সবচেয়ে পবিত্র ও মধুর শব্দের নাম ‘মা’। মায়ের ভালোবাসা পেতে প্রয়োজন হয় না ভালোবাসি বলা। সুখে-দুঃখে প্রতিটি সময় মায়া স্নেহ ভালোবাসায় যিনি জড়িয়ে রাখেন, তিনিই মা। বিশ্ব মা দিবস আজ। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব মা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যদিও মাকে ভালোবাসা-শ্রদ্ধা জানানোর কোন দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না- তবুও মাকে গভীর মমতায় স্মরণ করার দিন আজ। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছে। যদিও করোনার কারণে এবার দিবসটিতে কোন আনুষ্ঠানিকতা দেখা যাবে না। তাই বলে ঘরে ঘরে মায়ের ভালবাসা কুড়াতে কার্পণ্য করবে না, কোন সুসন্তান। জগতে মায়ের মতো এমন আপনজন আর কে আছে! তাই প্রতি বছর এই দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় প্রিয় মায়ের মর্যাদার কথা। আজকের এ মা দিবসকে সামনে রেখে রাইজিং কক্স পক্ষ থেকে জানাই মা দিবসের শুভেচ্ছা। সাথে মা দিবসে ‘মা’ নিয়ে লেখা কবিতা-ছড়া রাইজিং কক্স এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
মা
মজিদ মাহমুদ
এখানে আসার পরে ইচ্ছে করছে মায়ের কাছে যেতে
সম্ভবত আমি হারিয়ে ফেলছি দিনের ক্লিষ্ট স্মৃতি
হয়তো নির্ভরতা, কেউ আমাকে তুলে নেবে কোলে
অনেক দিয়েছি হামাগুড়ি, ছিলাম কাদা ও জলে লেপ্টে
সাঙ্গ খেলাধুলা, খেলার বৌ ও ছেলেপুলে রেখে
আমাকে মায়ের কাছে ফিরে যেতে হবে
মনে হচ্ছে এসে গেছে সময়, মস্তিস্ক করছে না কাজ
বালিকা বঁধুদের শরীরের বিভেদ পাচ্ছি না টের
চিহ্নের পার্থক্য থাকলেও ফুরিয়েছে ব্যবহার যোগ্যতা
যারা ভুলিয়ে রেখেছিল সাময়িক আনন্দে, স্পর্শে
তারা কি কেউ দিয়েছিল একবিন্দু তৃষ্ণার জল
যদিও তারা ছিল মায়ের রেপ্লিকা
সন্ধ্যার আগেই তারা আমায় রেখে করেছে গৃহত্যাগ
তাদের রয়েছে নিজস্ব সন্তান, নেই সান্নিধ্যের প্রয়োজন
কেনই বা দিচ্ছি দোষ, তাদেরও আছে ফেরার ভয়
অথচ রেখে যাওয়ার আগে মা কতবার করেছিল বারণ
যদিও অবোধ শুনিনি আমি, তবু জেনে গেছি
কাদা ও পানিতে পিছলে গেলে, এমনকি আগুন ও সমুদ্র
যেখানেই যাই, ঘুমানোর জন্য ফিরতে হবে তার কোলে
এখন পাচ্ছি টের, এখন আমার ঘুমিয়ে পড়ার সময়
ভুলে গেছি নাম, শব্দের মানে, আয়তনের আপেক্ষিকতা
মেয়ে বন্ধুদের স্মৃতি ভুললে এখনো সম্ভব মাতৃদুগ্ধ পান
জানি মা শরীরে ধরলে হবে না দেহের ক্ষয়।
জন্মসত্য
কাজী বর্ণাঢ্য
বের হতে হতে ভিতর ভুলে গেছি
ভিতরে রন্ধনশালা
মা রান্না করছেন জন্মসত্য।
বাইরে হাঁটতে হাঁটতে ভুলে গেছি
পায়ের নিচে শৈশবমাটি।
নদীর ধারায় মা রান্না করছেন ভুবনযন্ত্রনা
পেঁয়াজ বাটা আর ধোঁয়া তাড়ানোর ভান করে
চোখের স্নেহে নিভাচ্ছেন চুলো।
মা জানেন না
আগুন কখনো নিভে না
আগুনের দৃশ্য নিভে যায়।
মা ও মৃত্তিকা
শাহিদ উল ইসলাম
তোমার রক্তপানে আমার দেহ সতেজ সবুজ
আর লাবন্যময় রুপ ধারন করে;
অন্যদিকে তুমি ক্রমাগত নুয়ে পড়
ধাবিত হও মৃত্তিকার দিকে মৃত্তিকার ডাকে।
ক্ষসে পড়ে তোমার রুপ লাবন্য
অথচ তুমি একটিবারের জন্য অভিশাপ দাওনা আমায়
বরং সযত্নে জড়িয়ে নাও তোমার ঐ মায়াময় আঁচলে
যদিও সে আঁচল অপবিত্র করি অধম শাবক আমি
তথাপিও তুমি আমায় পবিত্রতার দিকে ধাবিত কর।
আমার মন্ডু আকাশ স্পর্শ করে
এবং ঝাও বৃক্ষের মত নড়েচড়ে উঠে-
আমার বাউন্ডুলে স্বভাব তোমাকে পীড়া দেয়
তবু সেজদায় পড়ে বিধাতার কাছে বর চাও
সেও আমার জন্য; আমারই মঙ্গল কামনায়।
আমার শত অনাচার অবিচার
তুমি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি দিয়ে দেখ এবং
তোমার আঁচলে মুছে দাও আমার
যতসব শত অপরাধ আবর্জনা!
ঋণের ভারে ন্যুজ এই আমি
যদি তোমার চরণ
জিহ্বা দিয়ে পরিষ্কার করি
তবুও শোধ হবার নয়।
বিশালতা
শেখর দেব
মাকে নিয়ে লিখতে চেয়েছি কতো কাব্য গান
ভাবতে বসেই বুকের ভেতর আচমকা এক টান।
টানের মাঝেই থাকি শুধু যায় না কিছুই করা
কতো বড় মা গো তুমি দাও না লেখায় ধরা!?
১০.০৫.২০২০, কাপ্তাই, রাঙামাটি।
মা এক সুরঙ্গ পথ
রওনক জাহান
মানুষের জন্মসূত্র খুঁজতে গেলাম
দেখলাম একটা শীতল প্রস্রবণ
কেউ একজন বললো ‘এটাই আমাদের জন্মের সূতিকাগার!’
আমি ভক্তিভরে তার চারপাশ প্রদক্ষিণ করলাম একবার
ঐযে সেতুপথ যার ভেতর থেকে বাহিরমুখী একটা সুড়ঙ্গ
সেই হা-মুখ সুরঙ্গ ভেদ করেই মানুষ পৃথিবীতে আসে!
প্রস্রবণে আমার রক্তমাংসের আপাদমস্তক শরীর ডুবিয়ে দেই এখন
মা সেই প্রস্রবণ! মা এই সুরঙ্গপথ যার ভেতর দিয়ে পৃথিবীতে মানুষের আগমন
সহজ অনুভূতি
কালাম আজাদ
খুব সহজেই প্রমাণ করা যায় নিউটনের সূত্রসমুহ
আর্কিমিডিস কিম্বা প্যাসকেলের তরলের ছাপ
মাদামকুরীর রেডিয়ামের উজ্জ্বলতা
ধরা পড়ে সহজ দৃষ্টিতে
কিংবা ব্যাখ্যা করা যায়
কেন ভাসে লোহার জাহাজ বিশাল সমুদ্রের বুকে
আগ্নেয়গিরির অগ্নৎপাতের কথা জেনেছি ভূগোলে
‘‘স্যাটনিক ভার্সেস’’ লিখে
কেন রোষের শিকার হলেন সালমান রুশদী
এসব উন্মোচিত হয় ক্রমশ
দিনে আলোর মত সহজেই
সব বোঝা যায়, জানা যায়
যায় না বোঝানো একটি সহজ অনুভুতি
মা, ভালবাসি তোমায় কতখানি
মা
শাহীন আবদুর রহমান
মধুর চেয়েও অধিক মধুর
নামটি তোমার ‘মা’
জগৎ জুড়ে হয় না মাগো
তোমার তুলনা।
স্বপ্ন কি’বা জাগরণে
তোমার ছোঁয়ায় বাঁচি
এমনি রবো সারাজীবন
খোদার কাছে যাচি।
জানি তোমায় হয়নি বলা
ভালবাসি কতো-
তবুও জানি তোমার দোয়ায়
আছি অবিরত।
Leave a Reply