কালাম আজাদ
বাঙালি জাতি চির দুর্বার, চির দুর্মর। যুগে যুগে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে। শক্তিবলে অসম হলেও তারা ব্রিটিশদের সামনেও কখনো মাথা নত করেনি। পাকিস্তানি শোষক গোষ্ঠীর দুঃশাসন, অত্যাচারে জর্জরিত বাঙালি দৃঢ়কণ্ঠে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছে। বায়ান্নের হার না মানা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে নিজেদের মাতৃভাষার অধিকার। ধীরে ধীরে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে গেছে স্বাধিকার আন্দোলনের দিকে। এ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলার মাটিকে চিরতরে স্বাধীন করার বীজ বপন করা হয় ১৯৬৬ সালের ছয় দফার দাবির মধ্য দিয়ে।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের নেতারা আইয়ুব খান বিরোধী একক বিরোধী দলীয় মোর্চা গঠনের লক্ষ্যে এবং দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লাহোরে ১৯৬৬ সালের ৫ এবং ৬ ফেব্রুয়ারি নিখিল পাকিস্তান জাতীয় কনফারেন্স আহ্বান করেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন (১৮৯৩-১৯৭৪) এর এনডিএফ, মুসলিম লীগ (কাউন্সিল), জামায়াতে ইসলাম, নেজাম ইসলাম ও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর (১৯০৫-১৯৮২) বাসভবনে কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আফজালের সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। সাবজেক্ট কমিটির মিটিংয়ে শেখ মুজিব প্রথমে এই সম্মেলনে যোগদানে অসম্মতি জানালেও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের অনুরোধে অবশেষে মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, তাজউদ্দিন আহমদ (১৯২৫-১৯৭৫), এএইচএম কামরুজ্জামান (১৯২৬-১৯৭৫), জহির উদ্দিন, হাফেজ হাবিবুর রহমান, আবদুল মালেক উকিল (১৯২৪-১৯৮৭), নুরুল ইসলাম চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী (১৯২৮-২০০৬) ও এবিএম নুরুল ইসলামসহ দশ সদস্যের আওয়ামী লীগের পূর্ব পাকিস্তান কমিটির প্রতিনিধি দল নিয়ে ওই সম্মেলনে যোগদান করে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন । কিন্তু ওই কনভেনশনে ৬ দফা গৃহীত হয়নি। ওই সম্মেলনের আয়োজকেরা শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ৬ দফা নিয়ে কোনো প্রচার-আলোচনা করতে রাজী হয়নি। এমনকি পূর্ব বাংলার ফরিদ আহমদের মতো জাতীয় নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত এতে আপত্তি তুলেন। শেখ মুজিব ও তার সহকর্মীরা ব্যতিত পূর্ব বাংলার অধিকাংশ তথাকথিত নেতার ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন। পরদিন ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্টায় পূর্ব বাংলার তথাকথিত বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতার দৃষ্টিতে লাহোরের জাতীয় সম্মেলন’ শীর্ষক শিরোনামের রিপোর্টে একটি চিত্র তুলে ধরা হয়। খবরটিতে মৌলভী ফরিদ আহমদের দৃষ্টিতে লাহোর জাতীয় সম্মেলন পর্বে উল্লেখ করা হয়।
‘গতকল্য ফরিদ আহমদ ঢাকার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, লাহোর জাতীয় সম্মেলনে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে শ্রীঘ্রই দেশব্যাপী এক ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশের ৪টি বিরোধী দল ও দেশের নির্দলীয় বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ একই প্ল্যাটফরমে হইতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শুরু করিতে সম্মত হইয়াছেন।
জনাব ফরিদ আহমদ লাহোর জাতীয় সম্মেলনে যোগদানের পর গত মঙ্গলবার ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন। পরদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন যে, জাতীয় সম্মেলন সম্পূর্ণ সফল হইয়াছে। কারণ পশ্চিম পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকা ছাড়া প্রতিটি তহশীল হইতে এই সম্মেলনে প্রতিনিধি যোগদান করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, সম্মেলনে মূলত দুইটি প্রধান বিষয়ের উপর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রথমত দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করাকে সম্মেলনে সর্বাপেক্ষা প্রাধান্য দেওয়া হইয়াছে। দ্বিতীয়ত জাতীয় সম্মেলনে তাসখন্দ ঘোষণাপত্র সম্পর্কেও আলোচনা করা হইয়াছে। সম্মেলনে এই ঘোষণাপত্রকে সমর্থন করিতে পারে নাই। কারণ সম্মেলন মনে করে যে, তাসখন্দ ঘোষণাপত্রে কাশ্মীরের দাবীকে চিরতরে শিকায় তুলিয়া দেওয়া হইয়াছে এবং জাতীয় মর্যাদার বিনিময়ে এই ঘোষণাপত্র অর্জন করিয়াছে।
এই পর্যায়ে জনৈক সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে জনাব ফরিদ আহমদ বলেন যে, দুই দিবসব্যাপী সম্মেলনের যে অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল যোগদান করে নাই। আওয়ামী লীগ দলের এই অধিবেশন বর্জনের কারণ জানিতে চাহিলে জনাব ফরিদ আহমদ বলেন, তাসখন্দ ঘোষণাপত্র সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সঠিক সিদ্ধান্ত না থাকায় তাহারা অধিবেশনে উপস্থিত হতে পারে নাই।
ফরিদ আহমদের এই বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, লাহারের তথাকথিত জাতীয় সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য পূর্ব বাংলার জন্য কল্যাণকর ছিল না। আর এ সম্মেলনে শেখ মুজিব যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন সে সম্পর্কে ফরিদ আহমদের মতো অদূরদর্শী নেতা কটাক্ষ করে তাচ্ছিল্যভাব প্রদর্শন করলেও জনগণ তার ভূমিকায় সন্তুষ্ট হয়। তাসখন্দ চুক্তির বিরোধিতায় শেখ মুজিব অংশ নেন নি এই কথাই শুধু এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ফরিদ আহমদ উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তিনি কেন অংশ নেননি তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে ফরিদ আহমদ ব্যর্থ হয়েছেন।
লাহোরের জাতীয় সম্মেলন পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপই করেনি। তারা একতরফাভাবে ইসলামী গণতন্ত্র রক্ষার সংকল্প প্রকাশ করে পূর্ব বাংলার দাবিকে ধামাচাপা দিয়েছে। এ বিষয়ে পূর্ব বাংলার তথাকথিত বিরোধী দলীয় কতিপয় নেতাও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন, এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কক্সবাজারের সন্তান মৌলভী ফরিদ আহমদ এর সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই তা সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়। মৌলভী ফরিদ আহমদেরা পূর্ব পাকিস্তানবাসীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও কিন্তু শেখ মুজিব পূর্ব বাংলার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেননি এবং পারেননি বলেই পূর্ব বাংলার স্বার্থবিরোধী লাহোর জাতীয় সম্মেলনের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে লাহোর থেকে করাচী হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় ফিরে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
১৯৬৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের নিকট ৬ দফা কর্মসূচি তুলে ধরেন। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সভাপতি মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ অসুস্থ থাকায় দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের (১৯২৬-১৯৭৫) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় বেশ কিছু সদস্য ৬ দফা কর্মসূচী তাদের সাথে কেন আলোচনা করে দেয়া হয়নি সে ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমানকে দোষারোপ করতে থাকে। ওই সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দোষারূপের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে বিরক্ত হয়ে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ ও জহুর আহমেদ চৌধুরী ওঠে দাঁড়িয়ে টেবিল চাপড়ে হুংকার দিয়ে ঘোষণা দেন যে, ‘মুজিব ভাই, ওয়ার্কিং কমিটি অনুমোদন করুক বা না করুক তাতে কিছু আসে যায়না-আমরা দু’জন ৬ দফাকে মেনে নিয়ে পূর্ব বাংলার ঘরে ঘরে যাবো। আমরা ৬ দফার পক্ষে আছি।’ আজিজ-জুহুরের এ হুমকিতে ভীত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাক্তন সহ-সভাপতি রাজশাহীর মুজিবুর রহমান সহ বিরোধিতাকারীরা চুপসে যায়। পরে সর্বসম্মতিক্রমে ওই ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ৬ দফার অনুমোদন হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা নিম্নরূপ
১নং দফা
ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা করতঃ পাকিস্তানকে একটি সত্যিকার ফেডারেশনরূপে গড়িতে হইবে। তাহাতে পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকার থাকিবে। সকল নির্বাচন সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের সরাসরি ভোটে অনুষ্ঠিত হইবে। আইন সভাসমূহের সার্বভৌমত্ব থাকিবে।
২ নং দফা
ফেডারেশন সরকারের এখতিয়ারে কেবলমাত্র দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্রীয় ব্যাপার এই দুইটি বিষয় থাকিবে। অবশিষ্ট সমস্ত বিষয় স্টেটসমূহের (বর্তমান ব্যবস্থায় যাকে প্রদেশ বলা হয়) হাতে থাকিবে।
৩নং দফা
এই দফায় দুটি বিকল্প বা অল্টারনেটিভ প্রস্তাব আছে। এই দুইটি প্রস্তাবের যে কোনও একটি গ্রহণ করলেই চলিবে:
ক. পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুইটি সম্পুর্ণ পৃথক অথচ সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রার প্রচলন করিতে হইবে। এই ব্যবস্থা অনুসারে কারেন্সী কেন্দ্রের হাতে থাকিবে না, আঞ্চলিক সরকারের হাতে থাকিবে। দুই অঞ্চলের জন্য দুইটি স্বতন্ত্র ‘স্টেট’ ব্যাংক থাকিবে।
খ. দুই অঞ্চলের জন্য একই কারেন্সী থাকিবে। এ ব্যবস্থায় মুদ্রা কেন্দ্রের হাতে থাকিবে। কিন্তু এ অবস্থায় শাসনতন্ত্রে এমন সুনির্দিষ্ট বিধান থাকিতে হইবে যাহাতে পূর্ব পাকিস্তানের মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হইতে না পারে। এই বিধানে পাকিস্তানের একটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থাকিবে; দুই অঞ্চলে দুইটি পৃথক রিজার্ভ ব্যাংক থাকিবে।
৪নং দফা
সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, কর ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থকিবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। ফেডারেল সরকারের সে ক্ষমতা থাকিবে না। আঞ্চলিক সরকারের আদায়ী রেভিনিউয়ে নির্ধারিত অংশ আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ফেডারেল তহবিলে অটোমেটিক্যালি জমা হইয়া যাইবে। এই মর্মে রিজার্ভ ব্যাংকসমূহের উপর বাধ্যতামূলক বিধান শাসনতন্ত্রেই থাকিবে। এইভাবে জমাকৃত টাকাই ফেডারেল সরকারের তহবিল হইবে।
৫নং দফা
এই দফায় বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাপারে নিম্নরূপ শাসনতান্ত্রিক বিধানের সুপারিশ করিয়াছি :
১। দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক পৃথক হিসাব রাখিতে হইবে
২। পূর্ব পাকিস্তানের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পূর্ব পাকিস্তানের এখতিয়ারে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানের এখতিয়ারে থাকিবে
৩। ফেডারেশনের প্রয়োজনীয় বিদেশী মুদ্রা দুই অঞ্চল হইতে সমানভাবে অথবা শাসনতন্ত্রে নির্ধারিত হারাহারি মতে আদায় হইবে
৪। দেশজাত দ্রব্যাদি বিনা শুল্কে উভয় অঞ্চলের মধ্যে আমদানী রফতানী চলিবে
৫। ব্যবসা বাণিজ্য সম্বন্ধে বিদেশের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের, বিদেশে ট্রেড মিশন স্থাপনের এবং আমদানী রফতানী করিবার অধিকার আঞ্চলিক সরকারের হাতে ন্যস্ত করিয়া শাসনতান্ত্রিক বিধান করিতে হইবে।
৬ নং দফা
জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আাঞ্চলিক সরকারের ওপরে মিলিশিয়া বা প্যারা-মিলিটারি বাহিনী গঠনের ক্ষমতা ন্যস্ত করতে হবে।
আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি মুখ্যত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে শংকিত করে তুলে। শেখ মুজিব ৬ দফা কর্মসূচিকে ‘আমাদের (বাঙালির) বাঁচার দাবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা নিয়ে পূর্ব বাংলার জনগণের দরবারে হাজির হন। শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ছয় দফা দাবি বাঙালি জাতির স্বাধীকার আন্দোলনের ভিত্তিস্তম্ভ স্বরূপ। ছয় দফা বাঙালীর মুক্তির সনদ। বহুকাল থেকে অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের শিকার বাঙালি জাতি ছয় দফা দাবি প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে নতুন দিক নির্দেশনা পায়।
১৯৬৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের নিকট ৬ দফা কর্মসূচি তুলে ধরার পর ১৩ ফেব্রুয়ারি ৬ দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে সর্বপ্রথম বিবৃতি দেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল হারুন চৌধুরী, দফতর সম্পাদক এম এ হান্নান (১৯৩০-১৯৭৪) ও কোষাধ্যক্ষ জানে আলম দোভাষী। দৈনিক ইত্তেফাকের ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সংখ্যায় বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়। ‘আওয়ামী লীগ ভূমিকার প্রতি অভিনন্দন’ শিরোনামের বিবৃতিতে বলা হয়-
‘চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল হারুন চৌধুরী, দফতর সম্পাদক এম এ হান্নান (১৯৩০-১৯৭৪) ও কোষাধ্যক্ষ জানে আলম দোভাষী অদ্য (রবিবার) এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, সাম্প্রতিক লাহোর সম্মেলনে যোগদানকারী আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতিনিধি দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতিনিধিরা যে সুচিন্তিত ও বলিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছেন -তাহাতেই ইহাই প্রমাণ করে যে, শুধু বিরোধিতার খাতিরেই বিরোধিতা করা বা ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করা আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য নয় অথবা ঘোলা জলে মাছ শিকার করার প্রবণতা আওয়ামী লীগের নাই।
আমরা আশা করিয়াছিলাম যে, প্রস্তাবিত লাহোর সম্মেলন ‘যুদ্ধপুর্ব, যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধোত্তর কালের দেশের রাজনৈতিক -অর্থনৈতিক সমস্যাদি সত্যের কষ্টিপাঠরে বিচার বিশ্লেষণ করিয়া দেশকেÑবাস্তবানুগ নেতৃত্বদানের কর্মপন্থা নির্ধারিত করিবে। কিন্তু দুর্ভোগ্যের বিষয় লাহোর সম্মেলন যে সাম্প্রতিক তাসখন্দ চুক্তির বিরোধিতা করার উদ্দেশ্যেই আহুত হইয়াছিল- ইহাই প্রমাণ হইলো। আমরা মনে করি, তাসখন্দ চুক্তি সাম্প্রতিক পাক ভারত ভয়াবহ যুদ্ধের ফলশ্রুতি। পাক-ভারত শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা আওয়ামী লীগ দলের বহু আকাঙ্খিত বিলম্বে হইলেও তাসখন্দ চুক্তি পাক ভারত প্রতিষ্ঠার সহায়ক হইবে। সুখের বিষয়, ভারতের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উঠিলে যাহারা তাহা বাঁকা চোখে দেখিতেন ও তাহা উহার প্রস্তাবকদের নিন্দা করিতেন, আজ তাহারাও তাসখন্দ চুক্তির অন্যতম প্রবক্তা। বিলম্বে হইলেও বাস্তবতার চাপে তাহাদের চোখ খুলিয়াছে ইহার আশার কথা। আজ দেশের আপামর জনসাধারণ ইহাই বুঝিতে পারিয়াছে যে, কোন গুরুতর সমস্যারই (কাশ্মীরসহ) সমাধানের পথ বল প্রয়োগ নয়। আর পাকিস্তান ও ভারত যুদ্ধেও বিলাসিতাও করিতে পারে না।
লাহোর সম্মেলনের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করিয়া তাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ইহাই প্রমাণ করিল যে, পূর্ব বাংলার সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব সঠিক পথেই পরিচালিত হইতেছে। তাই আমরা জনাব মুজিবর রহমান সাহেবকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করিতেছি। পরিশেষে আমরা জনসাধারণের কাছে আবেদন করিব, লাহোর সম্মেলনে শেখ মুজিবর রহমান কতৃক দাবীকৃত ছয় দফা, যথা পূর্ণ গণতন্ত্র কায়েম, আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন, আঞ্চলিক রক্ষাব্যবস্থা ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বিধিব্যবস্থা ও পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থা ইত্যাদি কায়েম করার জন্য আন্দোলন গড়িয়া তুলুন। ’
১৭ ফেব্রুয়ারি এম এ আজিজের সহায়তায় আওয়ামী লীগের প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘ছয় দফা’ নামক প্রথম পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়।
শেখ মুজিবর রহমান ‘৬ দফা কর্মসূচির’ প্রচারণায় পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলা সফর করেন। এই ঐতিহাসিক ৬ দফা সারা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ সারা বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানের জনসভায় সর্বপ্রথম এটি জনগণের নিকট পেশ করেন। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে দৈনিক ইত্তেফাকে যেভাবে মুদ্রিত হয়েছে, তা নিম্নে হুবহু প্রদান করা হলো-
২৫ শে ফেব্রুয়ারি অদ্য বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে অনুষ্ঠিত প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সম্প্রতি ঘোষিত ৬ দফা কর্মসূচীর প্রতি চট্টগ্রামবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করিয়া দেশ ও দশের বৃহতর স্বার্থে জনগণের আশা ও আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে সুস্পষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে নেতৃত্ব দিতে আগাইয়া আওয়ামী লীগের প্রতি অভিনন্দন জানান হয়। সভায় গৃহীত এই প্রস্তাবে আপামর জনসাধারণকে ৬ দফার ভিত্তিতে দেশব্যাপী দূর্বার আন্দোলন গড়িয়অ তোলার আহ্বান জানান হয়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, প্রাদেশিক আওয়ামী লগের ৬ দফা কর্মসূচীর প্রতি জনমত যাচাইয়রে প্রয়াস ইহাই প্রথম। এই উপলক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকায় হইতে আগত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ আজ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত লালদিঘী ময়দানের জনসভায় দলীয় ৬ দফার বিভিন্ন দিকের উপর আলোকপাত করিয়া বক্তৃতা করেন। বিগত কিছুদিন যাবৎ কেবল পত্র পত্রিকায়র পৃষ্টায় যে ৬ দফার কথা শুনিয়া আসিয়াছেন, আজ নেতৃবৃন্দের মুখ হইতে প্রত্যক্ষভাবে উহার পটভূমি, জাতীয় জীবনে উহার তাৎপর্য ও আগামী দিনের করণীয় কর্তৃব্য সম্পর্কে বিস্তারিত পথ নির্দেশ পাইবার জন্য লালদিঘী ময়দানে সভার বহু পূর্ব হইতে বিপুল জনসমাগম হয়। নেতৃবৃন্দের বক্তৃতায় উপস্থিত শ্রোতমণ্ডলী এতই উৎসাহিত বোধ করিতে থাকে যে, শেখ মুজিবের আহ্বানে শুন্যে হস্ত উত্তোলন করিয়া একবাক্যে তাহারা ঘোষণা করে যে, ৬ দফার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়া দেশ ও দশের সত্যিকার কল্যাণ সাধনের সংগ্রামে যে কোনো বাধা বিপত্তি তাহারা হাসি মুখে বরণ করিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। সমস্বরে উচ্চারিত ৬ দফা মানতে হবে, আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন দিতে হইবে প্রভৃতি ধ্বনির মধ্য দিয়া তাহারা আওয়ামী লীগের দাবিকে বুলন্দ করিয়া তোলে।
বিপুল করতালির মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান লালদিঘীর জনসমুদ্রকে উদ্দেশ্য করিয়া বলেন , আমরাও আজ বার্ধক্যের কোঠায় আসিয়া পৌঁছিতে চলিয়াছি। নূতন দিগন্তে আজ আমরা নূতন মুখের দেখা পাইতেছি, অন্ততঃ এই নূতনদের জীবনকে যাহাতে আমরা বঞ্চনা ও নির্যাতনমুক্ত করিয়া তাহাদিগকে সুখ ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তার সন্ধান দিয়া যাইতে পারি, তজ্জন্য আসুন আমরা কোরবানীর জন্য প্রস্তুত হই। আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত ছয় দফাই নূতন দিগন্তের এই নূতনদের মুক্তির সনদ। পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচকোটি মানুষের হৃদয় বন্দরে খুঁজিয়া দেখুন, আওয়ামী লীগের ছয় দফা তাহাদের প্রতিটি হৃদয়ে স্পন্দিত হইতেছে। বিগত যুদ্ধের শঙ্কাকুল দিনগুলির কথা ভাবিয়া দেখুন। জাতীয় সংহতির সেই চরমতম পরীক্ষার মুহুর্তগুলির প্রেক্ষিতে এই সব দাবীর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আরো বেশি প্রকট হইয়া দেখা দিয়াছে। শেখ মুজিব বলেন যে, বিগত যুদ্ধের আলোকে গোটা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাদির চুলচেরা বিচার করিয়াই আওয়ামী লীগ স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছে যে, বিশ্ব-মানচিত্রে পাকিস্তানকে একটি শক্তিশালী ও সত্যিকার সুসংহত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করিতে হইলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার ভুল বুঝাঁবুঝিঁর চির অবসান ঘটাইতে হইবে। পশ্চিম পাকিস্তান্রের কায়েমী স্বার্থ মহল এবং এই মহলের যে সব এজেন্ট পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সৃষ্টির পর হইতে আজও তৎপর আছেন, তাহাদের শেষ বারের মতো আজ উপলব্ধি করিতে হইবে যে, পাকিস্তানের এক অংশকে অন্য অংশের অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক উপনিবেশে পর্যবসিত করা সময় নয়। আর সত্যিকার অর্থে তাহাদের এ প্রচেষ্টা পাকিস্তানকে দুর্বল করারই নামান্তর। তাহাদের আরও বুঝিতে হইবে যে, পূর্ব পাকিস্তানবাসীরা তাহাদের কারচুপি ধরিয়া ফেলিয়াছে এবং সেই জন্যই তাহারা আজ বিগত কালের ‘ঠান্ডাযুদ্ধের’ অবসান ঘটাইয়া পাকিস্তানকে মজবুত করিতে বদ্ধপরিকর। আর এই উদ্দেশ্য লইয়া পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের আশা আকাক্সক্ষা মোতাবেক আওয়ামী লীগ এই ৬-দফা প্রণয়ন করিয়াছে।
শেখ মুজিবুর রহমান দেশব্যাপী আপামর জনসাধারণকে উদ্দেশ্য করিয়া বলেন, প্রকৃত অর্থে এই ৬-দফা কর্মসূচী আওয়ামী লীগের নয়, এই ৬-দফা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের। এই ৬-দফা বাস্তবায়নের সংগ্রামে যে অত্যাচার নির্যাতন ভোগ করিতে হইবে সেই অত্যাচার-নির্যাতনের ভাগী হওয়ার জন্যই আমরা জনতার কাতারে আসিয়া দাঁড়াইয়াছি। জনগণের এই ৬-দফা দাবী আদায়ের সংগ্রামকে জোরদার করার জন্য তিনি দলমত নির্বিশেষে সকল মহলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। চট্টগ্রামবাসীদের উদ্দেশ্য করিয়া তিনি বলেন যে, একদিন সমগ্র পাক ভারতের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের জবরদস্ত শাসন-ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করিয়া এই চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়েই বীর চট্টলের বীর সন্তানেরা স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করিয়াছিলেন। আমিও চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য দাবী আদায়ে সংগ্রামী পতাকাও চট্টগ্রামবাসীরা চট্টগ্রামেই প্রথম উড্ডীন করুন। তিনি দেশবাসীকে স্মরণ করাইয়া দেন যে, আওয়ামী লীগ একটি অসম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাই বলিয়া পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনী বিজয়ের বেশে প্রবেশ করিবে, আওয়ামী লীগের একজন কর্মী প্রাণ থাকিতেও তা বরদাশত করিবে না। সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করিয়া দিতে চায় যে, পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লইয়া যারা হেলাফেলা করিয়াছে বা করিতেছে, পূর্ব পাকিস্তানবাসী তাহাদের কোনদিন ক্ষমা করিবে না। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্যের উল্লেখ করিয়া শেখ মুজিব বলেন যে, ১৯৪৮ সাল হইতে ১৯৬০ সা পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানে জাতীয় সম্পদ হইতে মোট ১৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হইয়াছে। আর সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় করা হইয়াছে মাত্র ৫৪০ কোটি টাকা । অথচ এই সময় সীমার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় সম্পদের শতকরা ৬০ ভাগ উপার্জন করিয়াছে। বিদেশী সাহায্যেরও শতকরা ৮০ ভাগ পশ্চিম পাকিস্তানে বিনিয়োগ করা হইয়াছে। শেখ সাহেব বলেন যে, কেন্দ্রিয় সরকারের চাকরিতেও আজ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যা শতকরা ২৫ ভাগের উপরে উঠিতে পারে নাই। শেখ মুজিবুর রহমান লেভি প্রথার তীব্র সমালোচনা করেন। যেসব অঞ্চলে বাধ্যতামূলক লেভি আদায় করা হইতেছে সেই সব অঞ্চলে পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থা কায়েমের জন্য তিনি দাবী জানান। তিনি আমদানী নীতিরও সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বোনাস ভাউচারে আমদানী করিয়া একদিকে মনোপলিস্ট ও কার্টেলিস্টদের বেপরোয়া মুনাফা লুটার সুযোগ দেওয়া হইয়াছে। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানীদের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করিয়া তোলা হইয়াছে।
সভা শেষে তুমূল হর্ষধ্বনির মধ্যে গৃহীত একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ৬-দফার প্রতি লালদিঘীর শ্রোতৃমণ্ডলী অকণ্ঠ সমর্থন জানায় ও দেশবাসীর আশা ও আকাক্সক্ষার নিরিখে সুস্পষ্ট কর্মসূচী গ্রহণের ব্যাপারে সময়োচিত নেতৃত্ব দিতে আগাইয়া আসায় আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন জানায়। প্রস্তাবে প্রদেশব্যাপী ৬-দফার সমর্থনে দুর্বার গণআন্দোলন গড়িয়া তোলার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান হয়। সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে শান্তিপূর্ণ পথে সকল সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে ভারতসহ সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করার দৃঢ় সঙ্কল্প প্রকাশ করা হয়। (ইত্তেফাক, ২৫ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬, পৃ ১,৮)
৬ দফার দাবির পক্ষ্যে গণজোয়ার সৃষ্টির লক্ষ্যে কক্সবাজার আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার কামাল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর আহমদ, কোষাধ্যক্ষ একেএম মোজাম্মেল হক, প্রচার সম্পাদক জালাল আহমদ, এডভোকেট আনচার চৌধুরী, ছালেহ আহমদ চৌধুরী, শেখ মকবুল আহমেদ সিকদার, এডভোকেট মওদুদ আহমেদ, নুরুল আজিম চৌধুরী, নুরুল আবসার চৌধুরীসহ প্রায় ৫০ জনের মতো আওয়ামী লীগ নেতা ওই সভায় যোগদান করেছিলেন বলে ওই সভায় যোগদানকারী কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম তার রচিত ‘আমার দেখা শেখ মুজিব ও কক্সবাজারের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ নামক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন।
এর পর ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয় দফা প্রস্তাব এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি গৃহীত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিন আহমেদের বিশ্লেষণ সহ একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। ৬ দফা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার ও দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ছয় দফা অনুমোদিত হবার পর থেকেই নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ দু টুকরো হয়ে যায। সরকার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা দমননীতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। দক্ষিণপন্থী দলগুলি ৬ দফার নানা অপ-ব্যাখা প্রদান করে আওয়ামী লীগকে বিচ্ছিন্নতাবাদী রুপে চিহ্নিত করে। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (পিকিংপন্থী)র অভ্যন্তরে বামপন্থীরা এই প্রস্তাবকে সিআইএ-র একটি চক্রান্ত বলে অভিহিত করে ছয় দফার বিরোধিতা করেন। কিন্তু এই বক্তব্যের পেছনে তারা কোনো যুক্তিও প্রদর্শন করে না। অবশ্য পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা এটাকে আইয়ুব উৎখাতে সিআই-র রাজনৈতিক চাপ শুরুর প্রক্রিয়া বলে মনে করে হল্যাণ্ডে নিয়োজিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত কুদরত উল্লাহ শেহাবের (১৯১৭-১৯৮৬) কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের আলোকে। তাদের ধারণা হয় ঢাকার তৎকালিন মার্কিন কনসাল জেনারেল ব্রাউন ও কনস্যুলেটের আরেক কর্মকর্তা কর্নেল চিশহোমের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে। পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পায় যে ব্রাউন কনসাল জেনারেলের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সিআইএ-র স্টেশন চিফেরও দায়িত্ব পালন করছেন এবংি তার সঙ্গে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালিন ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের একাংশেরও কিছু রাজনৈতিক নেতার যোগাযোগ রয়েছে। পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা এও জানতে পায়, কর্নেল চিশহোমের বাসভবনে মাঝে মাঝে পার্টি দেওয়া হয়। এই সব পার্টিতে বাছাই করা কিছু রাজনৈতিক নেতা, ছাত্রনেতা এবং পদস্থ সরকারি বাঙালি কর্তা উপস্থিত থাকে। গোয়েন্দা সংস্থা অনুমান করে যে, ছয় দফার ধারণা কর্নেল চিশহোমের পার্টি থেকেই এসেছে। পরে কর্নেল চিশহোমকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মস্কোপন্থী বলে পরিচিত কমরেড মণি সিংহ (১৯০১-১৯৯০), আবদুস সালাম ওরফে বারীন দত্ত, খোকা রায় (১৯০৭-১৯৯২), মোহাম্মদ ফরহাদের (১৯৩৮-১৯৮৯) নেতৃত্বে পরিচালিত আণ্ডার গ্রাউণ্ডে থাকা কমিউনিস্ট পার্টি এবং অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের (১৯২২-২০১৯) নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ (মোজাফ্ফর) ৬ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানায়। এরপর থেকে ৬ দফা কর্মসূচীর অনুকূলে গণসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে সারাদেশে গণসংযোগ শুরু হয়। তিন মাস ব্যাপী একটানা গণসংযোগ চলে সারাদেশে।
সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও ৬ দফার প্রচার অভিযান চালানো হয়েছে। ছয় দফার বাণী মানুষের কাছে পৌঁেছ দিতে শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজারে আসেন ২৭ মার্চ। পাবলিক লাইব্রেরির ময়দানে আয়োজন করা হয় জনসভার। কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় ছয় দফার গুরুত্ব তুলে বক্তব্য রাখেন। বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি কক্সবাজার কলাতলীতে ধানী জমি নষ্ট করে যে সড়ক তৈরি করা হচ্ছে তার সমালোচনা করে বলেন- কক্সবাজার কলাতলীতে যে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে তা কৃষকের অনুকূলে নয়’। সভায় বক্তব্য রাখেন এম এ আজিজ, জহুর আহমেদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম চৌধুরী, এম এ হান্নান, এম এ মান্নান, আফসার কামাল চৌধুরী, এ কে এম মোজাম্মেল হক, কামাল হোসেন চৌধুরী।
একেএম মোজাম্মেল হক, কামাল হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম চৌধুরী কক্সবাজার হাই স্কুলের শিক্ষার্থী এম এম সিরাজুল ইসলাম ও রামানন্দ সেনকে ১৬/২০ সহপাঠি নিয়ে মিটিংয়ে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত¦ পালনের দায়িত্ব দেন। আলী রেজা, ওসমান গণি, নেপাল নাগ, রামানন্দ সেন, দৌলন, আবুল কালাম টেবিল সাজানো থেকে শুরু করে সভার শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। সভা শেষে বঙ্গবন্ধু ছাত্রদের নিয়ে পায়ে হেঁটে সীবীচ কটেজের পাশে সমুদ্রের বালিয়াডিতে চলে যান। ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে কটেজে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তুতি চলছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছাত্রদের দেশী বিদেশী স্বদেশী প্রেমমূলক গল্প, বাঙালির ইতিহাস, পশ্চিম পাকিস্তানিদের চক্রান্ত ইত্যাদি বিষয়ে অমীয় বাণী শুনিয়েছিলেন। ঔ দিকে বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের তাগাদা দিলে বঙ্গবন্ধু তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমার এই ছেলেরা আমাকে আসতে দিচ্ছে না। তোমরা কাজ শুরু কর। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠকে বসেন।
ছয় দফাকে আরো ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে দিতে কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছয় দফা কী নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে পেকুয়া, চকরিয়া, সদর, রামু, উখিয়া, কুতুবিদয়ায় ব্যাপক প্রচার অভিযান চালান। এদিকে নেজামে ইসলামী পার্টির কেন্দ্রিয় নেতা খতিবে আযম ছিদ্দিক আহমদ, পিডিপি নেতা আজিজু রহমান প্রকাশ লাল আজিজসহ কতিপয় ইসলামপন্থী নেতা ৬ দফাকে ইসলামপরিন্থী দফা বলে উল্লেখ করে বক্তৃতা ও বিবৃতি প্রদান করতে থাকলে মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এবার ‘ইসলামের দৃষ্টিতে ছয় দফা’ নামে পুস্তিকা করে ছয় দফা ইসলাম বিরোধী দফা নন; ছয় দফা বাঙালির স্বায়ত্ত্বশাসন এবং মানুষের নিপীড়নের হাত থেকে বাাঁচার দফা।
পাশাপাশি ন্যাপ- ছাত্র ইউনিয়ন নেতারাও ৬দফা কর্মসূচিকে সমর্থন করে তাদের মত করে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। ৬ দফা আন্দোলনের প্রচারপত্র সারাদেশে প্রচার হওয়ার সাথে সাথে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর টনক নড়ে। তারা বুঝতে পারলো যে ছয় দফা বাস্তবায়িত হলে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে আর শোষণ ও নির্যাতন করা যাবে না। তাই ছয় দফা উত্থাপনকারী শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দলকে পাকিস্তানের দুশমন হিসেবে অভিহিত করেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের নির্দেশে শেখ মুজিব, আওয়ামীলীগ, ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগের আন্দোলনরত নেতাকর্র্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করে হয়রানি করতে থাকে। এ দিকে ২৯ মে রাত ১টার সময় শেখ মুজিব ও এম এ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, মোস্তফা সরওয়ার, আবদুল মোমেনসহ তার কয়েকজন বিশিষ্ট কর্মী ও সহযোগীদের পাকিস্তান দেশ রক্ষা আইনের আওতায় গ্রেফতার করা হয়। ৬ দফা সমর্থনকারী বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে একই আইনে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
এরপর আস্তে আস্তে বাঙালির অধিকার আদায়ে বাঙালিরা সচেতন হতে থাকে। একের পর এক আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারের নেতাকর্র্মীরা। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথান, সত্তরের নির্বাচন সবকিছুতে শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে কাজ করতে থাকে আওয়ামীলীগ নেতাকর্র্মীরা।
১৯৬৬ সালের মার্চ মাসে কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবসার কামাল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর আহমদ, মহকুমা আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মওদুদ আহমদ, জালাল আহমদ, এডভোকেট ফজলুল হক, ফয়েজ আহমদ চৌধুরী, একে.এম.মোজাম্মেল হক, তৎকালিন ছাত্রলীগ নেতা কামাল হোসেন চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, গোলাম রাব্বান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ৬ দফার প্রচারাভিযানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মার্চ মাসের শুরুতে এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট নুর আহমদ ৬ দফা দাবি ও বাঙালির জাতির মুক্তি সনদ হিসেবে আপামর বাঙালি জাতির কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে উখিয়ায় এক সভার আয়োজন করেন। উখিয়া স্টেশনে সিরাজুল হক প্রকাশ গুরা মিয়া এবং আলী আহমদ সিকদারের সহায়তায় ৬ দফা প্রচারের সমর্থনে সভায় এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট নুর আহমদ, কক্সবাজার মহকুমা ন্যাপ (মোজাফ্ফর) নেতা ইলিয়াছ মাস্টার, উখিয়া হাই স্কুলের শিক্ষক আবদুল হক চৌধুরী, নুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ ঠাণ্ডা মিয়া, সিরাজুল হক প্রকাশ গুরা মিয়া, শাহজাহান চৌধুরী, আবদুল করিম, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ইব্রাহিম আজাদ, আবুল কাসেম প্রকাশ মামা কাসেম, শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, কামাল উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পরবর্তীতে জহিরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফজলুল হক, কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ প্রমুখের উদ্যোগে ঈদগাও স্টেশনে বৈঠক ও সভা অনষ্ঠিত হয়। শিক্ষা দীক্ষায় ও রাজনীতির অনগ্রসর কক্সবাজারে মূলত মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলাম এবং জামায়াতের রাজনীতি ধারা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় এবং মৌলভী ফরিদ আহমদ এর জন্মস্থান হওয়ায় তাদের প্রভাব ছিল বেশী। যার ফলে আওয়ামী লীগের কোনো অনুষ্ঠান কিংবা সভার অনুমোদন পাওয়া যেত না সরকারের পক্ষ থেকে। যার ফলে ৬ দফা প্রচারের জন্য সে সময় কোনো স্কুল, কলেজ, মাঠ কিংবা স্থান না পেয়ে অবশেষে ঈদগাঁও স্টেশনের এক চায়ের দোকানে সারতে হয় প্রোগ্রাম। ওই দিন আলাপচারিতার ঢঙ্গে ৬ দফার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য তুলে বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করতে হয়েছে। পরে ৬ দফার প্রচারাভিযানের তৎকালিন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রব্বানের আহ্বানে চকরিয়ার ভেওলা মানিকচরে এক গণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ওই সভায় এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট নুর আহমদ, ডা. শামসুদ্দিন, শামসুল হুদা বিএসসি, সাজ্জাদ, আবদুর রহিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মহেশখালীতেও ছয় দফার প্রচার অভিযান চালানো হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মওদুদ আহমদ নিজ গ্রাম বড় মহেশখালীতে একটি জনসভার আয়োজন করে। ওই সভায় মহকুমা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর আহমদ, এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট রফিক উল্লাহ, অবিনাশ চন্দ্র দে, আবদুস সাত্তার, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আ ফ ম একরামুল হক, মোশতাক আহমদ চৌধুরী, মীর কাসেম, এম এ সিরাজ, ডা. নুরুল আমিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
শাসক গোষ্ঠী তাকে রুখতে না পেরে বাধ্য হয়ে ছয় দফা প্রচারকালে ১৯৬৬ সালের ৯ মে গ্রেফতার করে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতার বীর বাঙালিকে দমাতে পারেননি। ৬ দফা বাস্তবায়ন ও বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হয়। ছাত্ররা এলাকায় এলাকায় সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। ১ জুনকে শিক্ষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ছাত্র সমাজ। এ উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণামতে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও ৬ দফার দাবির সমর্থনে মিছিল সমাবেশ করতে থাকে ছাত্র সমাজ। শুধু কক্সবাজার শহরে নয়- থানায় থানায় শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। অন্যান্য থানার তথ্য পাওয়া না গেলেও উখিয়া থানায়ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে-মিছিলে ভরপরু হয়ে যায় উখিয়া। ৩১ মে ’৬৬ শুক্রবার সন্ধ্যায় উখিয়া স্টেশনে ছাত্র ইউনিয়ন আবদুল জাব্বার চৌধুরী, শাহজাহান চৌধুরী, মধুসূদন চন্দ্র দে, সন্তোষ কুমার বড়ুয়া, শামসুল আলম প্রকাশ গুরা মিয়া, স্কুল কমিটির সম্পাদক সুলতান আহমেদ প্রমুখ ছাত্ররা এক বৈঠকের মাধ্যমে উখিয়া হাই স্কুলের এসেম্বলী থেকে সরকার বিরোধী এবং ৬ দফা দাবির সমর্থনে শ্লোগান সহকারে মিছিল নিয়ে কোটবাজারে পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে মিলিত হয়ে মিছিল সহকারে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কথামতে, উখিয়া হাই স্কুলের এসেম্বলী ক্লাসের সময় মধূসূদন দে ছয় দফার দাবিতে সমর্থনে শ্লোগান দেয় এবং সাথে সাথে ছাত্ররা মিছিল সহকারে উখিয়া হাই স্কুল থেকে বের হয়ে কোট বাজার স্টেশনে পৌছে পালং হাই স্কুলের ছাত্রদের মিছিলের সাথে মিলিত হয়ে যৌথ মিছিল সহকারে বিক্ষোভ সমাবেশ করার জন্য। কিন্তু ওই দিন পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকদের বাঁধার কারণে মিছিল বের করতে পারি নি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ওই দিন উখিয়া হাই স্কুলের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছাত্র ইউনিয়ন উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবদুল জব্বার চৌধুরী, শাহজাহান চৌধুরী (সাবেক সাংসদ ও হুইপ), সন্তোষ কুমার বড়ুয়া, মধুসূদন দে প্রমুখের নেতৃত্বে ওই স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র এবং স্কুলের ফাস্ট বয় সুলতান আহমেদ (মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রাথমিক শিক্ষক, পরবর্তীতে আইন পেশায় জড়িত হন), উখিয়া হাই স্কুল ছাত্র পরিষদের সহ-সম্পাদক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কামাল উদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা আবদুল করিম, শামসুল আলম প্রকাশ গুরা মিয়া, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আবুল কাসেম (কাসেম মামা), উখিয়া হাই স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র নুরুল বশর, হ্নীলার জালাল আহমদ, কাজী গিয়াস উদ্দিন, সিরাজুল হক (পরবর্তীতে বিএ সিরাজ নামে পরিচিত)সহ কয়েকজন ছাত্র মিছিল সহকারে ১ জুনের শিক্ষা দিবসের বিক্ষোভ মিছিল কোটবাজার থেকে রুমখা বাজারের উত্তর প্রান্তের মুরগী ও দইয়ের দোকান পর্যন্ত অগ্রসর হলে (সে সময় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও হচ্ছিল) পুলিশ ও এলাকার প্রবীণ মুরব্বী তাদের বাঁধা দিয়ে দোকানের এক কোণায় নিয়ে যায়। ওই সময় উখিয়া থানার দারোগা মিছিল থেকে শাহজাহান চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আবদুল জাব্বার চৌধুরী ও সন্তোষ কুমার বড়ুয়াকে আটক করে। ওই তিন ছাত্রই পাকিস্তান আমলে উখিয়া থানার প্রথম রাজবন্দি। ওই দিন রাত্রে রাজাপালং ইউনিয়ন কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চৌধুরী ও সন্তোষ কুমার বড়ুয়ার কাকার জিম্মায় শাহজাহান চৌধুরী, আবদুল জব্বার চৌধুরী ও সন্তোষ কুমার বড়ুয়াকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় উখিয়া থানা পুলিশ।
৬ দফা আন্দোলনের প্রথম তিন মাসেই শেখ মুজিবুর রহমানকে ৮বার গ্রেফতার করা হয়। সাথে কয়েকজন জাতীয় নেতাকেও। ৬ দফা নিয়ে মাঠে নামার পর থেকেই আওয়ামী লীগ বাঙালির স্বাধিকার ইস্যূতে চাম্পিয়নরুপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে। প্রচণ্ড আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে পড়লেও শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দাবির সাথে আপস করেন নাই। তার সাহসী ভূমিকা দিয়ে তিনি মানুষের জয় শুরু করেন। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ৬ দফা বাস্তবায়নে গ্রেফতারকৃত অন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমগ্র পূর্ব বাঙলায় সারা দেশে হরতাল পালিত হয়। ওই হরতাল শুধু ৬ দফা নয়, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের দাবি নিয়ে পালিত হয়। ধর্মঘট পালনকালে পুলিশের গুলিতে তেজগাঁর শ্রমিক মনু মিয়াসহ ঢাকা, টঙ্গী ও নারায়নগঞ্জে ১৩ জন নিহন হন। ছাত্র যুব সমাজের পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণির দৃপ্ত অংশ গ্রহণ আন্দোলনে এক নতুন মেজাজ ও মাত্রাযুক্ত করে। আওয়ামী লীগ ও গণতান্ত্রিক শক্তির পর নেমে আসে প্রচণ্ড নির্যাতন। এভাবে আইয়ুব সরকারের জেল জুলুম হত্যা নির্যাতন ৬ দফা আন্দোলনের বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটায়। সভা-সমাবেশ, ধর্মঘট, পোস্টার লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে ৬ দফা কর্মসূচী পূর্ব বাঙলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের বাঁচার দাবিতে পরিণত হয় ।
সারা বাংলাদেশে ৬ দফার আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। অতঃপর আয়ুব-মোনায়ম চক্র ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বাংলার কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তান স্বার্থ বিরোধী ষড়যন্ত্র মামলার অভিযোগ আনেন। ৬ দফা আন্দোলকে নস্যাৎ করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এই মামলার। সরকার এই মামলাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে আখ্যায়িত করে। ১৮ জানুয়ারি এক প্রেসনোটে শেখ মুজিবকে এই মামলায় জড়ানো হয়। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়। এক নম্বর আসামী শেখ মুজিবুর রহমানসহ মোট ৩৫ জনকে এই মামলার আসামী করা হয়। ১১ জনকে রাজ সাক্ষী হওয়ায় ক্ষমা করা হয়। এই মামলা ছিল সুস্পষ্টভাবে একটি সাজানো নাটক । মামলার মুল বিষয়বস্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভারতীয় যোগসাজসে ও ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা করছে। এই মামলার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ৬ দফার জনসপক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ক’জন সৎ সাহসী বাঙালিকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুঁলিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে পূর্ব বাংলার স্বার্থ ও আন্দোলনকে চির দিনের মত কণ্ঠরোধ করে দেয়া। এই মামলা ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সারা বাংলার ছাত্রজনতা আন্দোলনে মেতে উঠে।
কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভার আহবান করা হয়। কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার কামাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভার প্রস্তুতি সভায় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ একেএম মোজাম্মেল হক, কক্সবাজার কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সারা জেলায় প্রতিবাদ সভার প্রচারণা চালানো হয়। এ দিকে কক্সবাজারে এ সভা হচ্ছে জেনে স্পেশাল পুলিশ ও ইপিআরকে চট্টগ্রাম থেকে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়েছে যারা প্রতিবাদ করবে তাদের গ্রেফতার করতে। অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যেও পূর্ব নির্ধারিত বড় বাজারে গণ-সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার কামাল চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাক নুর আহমদ অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত থাকায় মহকুমা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি ফয়েজ আহমদ চৌধুরী। তার বক্তব্যে বলেন,
‘আমাদের সোনার বাংলা আজ পশ্চিম পাকিস্তানের শোষনের কারনে মরুভুমিতে পরিণত হয়েছে। এদের অত্যচার-অবিচার হতে বাঁচতে হলে ৬ দফা আমাদের বাঁচা-মরার দাবি আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য দাবি দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা যেকোন মূল্যে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে ছেড়ে আনবই।
ওই প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন মহকুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক জালাল আহমদ, মোজাফ্ফর সওদাগর, জামাল হোসেন চৌধুরী, কামাল হোসেন চৌধুরী।
৬ দফা আন্দোলনে আপোষহীন ইসলামপন্থী জামায়াত ই ইসলামী, নেজাম ই ইসলামী, কনভেনশন মুসলিম লীগ সংগঠন ৬ দফার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মিছিল মিটিং করে। অপরদিকে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ে জীবন দিতে প্রস্তুত স্বাধীনতাকামী আওয়ামী লীগ- ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ মোজাফ্ফর, ছাত্র ইউনিয়ন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীন বাঙলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ব্যাপক প্রচারাভিযানে সাহসী ভূমিকা ছিল প্রকম্পিত, তাদের মধ্যে অগ্নিযুগের বিপ্লবী কমরেড এডভোকেট সুরেশ সেন, বিপ্লবী কংগ্রেস নেতা জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মওদুদ আহমদ, কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবসার কামাল চৌধুরী, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুুল হক, মনিরুল হক চৌধুরী, ফয়েজ আহমদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মোজাম্মেল হক, প্রচার সম্পাদক জালাল আহমদ, এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, সমশের আলম চৌধুরী, শেখ মকবুল আহমদ সিকদার, এডভোকেট মোজাম্মেল হক (চকরিয়া), ছালেহ আহমদ চৌধুরী, মোসলেম খাঁন (কুতুবদিয়া), বাদশা মিয়া চৌধুরী, আলী আহমদ সিকদার বিকম, পালংখালীর বখতিয়ার আহমদ চৌধুরী, শামসুল হুদা বিএসসি, মোজাফ্ফর সওদাগর প্রমুখ অবদান রাখেন।
ছাত্রদের মধ্যে কামাল হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা এটিএম জাফর আলম চৌধুরী, কৃষ্ণ প্রসাদ বড়ুয়া, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম কলেজ সংসদের নেতা চকরিয়ার গোলাম মোস্তফা (পরবর্তীতৈ অধ্যাপক, বাঙলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা চকরিয়ার গোলাম রাব্বান, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ইদ্রিস আহমদ (১৯৬৫-৬৬ সালের কক্সবাজার কলেজ সংসদের ভিপি), নুর বক্স (১৯৬৫-৬৬ সালের কক্সবাজার কলেজ সংসদের জিএস), সুভাষ দে, সিরাজুল মোস্তফা নুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ ঠাণ্ডা মিয়া, আবুল কাসেম, সাইফুল্লাহ খালেদ, আবদুল মাবুদ সিকদার, ছাত্রলীগ নেতা শাহজাহান চৌধুরী (সাবেক হুইপ, বর্তমানে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি), আবদুল জাব্বার চৌধুরী, সন্তোষ কুমার বড়ুয়া, সুরক্ষিত বড়ুয়া, আবদুল করিম, রাজা মিয়া, তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী, নুরুল আবছারসহ আরো অনেকে।
স্বায়ত্বশাসনের ভিত্তিতে আপোষকামী জনপ্রিয় কেন্দ্রিয় বাগ্ময় সদস্য মৌলভী ফরিদ আহমদ, খতিবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, আজিজুর রহমান প্রকাশ লাল আজিজ, কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা মোহাম্মদ রশিদ বিএ, জালাল আহমদ চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী, আবদুল গফুর চৌধুরী, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, মোখতার আহমদ চৌধুরী (জামায়াত), মাওলনা মোকতার আহমদ (জামায়াত), মৌলভী জাকারিয়া (নেজামে ইসলাম), মাওলানা আফজাল আলী (নেজামে ইসলাম), জিন্নাত আলী (ইসলামী ছাত্র সংঘ), রাজাপালংয়ের মকবুল আহমদ সিকদার, ঈদগাঁও’র জালাল আহমদ ফরাজি প্রমুখ পাকিস্তান সমর্থক ইসলামপন্থীর দল পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। ছয় দফার আন্দোলন বেগবান হতে হতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার অভিপ্রায়ও যুক্ত হতে থাকে সবার মাঝে। স্বাধীনতাকামী প্রত্যেক দলের নেতারাই পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
দোহাই
১. আওয়ামী লীগ ভূমিকার প্রতি অভিনন্দন’, ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ দৈনিক ইত্তেফাক
২. নুরুল ইসলাম সম্পাদিত ‘ছয় দফা’, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬, ঢাকা : পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।
৩. মযহারুল ইসলাম, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’, ১৭ মার্চ ১৯৭৪, ঢাকা : বাংলা একাডেমি
৪. মাসুদুল হক,‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং ‘সিআইএ’, ফেব্রুয়ারি ১৯৯০, ঢাকা : প্রচিন্তা প্রকাশনী।
৫. কৃষ্ণপ্রসাদ বড়ুয়া, স্মৃতিতে অম্লান, মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজার (মুজিবুর রহমান সম্পাদিত), ডিসেম্বর ১৯৯৯।
৬. ড. হারুন-অর-রশিদ, ‘বাংলাদেশ: রাজনীতি সরকার শাসনতান্ত্রিক উন্নয়ন ১৭৫৭-২০০০’, ফব্রেুয়ারি ২০০১, ঢাকা।
৭. শওকত হাফিজ খান রুশ্নি, ‘সাহসী ঠিকানার একাত্তর’, দ্বিতীয় প্রকাশ- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৪,চট্টগ্রাম: ম্যাকস।
৮. অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি : আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি’, ফেব্রুয়ারি ২০১২, ঢাকা: অঙ্কুর প্রকাশনী।
৯.এম এম সিরাজুল ইসলাম, কাঙ্খিত স্বাধীনতা : পূর্বাপর কিছু স্মৃতি, বিজয় স্মারক ২০১২, কক্সবাজার : কক্সবাজার জেলা প্রশাসন
১০. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, আমার দেখা শেখ মুজিব ও কক্সবাজারের স্বাধীনতাসংগ্রাম, বিজয় স্মারক ২০১২, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
১১. কালাম আজাদ, মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজার : জানা অজানা তথ্য, বিজয়স্মারক ২০১২, ডিসেম্বর ২০১২, কক্সবাজার : কক্সবাজার জেলা প্রশাসন
১২.সুলতান আহমেদ (১৯৬৬ সালের উখিয়া হাই স্কুলের ৯ম শ্রেণি এবং স্কুলের ফাস্টবয়, পরবর্তীতে আইনজীবী), ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, ১ জুন ২০১৩, ঝাউতলাস্থ তার বাসায়।
১৪. কালাম আজাদ, মুক্তিসংগ্রামে কক্সবাজার : প্রসঙ্গ রাজনীতি, বিজয়স্মারক ২০১৪, ডিসেম্বর ২০১৪, কক্সবাজার : কক্সবাজার জেলা প্রশাসন
১৫. হারুন-অর-রশিদ, ‘আমাদের বাঁচার দাবী’ ৬-দফা’র ৫০ বছর’, ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ঢাকা : বাংলা একাডেমি।
১৬. কালাম আজাদ,‘রাজাকারনামা’, ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ঢাকা: বর্ণচাষ।
১৭. মো. শাহ আলমগীর সম্পাদিত ‘সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু’ তৃতীয় খণ্ড ॥ ষাটের দশক’Ñ দ্বিতীয় পর্ব’, জুন ২০১৭, ঢাকা : বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট।
১৮.কালাম আজাদ, ‘কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু’, মার্চ ২০২০, ঢাকা: বর্ণচাষ।
১৯. নুরুল আবছার ও অমিত চৌধুরী।
২০. কামাল হোসেন চৌধুরী, কক্সবাজার।
লেখক : কবি ও গবেষক। প্রকাশিত বই : ৪, সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ : কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু
Leave a Reply