, রবিউল ইসলাম সাহেদ, এআর ছিদ্দিকী ডালিম, তাহনুর বশির রানা, আরমানুল আজিজ, টুটুল পাল, সুশোভন বড়ুয়া মিন্টু, নকিবুল হুদা হিমু, পূর্ণিমা বড়ুয়া, পল্লবী দে, শাহানা হুদা রিমা, ওয়াহিদ মুরাদ সুমন, পার্থ বড়ুয়া রুমি, ওমর শরীফ ছিদ্দিক, শাওন আজিম, শহীদুল্লাহ শহীদ, মুবিনুল হক, ফায়সাল হুদা, শুভজিত রুদ্র, সুজন নাথ, লিমা বড়ুয়া, বিপ্লবী দে, রুমি দে, আনোয়ারা, মৃত্তিকা, অন্তিক চক্রবর্তী, আজিজ রিপন, সুদীপ্ত দে, শয়ন বিশ^াস, ছোটন দেব, সুপর্ণা বড়ুয়া লিখন, মুহাইমিন উল্লাহ রানিম প্রমুখ। ৩২
২০০৯ সালে নবীন-প্রবীণ একঝাঁক নাট্যকর্মীর অংশগ্রহণে রামু খিজারী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে মঞ্চায়ন করা হলো ঐতিহাসিক নাটক নবাব সিরাজদ্দৌল্লা। আশীষ কুমার ও মো. আলমের নির্দেশনায় নাটকটি প্রযোজনা করছে থিয়েটার রামু। শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা এ নাটকে সিরাজদ্দৌল্লা চরিত্রে অভিনয় করেন আশীষ কুমার। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন মাস্টার মোহাম্মদ আলম , রুমেল বড়ুয়া, সোলতানা রুমি, মৌমিতা সোলতানা, ঊর্মি বড়ূয়া, মোহাম্মদ ইউনুছ, নীলোৎপল বড়ুয়া ও বাবুল বড়ুয়া। আবহ সংগীতে ছিলেন মিজানুল হক। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন ইলক বড়ুয়া।
২০০১-২০২০ পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের নাট্য আন্দোলন, অভিনয়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ইউসুফ মুহাম্মদ শামশুল হুদা, অধ্যাপক অজিত কুমার দাশ, করিম উদ্দিন ইউসুফ, নুরুল হুদা চৌধুরী, ইকবাল মুহাম্মদ শামশুল হুদা, বিপুল সেন, কামরুল হাসান, এডভোকেট অরুপ বড়ুয়া তপু, মোহাম্মদ আলী জিন্নাত, রনজিত দাশ, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ, বাবুল পাল, জাহেদ সরওয়ার সোহেল, নজিবুল ইসলাম, নাছির উদ্দিন, পিকলো কান্তি দে, পরেশ কান্তি দে, সুশান্ত পাল বাচ্চু, দীপঙ্কর বড়ুয়া, দীপ্তি মহাজন, আল্পনা দাশ, দেলোয়ার হোসেন, এসএম সাদেক লাবু, রিয়াজুল কবির, রবিউল ইসলাম সাহেদ, এআর ছিদ্দিকী ডালিম, তাপস চক্রবর্তী পিকলু, ঝুলন দাশ, আসিফ নূর, বশির আহমদ, আবছার উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন বাবুল, সেলিম হোসেন লিটন, বিপ্লব দাশ, মরজিনা আক্তার, পীযুষ দাশ, মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, বাবুল পাল, আবীর বড়ুয়া, প্লাবন দাশ, অনিল দত্ত, তাহনুর বশির রানা, করিম উল্লাহ কলিম, রিপন বড়ুয়া অর্ণব, বদরুল আলম লিটন, রহমান মুফিজ, কল্লোল দে চৌধুরী, জয়ন্তী বড়ুয়া, কনিকা বিশ্বাস, দীপক শর্মা দীপু, তাপস বড়ুয়া, শামীম আক্তার, মানসী বড়ুয়া, রুমি দে, রিনা আক্তার, সোমা পাল, রিংকু বড়ুয়া, আবুল মনজুর, আজিজুল হক চৌধুরী, সৈয়দ হোসেন ডালিম, আবু বকর ছিদ্দিক খোকন, আবু দাউদ চৌধুরী রিপন, গিয়াস উদ্দিন মুকুল, নাজমুল করিম জুয়েল, শ্যামা পাল, জিকু, রহমান মুফিজ, হিল্লোল দাশ, অনিল দত্ত, নুরুল আলম সরকার, বশির আহমদ, মোজাম্মেল হক আজাদ, মুজিবুল হক আজাদ, জিয়াউল হক আজাদ, সিরাজুল কবির বুলবুল, শামসাদ রেজা মুন্নী, হারুন আল রশিদ, পারভীন আকতার, শিউলি আকতার, নুরুল হক, খোরশেদ আলম সুজন, মর্জিনা আকতার, সামিরা আকতার, জুলেখা বেগম, বুলবুল আকতার মনি, রেহেনা আকতার, নাসির উদ্দিন, আবু সুফিয়ান রুমি, রেজাউল কবির বিবন, এবি ছিদ্দিক খোকন, এডভোকেট শাহাদাত হোসেন, গিয়াস উদ্দিন, স্বপন দাশ, সঞ্জীব শর্মা, জহর লাল, উৎসব পাল, দীপক দাশ, পলাশ চৌধুরী, রিনা পাল,বীনা পাল, সেলিনা আকতার, খোকন বড়ুয়া, ললিত বড়ুয়া, উদার বড়ুয়া, মোহাম্মদ ইউনুস বাবুল, আবদুল খালেক, ডালিম বড়ুয়া, শহীদুল্লা কায়সার, মাহবুব কামাল হিমেল,রফিকুল ইসলাম বাবর, এসকে বোরহান, পিপলু বড়ুয়া, হেকিম জাফর, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, গিয়াস উদ্দিন, রিয়াজুল হক, মোসলেহ উদ্দিন, নাজিম উদ্দীন, ইদ্রিস, মো.হোসেন, নকিবুল হুদা হিমু, পূর্ণিমা বড়ুয়া, পল্লবী দে, শাহানা হুদা রিমা, ওয়াহিদ মুরাদ সুমন, পার্থ বড়ুয়া রুমি, ওমর শরীফ ছিদ্দিক, শাওন আজিম, শহীদুল্লাহ, ফায়সাল হুদা, লিমা বড়ুয়া, রহমত উল্লাহ, আজিম, লিটন ধর, প্রদীপ দাশ, সাধন দাশ, জাবেদ আবেদিন শাহীন, সুব্রত দাশ, নাসিমা আকতার বকুল, বিকাশ দাশ, বকুল, ফাতেমা আক্তার মার্টিন, ফাতিমা আক্তার শাহী, ইসমত আরা ইসু, শাহানা মজুমদার চুমকি, আমান উল্লাহ, রনি, কাউসার আহমেদ বাবু, শাহজালাল বাবু, জয় দেব, মুনমুন চক্রবর্তী, খাইরুল হাসান মনি, উম্মে হাবিবা, আজিজ উদ্দিন, কাজল শর্মা, সাংবাদিক মাহবুবর রহমান, রিদুয়ান আলী, লিটন ধর, আবুল কাসেম লিটন, আবুল কাসেম, জরিনা আক্তার, হাসিনা আক্তার, জোবায়দা আক্তার, সুভাষ ধর, আশুতোষ রুদ্র, ইব্রাহিম খলিল, আবু হানিফ, আবু দাউদ চৌধুরী রিপন, তাপস মল্লিক, গিয়াস উদ্দিন, সাজ্জাদ হোসেন শুভ, শিপক কুমার নন্দী, শাহ মোহাম্মদ আবদুল হান্নান, রুপঙ্কুর বড়ুয়া রুপা, হাবিবা আক্তার, রুমি প্রভা দে, সোমা দাশ, মহুয়া দাশ, কাঞ্চন, তনু, অসীম কুমার দাস, মোবারক আলী মনির, ফয়সাল মাহমুদ সাকিব, জয়নাব রহমান, অজয় মজুমদার, জুয়েল কুমার ধর অর্জুন, অধরা দাশ, সোহেলী আক্তার মনি, প্রবাল পাল, দোলন পাল, হারুন অর রশিদ, দেবাশীষ দাশ, সাইফুল ইসলাম আদর, সুজন শর্মা, সাইফুল ইসলাম কাজল, তছলিমা আকতার, মাহমুদুল হক মুন্না, মোহাম্মদ হানিফ, মহীউদ্দীন, কালাম আজাদ, শাহেদ আবুল আলা, আজিজ রিপন, আবিদা নুর চৌধুরী মুমু, বোরহান মাহমুদ, ইরশাদ ছিদ্দিকী মিশু, রুনা বড়ুয়া বাপ্পি, আবদুল নবী, মঞ্জু বড়ুয়া, লিটন দেবনাথ সৈকত, শহিদুল ইসলাম সাহেদ, আবু সুফিয়ান এনাম, আবদুল হামিদ তালুকদার, দীপক মল্লিক, জাকের হোসেন জাকের, জাহেদুল হক সুমন, ফাল্গুনী হৈমু,অজয় মজুমদার, মো. নাছির উদ্দিন, আজাদ মনসুর, আরাফাত সাইফূল আদর, আবুল কাসেম, সাইফুল ইসলাম কাজল, রিংকু বড়ুয়া, নারগিস আক্তার রনি, রিফাত হোসেন নির্যাস, রুনা আক্তার, কনা দাশ, লিটন কান্তি দে, মিন্টু, তাকবিন আক্তার কলি, মরিয়ম আক্তার, আবদুর রহিম, রফিক মাহমুদ, হোসেন মো. জুলু, ফরিদুল আলম, শায়লা শারমিন রনি, এস.এম.জসিম, ঈস্পিতা আবরার সুহা, রেহনুমা কামাল কাশপিয়া, হামিদা আক্তার সুমি, শাহেদ আবুল আলা, শেখ ফেরদৌস আক্তার রিমি, তছলিমা আকতার, জিয়ন্ত রাজু, মুরাদ, সিফাত আল নুর, অর্পা দাশ, সাহেদুল হক সাইমুন, কামাল উদ্দিন আরমান মানিক, মোঃ আবছার, সৌরভ শর্মা, আশফাক শাহরিয়ার, শাফকাত শাহরিয়ার, সুমাইয়া ফেরদৌসি, রুপন দাশ, সোহেল রানা, ফাতেমা জান্নাত লুমা, বিকাশ দাশ, ইনজামামুল হক, মুরাদ মুক্তাদীরু ত্বোহা, মুন্না দাশ, নুসরাত সিদ্দীকা, সোনারাম দাশ, কানজন দে, ব্রজ গোপাল রয়, আসিফ, বৃষ্টি ধর, প্রীতার্থী বৈদ্য প্রিতু, মিম আকতার তুই, আরিফুর রহমান ফাহিম, আরিফুল করিম, উম্মে হাবিবা উর্মি, সিফাত খান শান্ত, শ্রাবণ বড়ুয়া শান্ত, শ্রাবণী দাশ শাওলি, শতাব্দী বড়ুয়া তৃষা, সিফার আরা আইয়ুব, রীমা বড়ুয়া, প্রিতম পাল প্রিতু, সুজয় পাল জিতু, নবরাজ পাল প্রিয়ন, নন্দিনী পাল, জাফরিন আক্তার জয়া, মিথিলা সেন, পুজা চক্রবর্তী, সুষ্মিতা চৌধুরী, নওরিন হুদা অমি, বেবি আক্তার, মিথিলা সরকার, অনামিকা শীল, নাফিস মোহাইমিন, নাইমুল নাহিদ, সিরাজুল মোস্তফা জিসাদ, আফিয়া মুবাশ্বিরা মীম প্রমুখ।
কক্সবাজার জেলায় জন্মগ্রহণকারী যারা চলচ্চিত্র ও টিভি অভিনেতা হিসেবে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে একালের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র খলনায়ক ইলিয়াস কোবরা, চলচ্চিত্র অভিনেতা ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম, খালেদ মনসুর চৌধুরী (বাজারঘাটা, কক্সবাজার), নাট্যাভিনেতা কাউসার চৌধুরী, জসীম উদ্দিন বকুল, নজরুল ইসলাম বক্সী, আবু হায়দার ওসমানী, পরেশ কান্তি দে, জসিম উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম কাজল, জাহেদ সরওয়ার, দিদার, জয়নাল জ্যাক (উখিয়া),রাফাহ নানজেবা তুরসা (কুতুবদিয়া) প্রমুখ।৩৩
কক্সবাজারে দেশী বিদেশী সাহিত্যের বিখ্যাত লেখকদের গল্প, উপন্যাস, কাব্যের রুপান্তর এবং নাট্যরূপ কিংবা দেশের বিখ্যাত লেখকদের নাটকসহ ঐতিহাসিক নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি কক্সবাজারের সন্তানেরা নিজেরা মৌলিক নাটক লিখে নাটক মঞ্চায়নও করেছেন। স্বাধীনতাপূর্ব তথা ১৯৬৭ সালে ওস্তাদ নুরুল মুক্তাদিরের রচনায় ও নির্দেশনায় ‘শপথ’, ‘আশার মানিক’ ১৯৬৭ সালে কক্সবাজার হাই স্কুলে মঞ্চায়িত হয়।
১৯৭৬ সালে অধ্যাপক মুফীদুল আলম রচিত প্রযোজিত ও নির্দেশিত মৌলিক নাটক ‘কবন্ধ’ ও ‘লাবণী পয়েন্ট’ হিন্দি সাহিত্যের দিকপাল কৃষ্ণ চন্দ্রের গল্প অবলম্বনে রচিত ‘পাষাণ’ নাটকটি বর্তমান জেলে পার্কে প্রদর্শনী মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়।
কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান ব্যাংকর খোরশেদ আলম বেশ কয়েকটি নাটক লিখেন এবং সেগুলো মঞ্চায়নও করেন বিভিন্ন সময়ে। খোরশেদ আলম রচিত ও নির্দেশনায় ‘আদম সুরত’ ‘আলীমুদ্দীনের দুঃস্বপ্ন, ‘পৃথিবীর ঘরে ঘরে’, ‘মানবো না এ বন্ধনে’, ‘বোমা’ ও আদম সুরত’। ‘মানবো না এ বন্ধনে’, ‘বোমা’ নাটকদ্বয় এরশাদবিরোধী পথনাটক। এ নাটক মঞ্চায়ন করতে পুলিশের তাড়াও খেতে হয়েছে।
মাস্টার শাহ আলম উখিয়ার কৃতি সন্তান। একাধারে কবি, গল্পকার ও নাট্যকার। তিনি বেশ কয়েকটি নাটক নিজে রচনা করে উখিয়া, কক্সবাজার, রামু, চকরিয়া এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাটক মঞ্চায়ন করেছেন। মাস্টার শাহ আলম রচিত ও নির্দেশিত মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘কবরের বুকে হিজল তরু’ (১৯৮৬), ‘একটি তারা একটি গোলাপর’ (১৯৮৮), ‘শুকনো ক্ষতে রক্ত’ (২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯), ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের কঙ্কাল’ (২৬ মার্চ ১৯৯১), ‘অতঃপর ধানের শীষ’ (১৬ ডিসেম্বর ১৯৯২), ‘শয়তানের কামড় ’( ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২), আত্মসমর্পণ (১৫ জানুয়ারি ১৯৯৩), ‘একাত্তরের মলিন জ্যোতিস্ক’ (১৬ ডিসেম্বর ১৯৯৩) ওদের ধরিয়ে দিন’ (১৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭), ‘মাথিনের প্রেম কাহিনী’ (২২ ডিসেম্বর ১৯৯৭), ‘সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ চাই’ (১৯৯৮), ‘আন্তর্জাতিকতায় সমৃদ্ধ একুশ’ (২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯), ‘রমজানের স্বপ্ন’ (১৯ জানুয়ারি ২০০৬), ‘আরকাইন্যা সুন্দরী’ (২৮ আগস্ট ২০০৮ ), ‘হাইস্যা বর হাতের লাঠি’ (৮ আগস্ট ২০০৯), ‘বিয়া হা গরালী’ (২০০৮), হাজেরার পিরিতি (২০০৭) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
মাস্টার শাহ আলমের রচনায় ও পরিচালনায় বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজারে প্রচারিত নাটিকার মধ্যে ‘অভিবাদন (২০১৪, ‘শোকাহত বাংলা’(২০১৪), কমিউনিটি ক্লিনিক (২০১৪), ‘আলোয় অবগাহন’ (২০১১), ‘বিচার চাই’ (২০১২), ‘তইলে বাজি আঁই নাই ’(২০১৪)।
পরেশ কান্তি দে রচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক শিশুতোষ নাটক ‘সূর্য্যরে সন্ধানে’ (১৯৯২) ঝিনুকমালা খেলাঘর আসরের সম্মেলনে মঞ্চায়ন করে বেশ খ্যাতি অর্জন করেন।
মোহাম্মদুল হক ভাইয়া আঞ্চলিক নাটক ‘পানওয়ালী’ ও ‘বার্মাইয়া সুন্দরী’ রচনা করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। আ.স.ম. শাহরিয়ার রচিত ‘মুকুট বিড়ম্বনা’ (১৯৯৩) নাটকটি কুতুবদিয়ায় মঞ্চায়িত হয়।
এইচ এম রিয়াজ শহীদ নির্দেশিত গীতি আলেখ্য ‘বকুলপুরের স্বাধীনতা, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন রচিত ‘মহারাণীর কাণ্ড’ (২০০৪), জসিম উদ্দীন রচিত ও নির্দেশিত ‘একাত্তরের শকুন’ (২০১১), ‘জাতিশত্রু, ‘দূরে আলো’। কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার কাব্যোপন্যাস ‘নীল সমুদ্রের ঝড়’ এর নাট্যরূপ দেন স্বপন ভট্টার্চার্য, স্বপন ভট্টাচার্যের রচনা ও নির্দেশিত ‘সম্পর্কের আবর্তে’, স্বপন ভট্টাচার্য এর রচনা ও নির্দেশিত ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ কক্সবাজার সিটি কলেজে পরিবেশিত হয়। কক্সবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা স্বপন ভট্টাচার্য রচিত ও নির্দেশিত ‘মনবৈরি’, ‘আত্মদহন’, পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ, মমতাজ উদ্দীন আহমদ রচিত ও খোরশেদ আলম নির্দেশিত নাটক ‘স্বাধীনতার মূলমন্ত্র’ গণমুখ থিয়েটারের উদ্যোগে পরিবেশন করা হয়।
আবদুল মতিন আজাদ রচিত ও নির্দেশিত ‘স্বাধীনতা একটা রক্তাক্ত বিলাপ’ ‘চাঁদকুমারী’ এবং ‘এই সেই কণ্ঠস্বর’। আবদুল মতিন আজাদের আঞ্চলিক নাটক ‘চাঁদকুমারী’ কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ১৪৫তম সফল মঞ্চায়ন করা হয়।
কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার মৌনকুমারী, জন্মজাতি এবং আমরা তামাটে জাতি’ অবলম্বনে কামরুল হাসান রচিত ও নির্দেশিত ঝিনুক নাট্যকেন্দ্রের মৌলিক নাটক ‘মৌন কুমারী ও তামাটে কিশোর’ (১৯৯৪), ‘মোক্তার বলি ও নাফকন্যা ম্যামাচিং’ (২০১০) ও মুক্তিযুদ্ধ ফিরে ফিরে ডাকে (২০১৯)।
দীপক শর্মা দীপুর রচিত শ্রী কৃষ্ণ লীলা (২০০৪), জসিম উদ্দিন বকুল রচিত ‘সূর্য উড়ের ভাই লাল মারি’ (২০০৫)।
কক্সবাজারের প্রগতিশীল কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী রহমান মুফিজের রচনায় ও নির্দেশনায় ‘কান্তি দাশ’ নাটক, গীতিনৃত্য নাট্য ‘দইজ্জার ফুল (২০০৬), পথ নাটক ‘মানুষ জাগবে ফের (২০০৬), ‘জাতিস্মর সাম্পান’ উদীচীর নাটক বিভাগের উদ্যোগে মঞ্চায়িত হয়।
২০১০ সালে কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পরেশ কান্তি দে এর রচনায় ও নির্দেশনায় ‘সখিনার একাল- সেকাল’ নাটক মঞ্চায়ন করা হয়।
কবি আসিফ নূরের কবিতা ‘অমাবস্যা দেখিলে গাঁয়ের মাইন্ষে কয়’র ভাব অবলম্বনে সত্যপ্রিয় চৌধুরী দৌলনের রচনা ও নির্দেশনায় ‘অমাবস্যার হিস্যা’ নাটক মঞ্চায়িত হয়।
(বিঃদ্রঃ-এ লেখা প্রস্তুত করতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও লেখকের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁদের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক বক্ষমান নিবন্ধটি সাজানো হয়েছে। তারপরও অসতর্কতা কিংবা অন্য কোন কারণে তথ্য/তত্ত্ব/উপাত্ত বাদ কিংবা ভুল হয়ে থাকে, তাহলে লেখকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হল। (০১৮১৪৪৯৫৪৬৬)
দোহাই-
১. হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ‘কক্সবাজারের ইতিহাস’, ৩০ জুন ১৯৯০, কক্সবাজার : কক্সবাজার ফাউন্ডেশন, পৃ. ১০৯।
২. অভিজিৎ সেনগুপ্ত, ‘বাংলাদেশে গ্রুপ থিয়েটার চর্চা’, থিয়েটার ওয়ালা, জানুয়ারি-জুন ২০০৭, পৃ. ২৩।
৩. হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ‘কক্সবাজারের ইতিহাস’, ৩০ জুন ১৯৯০, কক্সবাজার : কক্সবাজার ফাউন্ডেশন, পৃ. ১০৯।
৪. বদিউল আলম, কক্সবাজার পাবলিক ইনস্টিটিউটের ইতিহাস, ‘নয়ান’ বর্ষ ১, সংখ্যা-১, ডিসেস্বর ১৯৮৭, পৃ. ১০।
৫. হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ‘কক্সবাজারের ইতিহাস’, ৩০ জুন ১৯৯০, কক্সবাজার : কক্সবাজার ফাউন্ডেশন, পৃ. ১০৯।
৬. এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, ২৯ জানুয়ারি ২০১০, কক্সবাজার।
৭. অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন, ‘কক্সবাজারের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে টেকপাড়া বয়েজ ক্লাব’, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, আজকের কক্সবাজার বার্তা।
৮. রফিক উদ্দিন বাবুল, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে উখিয়া, পালঙ, ১৯৯৭, উখিয়া : উখিয়া প্রেস ক্লাব, পৃ. ২৪।
৯. সুশীল ব্রহ্ম¥চারী ও বিপুল সেন, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, ১২ অক্টোবর ২০১৬।
১০. অধ্যাপক মুফীদুল আলম, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১০, সঙ্গীতায়তন, কক্সবাজার।
১১. ড. জাফার আহমাদ হানাফী, ‘স্বাধীনতার পূর্বাপর : কক্সবাজার নাটক মঞ্চায়নের ইতিহাস, উর্মি, জুন ১৯৯৬, কক্সবাজার : কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, পৃ. ৪৭।
১২. প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, ‘কক্সবাজারের রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ’, এপ্রিল ২০১৮, চট্টগ্রাম : প্রজ্ঞালোক প্রকাশনী, পৃ. ৯১।
১৩. আশীষ ধর ও তৌহিদুল আলম, কবি ও গল্পকার।
১৪. রিয়াজ শহীদ ও অনিল দত্ত।
১৫. খালেদ মাহবুব মোর্শেদ, কবি ও শিক্ষক।
১৬. মাস্টার শাহ আলম, কবি-নাট্যকার। ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ১০ মার্চ ২০০৮, উখিয়া সাহিত্য কুুটির।
১৭. প্রফেসর সুকুমার দত্ত ও কবি মানিক বৈরাগী।
১৮. হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ‘কক্সবাজারের ইতিহাস’, ৩০ জুন ১৯৯০, কক্সবাজার : কক্সবাজার ফাউন্ডেশন, পৃ. ১১০।
১৯. আবদুল মতিন আজাদ, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, তাপস রক্ষিত, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, কক্সবাজার।
২০. ড. জাফার আহমাদ হানাফী, ‘স্বাধীনতার পূর্বাপর : কক্সবাজার নাটক মঞ্চায়নের ইতিহাস, বিজয় স্মারক ২০১২, ১৬ ডিসেম্বর ২০১২, কক্সবাজার: কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পৃ. ১১০।
২১. রহমান মুফিজ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ব্যক্তিগত
২২. জাহেদুল হক সুমন, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, উদীচী, কক্সবাজার সরকারি কলেজ সংসদ।
২৩. পরেশ কান্তি দে, শিক্ষক-নাট্যকর্মী এবং প্রাক্তন কৃতি ফুটবলার। ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ২৫ মার্চ ২০২০।
২৪. মাস্টার শাহ আলম, কবি-নাট্যকার। ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ১০ মার্চ ২০০৮, উখিয়া সাহিত্য কুুটির।
২৫. পরেশ কান্তি দে, শিক্ষক-নাট্যকর্মী এবং প্রাক্তন কৃতি ফুটবলার। ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ২৫ মার্চ ২০২০
২৬. আবুল কালাম আজাদ, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক চর্চা, ১৬ ডিসেম্বর ২০১২, দৈনিক আজকের দেশবিদেশ।
২৭. খালেদ মাহবুব মোর্শেদ, কবি ও শিক্ষক।
২৮. পরেশ কান্তি দে, শিক্ষক-নাট্যকর্মী এবং প্রাক্তন কৃতি ফুটবলার। ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ২৫ মার্চ ২০২০।
২৯. ইউসুফ ইকবাল, ‘স্বাধীনতা-উত্তর চট্টগ্রামের নাট্যসাহিত্য’, আকাশ মাহমুদ, শাহ আলম নিপু এবং জাহেদুল আলম সম্পাদিত ‘কালধারা’ (চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা), সেপ্টেম্বর ২০০৬, পৃ. ১৫৬।
৩০. অরুপ বড়ুয়া তপু, কক্সবাজার বার সমিতি ভবন, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ১ অক্টোবর ২০০৯।
৩১. একেএ ফরিদ আহমদ, তাপস চক্রবর্তী পিকলু।
৩২. নজীবুল ইসলাম, দৈনিক কক্সবাজার কার্য্যালয়, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ৩ অক্টোবর ২০১৭।
৩৩. কালাম আজাদ, কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল, দৈনিক পূর্বকোণ, ২১ এপ্রিল ২০০৯।
[…] কক্সবাজারের নাট্যচর্চা […]