1. kalamazad28@gmail.com : risingcox.com : Rising Cox
  2. msalahuddin.ctg@gmail.com : RisingCox :
  3. engg.robel@gmail.com : risingcoxbd :
শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন

সাহসী কলমযোদ্ধা সমুদ্রপুত্র কালাম আজাদ

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৩৭ Time View

কালাম আজাদ একজন কবি, লেখক ও সাংবাদিক। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হন তিনি। আজ ৩৪ বছর পেরিয়ে ৩৫ বছরে পদার্পণ করছেন কবি গবেষক কালাম আজাদ। জন্ম কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং-বত্তাতলী গ্রামের কৃষক পরিবারে। বাংলায় এম এ এবং বঙ্গবন্ধু ল কলেজ (মতিঝিল) থেকে আইন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন।

মূলত সাংবাদিকতা, লেখালেখি নেশা ও পেশা। তবে পেটের তাগিদে ব্রাক নামক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত। পূর্বকোণ, সৈকত, বাঁকখালী, দৈনন্দিন, হিমছড়ি, ইনানী, নওরোজ, আজকের কক্সবাজার বার্তা, সমুদ্রকন্ঠ, রুপসীগ্রাম, যায়যায়দিন, সকালের খবর, কক্সবাজার বাণী, ইউনাটেট নিউজ, দ্যা রিপোর্ট, বিডিনিউজ২৪, যমুনা নিউজ, একতা পত্রিকার সম্পাদনা ও নিউজ সূত্রে জড়িত ছিলেন। বেশ কয়েক বছর দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতাও দেখেন তিনি। এ সময় অনেক তরুণকে লেখালেখি করতে উৎসাহিত করেন এবং অনেকে আজ প্রতিষ্ঠিত।

বর্তমানে কক্সবাজার জেলার জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা রাইজিং কক্স ডটকম (risingcox.com)’র নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখালেখির সাথে জড়িত।

দীর্ঘ ১৬ বছরের লেখালেখির জীবনে ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গবেষণায়ও তাঁর অবদান আছে। তবে প্রাবন্ধিক ও গবেষক হিসেবে কৃতিত্বই বোধ হয় বেশি। তাঁর প্রবন্ধ ও গবেষণা গ্রন্থের নাম : ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার, রাজারকারনামা, কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু, কক্সবাজারের সংগীত ও নাট্যচর্চার ইতিবৃত্ত প্রভৃতি। মার্কসবাদ ও সাম্যবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী কালাম আজাদ বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ লেখক সংঘের একনিষ্ট এবং বামধারা যুব সংগ্রাম ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন নিবেদিত কর্মী। সাহসী কলম যোদ্ধা কালাম আজাদের ৩৫তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাইজিং কক্সের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ ক্রোড়পত্র পাঠকের কাছে তোলে ধরা হলো।

কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু’ : প্রামাণ্য দলিল
অমিত চৌধুরী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির জাতির পিতা। এই জাতির পিতা হওয়ার পেছনে রয়েছে বাঙালির জন্য অসীম দরদ ও ভালোবাসা এবং ত্যাগ তিতিক্ষা। বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান পেতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা এক বিরল ঘটনা। তারই এ কৌশলে ভূমিকার পেছনে রয়েছে কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের কিছু বিরলপ্রজ সংগ্রামীর বিশেষ অবদান।

পঞ্চাশের দশক থেকে পঁচাত্তরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নানাভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে এসেছেন। ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামে রাজনৈতিক সফরে আসলেও ওই সময়ে কক্সবাজারে আসেননি তিনি । তবে তিনি অবগত ছিলেন কক্সবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে। মূলত কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকেই কক্সবাজারের আফসার কামাল চৌধুরীসহ অন্যান্য বন্ধুদের সাথে তাঁর যোগাযোগ। বন্ধুদের নিয়েই তিনি আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলেন। চুয়ান্ন সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পর থেকে পঁচাত্তরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারে অনেকবার এসেছেন তিনি। সে সময় যাঁরা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট ছিলেন এবং যাদের নিয়ে তিনি রাজনীতি করেছেন তাদের কথাই ফুটে উঠেছে ‘কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু কক্সবাজারে রাজনৈতিক সফরের কর্মকাণ্ড সে সময় যে সমস্ত পত্র-পত্রিকায় নিউজ ছাপানো হয়েছে সে সবের এক দূর্লভ প্রতিবেদন এতে রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু কক্সবাজারে যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন তারও বিবরণ রয়েছে এই গ্রন্থ। আরো আছে বঙ্গবন্ধুর চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের শতাধিক আলোকচিত্র। এসবের বিবরণ ‘কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু’ বইয়ে সন্নিবেশিত করেছেন কবি ও ইতিহাস গবেষক কালাম আজাদ। দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম স্বতন্ত্র গ্রন্থ ‘কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু’। ১৭৬ পৃষ্টা সম্বলিত এ গ্রন্থে গবেষক কালাম আজাদ ৫টি অধ্যায়ে বিভক্ত করে পঞ্চাশ দশক থেকে শুরু করে পচাত্তরের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের আগ পর্যন্ত কক্সবাজারের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ও ওই সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করেছেন।

কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু। প্রকাশকাল ২০২০।

প্রথম অধ্যায়ের বিষয় যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও পঞ্চাশ দশকে কক্সবাজারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এ অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রথম সফর, ১৯৫৫ সালের সফর, ছাপ্পান্ন সালে মন্ত্রীসভা গঠন ও কক্সবাজারে প্রথম পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ, ১৯৫৮ সালের শ্রমিক সমাবেশ ও বঙ্গবন্ধুর কক্সবাজার সফর’ পরিচ্ছেদে ভাগ করে পঞ্চাশ দশকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। এ অধ্যায়ে এশিয়ান হাইওয়ে,দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ, কক্সবাজারের লবণের উৎপাদকদের উপর লবণের কর অবিলম্বে বিলুপ্তকরণ, কক্সবাজারে একটি কলেজ, একটি প্রযুক্তি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, তামাক উৎপাদনকারীদের উপর আরোপিত কর হ্রাস, তাঁত ও লবণ বোর্ড গঠনসহ শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক কক্সবাজারের বিভিন্ন জনসভায় দাবি করার প্রসঙ্গটি বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অধ্যায়- উত্তাল ষাটের দশক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন উপলক্ষ্যে কক্সবাজারে কমিটি গঠন, ১৯৬৫ সালের ১৪ এবং ১৫ ডিসেম্বর সংঘটিত প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস কবলিত কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফার প্রচারণার অংশ হিসেবে, ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে কক্সবাজারে নাগরিক সংবর্ধনার অংশগ্রহণ করে নামক পরিচ্ছদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজার সফর করেছেন। এ অধ্যায়ে স্বাধীনতা আগ পর্যন্ত কক্সবাজারের সামাজিক,অর্থনেতিক এবং ভৌগলিক- রাজনৈতিক চরিত্র ও পট পরিবর্তনের নানান দিক উঠে এসেছে। উঠে এসেছে এ সময়ের ব্যক্তি চরিত্রগুলোও।

সত্তরের নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধ’ নিয়ে তৃতীয় অধ্যায় সাজানো হয়েছে। এ অধ্যায়ে সত্তরের নির্বাচনে কক্সবাজার-মহেশখালী আসনের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) পদে স্বতন্ত্রী প্রার্থী মোশতাক আহমদ চৌধুরী (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে কক্সবাজার-মহেশখালী, কক্সবাজার-রামু আসনে এমপি নির্বাচিত হন এবং বর্তমানে কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান) ছাড়া সবকটি আসনে আওয়ামী লীগের জয়, কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধুর সত্তরের নির্বাচনী প্রচারণার ভাষণ, ছাত্রলীগ নেতা ও পুরাতন আওয়ামীলীগ কর্মীদের সাথে কথা বলেন এবং আওযামী লীগকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানানোসহ জয়ের পর ইয়াহিয়া-ভূট্টোসহ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরের গড়িমসি ও টালবাহনা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যাণ্ডের কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে সেনাঘাঁটি করার দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির প্রস্তাব এবং সেই প্রস্তাব বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাখ্যানসহ মুক্তিযুদ্ধের পুঙ্গানুপুঙ্গ আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি সত্তরের নির্বাচন থেকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পর্যন্ত কক্সবাজারের সামাজিক, অর্থনেতিক এবং ভৌগলিক- রাজনৈতিক চরিত্র ও পটপরিবর্তনের নানান দিক তুলে ধরেছেন কালাম আজাদ। তার কলমের ডগায় উঠে এসেছে এ সময়ের ব্যক্তি চরিত্রগুলোও।

‘ত্রিয়াত্তরের নির্বাচন ও পচাত্তরের বঙ্গবন্ধুর কক্সবাজার শেষ সফর’ অধ্যায়ে তথা চতুর্থ অধ্যায়ে যুদ্ধবিধ্স্ত সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে রাজনীতি ও কক্সবাজারের রাজনৈতিক চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি কক্সবাজার সমুদ্রতীরে সুইমিং পুল, বিপনী কেন্দ্র, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন গঠন, হিমছড়ি জলপ্রপাতের উন্নয়ন এবং সৈকতে কুঁড়ে ঘর নির্মাণ, রামুর নারকেল বাগান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার উন্নয়ন, যুদ্ধে বিধ্বস্ত কক্সবাজার বিমানবন্দর সংস্কার কার্যক্রম, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পুর্ননির্মাণ, পরমাণু শক্তি কমিশন, পরিকল্পিত দ্বীপ উন্নয়ন, মাতামুহুরী সেচ প্রকল্প, কুতুবদিয়া-চট্টগ্রাম-চাঁদপুর নৌপথ এবং কক্সবাজার-মহেশখালি জলপথে যাত্রী ও মালবাহী জাহাজ চালুকরণ, কুতুবদিয়া বাতিঘর‘ উন্নয়ন এবং ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলা ও জলোচ্ছ্বাস রোধ ও সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধন ও প্রকৃতিরক্ষায় ঝাউবাগান লাগানো সহ কক্সবাজারের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা বিশদভাবে আলোচনা করা করেছেন লেখক কালাম আজাদ।
পঞ্চম অধ্যায় সাজানো হয়েছে জীবন বৃত্তান্তমূলক টীকা দিয়ে। এতে স্থান পেয়েছে আতাউর রহমান খান, আজিজুর রহমান, আফসার কামাল চৌধুরী, আব্বাস উদ্দিন আহমদ, আবদুল গফুর চৌধুরী, এম এ আজিজ, একেএম মোজাম্মেল হক, এসএএম রফিক উল্লাহ, ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, জহুর আহমদ চৌধুরী, ফজলুল করিম, মৌলভী ফরিদ আহমদ, ফজলুল কাদের চৌধুরী, এডভোকেট বদিউল আলম চৌধুরী, এডভোকেট বদিউল আলম, মওদুদ আহমদ, নুর আহমদ, সিদ্দিক আহমদ, সুধাংশু বিমল দত্ত, যতীন্দ্র কুমার রক্ষিত।

এ গ্রন্থটি শুধু বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নয়- মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজারের ভূমিকা এবং মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব ও পরবর্তী সময়ের কক্সবাজারের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি প্রামাণ্য দলিল হয়ে থাকবে। গ্রন্থটির মুল্য রাখা হয়েছে ৩৬৭ টাকা মাত্র। আশা করি গ্রন্থটি এ গ্রন্থটি শুধু বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নয়- মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজারের ভূমিকা এবং মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব ও পরবর্তী সময়ের কক্সবাজারের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি প্রামাণ্য দলিল এবং কক্সবাজারের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক আকর গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হবে। গ্রন্থটি পাওয়া যাবে অভিজাত বুকস্টল সহ অনলাইন বুকশপে।

বইটির লেখক কালাম আজাদ বলেন, ‘স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে কক্সবাজার সফর করেছেন ১২ বার। কক্সবাজারের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অনবদ্য। বঙ্গবন্ধুর জন্মের শতবর্ষ পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো গবেষণা হয়নি, এ বিষয়ে রচিত হয়নি একটিও স্বতন্ত্র গ্রন্থ। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বুকে নিয়ে কক্সবাজারে এখনো অনেক প্রবীণ ব্যক্তি জীবিত আছেন। আরো বিলম্ব করলে হয়তো তাঁরা সকলেই গত হয়ে যাবেন। তাই কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধুর আগমন ও অবদানের ইতিহাস সংরক্ষণের এাঁই সর্বোচ্চ সময়। আরো দেরি করলে অনেক ইতিহাস হয়তো চলে যাবে ইতিহাসের আড়ালে। তাই কক্সবাজারের একজন সচেতন বাসিন্দা হিসেবে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে নিজের তাগিদ ও দায়িত্ববোধ থেকেই কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু বিষয়ে অনুসন্ধানে নামি। এ অনুসন্ধানে প্রধানত কক্সবাজারের নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ও সাক্ষাৎকারের উপর নির্ভর করতে হয়েছে বেশি।’
অনুজ হলেও ইতিহাসের বিদগ্ধ আলোচনায় প্রয়াসী কবি ও গবেষক কালাম আজাদের ‘কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু’ বইয়ের বহুল প্রচার কামনা করছি।

টুকরো স্মৃতির গল্প এবং কালাম আজাদ
আলম তৌহিদ

মিঠেকড়া শীতে পৌষের নরম রোদের দিনগুলো পেরিয়ে এলো মাঘ। মাঘের দাপুটে শীতের কথা কে না জানে। কিন্তু এখনো তেমন হাঁড় কাপানো আস্ফালন নেই শীতের। উত্তরবঙ্গের মতো ধূসর কুয়াশাময় শৈত্য হাওয়ার সুতীব্র কামড় নেই আমাদের বঙ্গোপসাগরীয় সভ্যতার এই জনপদে। সামুদ্রিক উষ্ণ হাওয়া আমাদের জন্য নিয়ে আসে কিছুটা উষ্ণতা। কিন্তু তা শীত দমনের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই আমাদের প্রয়োজন হয় শীত নিবারণের জন্যে শীতের কাঞ্জিভরম। এখানেই শীত বস্ত্রের সাথে আমাদের একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে যায়। এ সম্পর্ক পরম কাঙ্খিত ও ভালোবাসার।
আসলে সম্পর্ক কি? ইংরেজিতে সম্পর্কের অনেক প্রতি শব্দ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ‘ৎবষধঃরড়হ’শব্দটির চল বেশি। পৃথিবীতে প্রাণি ও জড় উভয় জগৎ হলো এ সম্পর্কের বিনিসুতোয় গাঁথা মালার মতো। আবার নদীর কূল ভাঙ্গার মতো সম্পর্কের ভাঙ্গাগড়ার খেলাও দেখা যায় হরহামেশা।

কালাম আজাদের সাথে আমার সম্পর্কটা তৈরি হয়েছিল হঠাৎ করেই। ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় আমার কাব্য ‘জন্মেই কেঁদেছি ভীষণ’। কক্সবাজার পাবলিক ইন্সটিটিউট ও লাইব্রেরি মাঠে তখন বই মেলা চলছিল। মেলায় আমার সামনে এসে দাঁড়াল হাসি হাসি মুখ নিয়ে হাল্কা-পাতলা গড়নের একটি ছেলে। অপ্রত্যাশিতভাবে আমার কাছে একটি বই চেয়ে বসল। বলল, ভাইয়া আমাকে একটা বই দেন, আমি রিভিউ লিখব, আমার নাম আবুল কালাম আজাদ। সেই ছেলেটিই স্বীয় মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে আজ পরিণত হয়েছে কালাম আজাদ নামে।

তারপর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত কালাম। এভাবেই ঘনিষ্টতা এবং তৈরি হয়ে গেছে অদৃশ্য এক সম্পর্কসেতু। তখন প্রতি সন্ধ্যায় আমরা আড্ডায় বসতাম প্যানোয়ার নাহার রেস্টুরেন্টে। কালামের চটপটে স্বভাব ও দ্রুত কমনিকেট করার ক্ষমতা তখনই আমাকে মুগ্ধ করেছিল। বুঝেছিলাম এই ছেলে অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
কালাম সম্পর্কে বলতে গেলে স্মৃতিতে অনেক কথা এসে ভিড় করে। একবার সপরিবারে কক্সবাজার বেড়াতে এলেন স্বনামধন্য কবি ও আদিবাসী গবেষক হাফিজ রশিদ খান। তারা মহেশখালী ও ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক ঘুরতে যাবেন। ব্যস্ততার দরুন আমার পক্ষে সঙ্গ দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই হাফিজ ভাইয়ে সঙ্গে পাঠালাম কালামকে। সম্ভবত কালামের সঙ্গে কবি মাসউদ শাফিও ছিল। সেদিন হাফিজ ভাইয়ের মুখে শুনেছিলাম তাদের আন্তরিক গাইড প্রদানের প্রশংসা। আরো কত কাজে কালাম ছিল নিবেদিত প্রাণ।

যে ঘটনা আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে তা শত শতাব্দীর বৃষ্টির জলে ধুয়ে দিলেও মুছে যাবে না। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা কক্সবাজার আগমন করলেন। উদ্দেশ্য কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক কবিতামেলার আয়োজন করবেন। আমরা ক’জন কবি-সাহিত্যিক কবিতা বাংলার পক্ষ থেকে তাঁর সাথে মিলিত হলাম। সিদ্ধান্ত হলো ‘দরিয়ানগর কবিতামেলা, ১৪১৬’ কক্সবাজারেই অনুষ্ঠিত হবে। মেলা উদ্বোধনের তারিখ ধার্য্য হয় ২৬ এপ্রিল ২০০৯ খৃষ্টাব্দ। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার প্রায় তিন শতের অধিক কবি-সাহিত্যিক এই মেলায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন। আমাকে করা হয়েছিল ‘প্রচার-প্রকাশনা ও রেজিষ্ট্রেশন ‘ উপ-কমিটির আহবায়ক। কালাম আজাদ ও মাসউদ শাফি এই কমিটির সদস্য ছিল। ‘দরিয়ানগর কবিতামেলা ১৪১৬’ স্মারক সম্পাদনার দায়িত্ব বর্তাল আমার উপর। আমার সার্বক্ষণিক সহযোগী ছিল কালাম। মেলা শুরু হওয়ার মাত্র তিনদিন পূর্বে আমরা প্রকাশনার মেটারগুলো হাতে পাই। তখন কক্সবাজারে ভয়াবহ রকমের লোডশেডিং চলছিল। একটানা ৩০ মিনিটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল না। বিদ্যুৎ একবার গেলে কবে ফিরে আসবে তারও কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। এই নাজুক পরিস্থিতিতে কালাম কোনো প্রকারে কম্পোজের কাজগুলো সমাপ্ত করতে পেরেছে। তারপর আমরা ট্রেসিং পেপার নিয়ে বদর মোকামস্থ একটা প্রেসে গেলাম ছাপানোর কাজে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কাজ কিছুতেই অগ্রসর হচ্ছিল না। এদিকে হাতে সময়ও কমে এলো। পুরো দুই দিন সময়ও হাতে নেই। ২৬ এপ্রিল সকাল ৮টায় প্রকাশনা নিয়ে মেলায় উপস্থিত থাকতে হবে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম সারারাত প্রেসে ডিউটি করব, যাতে লোডশেডিং এর সময় প্রেসওয়ালা প্রেস বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতে না পারে। আমাকে সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিল কালাম আজাদ ও মাসউদ শাফি। আমাদের অঘুমের দু’টি রজনী কাটিয়ে ২৬ এপ্রিল সকালে আলোর মুখ দেখল ‘দরিয়ানগর কবিতামেলা ১৪১৬’ স্মারকটি। এরকম ত্যাগ স্বীকারে আমি কালামের মধ্যে কখনো কার্পণ্য দেখিনি।

২০১০ সালের শেষের দিকে আমি আরব আমিরাত চলে যাই। আমার প্রবাস জীবন কাটে প্রায় ৬ বছর। কালাম প্রায় যোগাযোগ রাখত। হয়ত এটাই বুঝি সম্পর্ক। ২০১৫ সালে বের হয় কালামের প্রথম গ্রন্থ ‘ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার। বইটি প্রকাশিত হয় ‘তৃতীয় চোখ’ ঢাকা থেকে। কক্সবাজারের ইতিহাসে এটি একটি মাইল ফলক। কেননা ইতিহাস রচনায় কক্সবাজার এখনো বহু পিছিয়ে রয়েছে। তরুণ গবেষক হিসাবে তার কাজটিকে কোনোভাবেই খাট করে দেখার অবকাশ নেই। প্রবাসে বসেই ‘ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার : ইতিহাসের দূরবীন’ নামে একটি রিভিউ লিখি। তখনো আমি বইটি হাতে পাইনি। কালামের পাঠানো ই-মেইল কপি পড়েই আমাকে কাজটি সারতে হয়েছে। হয়ত গ্রন্থের অনেক বিষয় উপস্থাপন করতে পারিনি আমার লেখায়।

২০১৬ সালে ‘বর্ণচাষ’ থেকে প্রকাশিত হয় কালাম আজাদের দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘রাজাকারনামা’। কালাম যে একজন সাহসী কলম সৈনিক এ গ্রন্থটি তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী কক্সবাজারের সম্ভ্রান্ত মিয়া-চৌধুরীদের কথা লিখতে গিয়ে কক্সবাজারের বাঘা বাঘা লেখকদের কলম ছিল অত্যন্ত নমনীয়। ফলত আমরা কখনই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ও স্বচ্ছ ইতিহাস জানতে পারি নাই। এই প্রথম কালাম হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গল। মুখোশের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসল রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও শান্তি কমিটির হর্তাকর্তা এবং সদস্যদের মুখগুলো। এই কাজের জন্য কালাম অনেকের বিরাগভাজন হয়েছে। তাতে কি আসে যায়? সত্য ও ন্যায়ের কলম কখনো থামেনা এবং করেনা কারো সাথে আপোষের দফারফা। আশা রাখি এই অবিচলতা কালামকে নিয়ে যাবে আরো অনেক দূরে।

২০২০ সালে ‘কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থটিও প্রকাশিত হয় ‘বর্ণচাষ’ থেকে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এ জাতীয় গ্রন্থ ইতিপূর্বে কক্সবাজার থেকে রচিত হয়নি। ইতিহাস থেকে জানা যায় বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় বহুবার কক্সবাজার এসেছিলেন। তাঁর কক্সবাজার ভ্রমণ ও কর্মকাণ্ডের ইতিহাস কক্সবাজারবাসীর জন্য যেমন মূল্যবান এবং গৌরবের, তেমনি বঙ্গবন্ধুর পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ রসদ। বঙ্গবন্ধুর এসব কর্মতৎপরতার ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বিভিন্ন বই-পুস্তকে, চিঠিপত্রে, সংবাদপত্রে, সরকারি অফিসের ফাইলপত্রে এবং প্রত্যক্ষদর্শী রাজনেতিক ব্যক্তিদের শ্রুতি ও স্মৃতিতে। কালাম এসব ঘটনাবলীকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে গ্রন্থিত করে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছে। এভাবে পুরানো ইতিহাসের নবায়ণ না হলে হয়ত কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধুর কতো ইতিহাস কালের গর্ভে কিংবা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতো। কালাম তার কাজের জন্য অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।

দীর্ঘ এক বছরেরও অধিককাল ব্যাপী বৈশ্বিক মহামারী করোনা দুর্যোগের ভয়াবহতার ভিতর দিয়ে আমরা পদার্পণ করেছি ২০২১ সালে। দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের অন্তহীন প্রচেষ্টাও থেমে নেই। শত লকডাউনেও থেমে নেই মানুষের সার্বিক কর্মকাণ্ড। কেননা মানুষ স্থবির প্রাণি নয়। তাই থেমে নেই কালামের কলমও। ঢাকা একুশে বইমেলার অনিশ্চতার দোলাচালের মাঝেও কালাম আমাদের সুসংবাদ দেয়; এ বছর জাগতিক প্রকাশন থেকে প্রকাশ হতে যাচ্ছে ‘কক্সবাজারের সংগীত ও নাট্যচর্চার ইতিবৃত্ত’ ও তৃতীয় চোখ থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধে আরাকানে বাঙালি শরণার্থী’ নামে তার দু’টি গ্রন্থ।

ঋতু পরিক্রমায় আসে বসন্ত। এ সময় প্রকৃতির পরিবর্তনগুলো চোখে পড়ে। মাঠে-ঘাটে, বিলে-ঝিলে, বন-বাদাড়ে রকমারি ফুল ফুটে, পাখিরা গায় ঋতুর গান। বসুন্ধরা হয়ে ওঠে অপরূপা। আজ ২৫ জানুয়য়ারি ২০২১ সাল। বসন্তের কোনো দিন নয়। তবু কালামের জীবনে এলো ৩৫টি পুষ্প বসন্ত। আজ কেন জানি মনে হচ্ছে, বঙ্গোপসাগরীয় সভ্যতার সাগরতীরে সকলের অগোচরে ফুটে আছে ৩৫টি লাল গোলাপ। জয় হোক ৩৪তম জন্মবর্ষ। বস্তুর বর্নীল রঙে উদ্ভাসিত হোক তোমার ও কবি রওনক জাহানের যুথবদ্ধ জীবন।

কালাম আজাদের জন্মদিনে
মোশতাক আহমদ

কালাম আজাদ কবি ও সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আমার কাছে তার গবেষক সত্ত্বাকেই অধিকতর প্রণিধানযোগ্য মনে হয়। কক্সবাজারে বংগবন্ধুর অজানা অধ্যায়, শহীদ সাবেরের মতো অনুসরণযোগ্য কিন্তু কম মূল্যায়িত সাহিত্যিককে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা, রাজাকারদের ঠিকুজির সন্ধান, নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ইতিহাস সন্ধান ইত্যাদি নানা বিচিত্র দিকে তার অনুসন্ধান জারি আছে। সেই ফাঁকে কখন কোথায় যেন তার কবিতার পাণ্ডুলিপি ‘জলের বোতাম’ অতলে লুকিয়ে গেছে!

সাহিত্য সম্পাদক হিসেবেও কালাম আজাদ উদ্যমী। গেল বছর করোনাবন্দি সময়ে যখন অপ্রকাশের ভার নিয়ে অবরুদ্ধ ছিলাম, কালামের আগ্রহে তার অনলাইন সাহিত্যের পাতায় আমি বেশ কিছু লেখা প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি।

কালামের কাছ থেকে বই ধার নিয়েও আমি বেশ উপকৃত হয়েছি। তার লেখা বইগুলো আমি উপহার হিসেবেই পেয়েছি।

বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট কালাম। ২০১১ সালের শুরুতে কর্মসূত্রে কক্সবাজারে এসে তার সাথে পরিচয়। কনিষ্ঠ কবি হিসেবেই জানতাম। আজ দেখি তার ৩৫ তম জন্মদিন! কালামেরও বয়স হচ্ছে – এই অবিশ্বাস নিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য লিখতে বসেছি।
কালাম সাধক হবার মতো ধৈর্যশীল মানুষ, সেটা তার সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমেই বুঝতে পারা যায়। আরও বিচিত্র দিকে তার সাধনার ডালপালা ছড়িয়ে যাক আর অন্তত প্রথম কবিতার বইটা প্রকাশিত হোক এই কামনা করছি।

এ জন্ম অলাভের নয়!
অধ্যাপক আলমগীর মাহমুদ

সন্তান জন্মদান,ভাতেরে মাটি বানাতে অধিকাংশ মানুষ পৃথিবীতে আসে। যারা এমন গতানুগতিক ধারা-চর্চায়, তাদের কাছে সম্পদ -ব্যাংক ব্যালেন্সই জীবনের ব্যালেন্সশীট। যার যত জমা তারে তারা ততবেশী বড় মনে করে। স্কুল কলেজ মসজিদ মন্দিরের সভাপতির পদ তার জন্য অনেকটা রেজি করা। কি যোগ্যতা? উত্তর রয় রেডিমেট। তার আছে।
ব ক ল ম হইছেতো কি হইছে? জ্ঞান গরিমা না থাকলেও পাত্তিওয়ালার ক্ষেত্রে সমাজের মাইন্ড নাই। ঠিক এমন এক সমাজবাস্তবতায় কালাম আজাদ সামাজিক চলমান ধারা বিরোধী কলম যোদ্ধা।

ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাঁড়ানো। বল নয় ফূর্সা বল যাহ শরীরে ডাইবেটিস ব্লাডপ্রেশার ষ্ট্রোকের ঝুকি বাড়ায় তাহ প্রতিরোধে বজ্রকঠিন সোচ্চার কন্ঠের,শক্তিমান লেখনির অগ্নি স্ফূলিঙ্গ।
মাঠে ময়দানে কালাম আজাদের এমন সৃষ্টি চষে বেড়াচ্ছে, বদলাতে। বদলানোর মিছিলে কালাম আজাদের এই জন্ম সৃষ্টিশীলদের পহেলা বৈশাখ।

উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবে কেক কাটার। রাইজিং কক্স ডটকম এর সম্পাদক সালাহউদ্দিন আকাশের আহলান-সাহলানে বিশেষ ক্রোড়পত্র আয়োজনের ।
এ জন্ম যে সৃষ্টিশীলদের লাভের,গর্বের!

লাল সালাম কমরেড…
ডমিনিক ক্যাডেট

আনন্দ পাখিটা ডানা ঝাপটায় উড়বে বলে বনে,
দাওনা ছেড়ে উড়ুক না সে জন্মদিনের ক্ষণে…
শুভ জন্মদিন প্রিয় কমরেড। এই আনন্দের দিনটি আপনার জীবনে বার বার আসুক। শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে আরো শানিত হোক আপনার প্রতিবাদ। আপনার জীবন হোক অন্যের জন্যে অনুকরনীয়।
শুভ কামনা
আর
লাল সালাম কমরেড…
যুগ যুগ জিও

শাহনামা নয়, রাজাকারনামা
সন্তোষ দাঁ

পারস্যের কবি আবুল কাশেম ফেরদৌসী ইরানের প্রয়াত শাহদের জীবন কাহিনি নিয়ে রাজ নির্দেশে লিখেছিলেন ‘শাহনামা’ মহাকাব্য। সঙ্গে রাজ নির্দেশনা ছিলো প্রতিটি চরণ রচনার জন্য একটি করে স্বর্ণমুদ্রা দেয়ার প্রতিশ্রুতি। শাহনামা লেখা হয়েছিল ৬০ হাজার চরণের বাঁধনে। কিন্তু শাহনামা রচনার পর দেখা গেল ষাট হাজার স্বর্ণমুদ্রা দেয়া তো দূরের কথা কবি নির্যাতনে নির্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বাঙালির দেশ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরোধিতা কওে পাকিস্তানি খান সেনাদের সাহায্য করে তারা ছিল ফারসি শব্দে ‘রাজাকার’। ‘রেজাকার’ ফারসি শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় রেজা মানে সাহায্যকারী আর কার মানে যিনি কাজ করেন। অর্থাৎ সাহায্যকারী। শব্দার্থ মন্দ নয়। তবে স্বদেশের বিরুদ্ধে, সজ্জনের বিরুদ্ধে কিংবা আত্মঘাতী ভাইয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া তো বিশ^াসভাজনের কাজ নয়। নয় কোনো দেশপ্রেমের। এরা প্রকৃত অর্থে বিশ^াসঘাতক। বিভীষণ, মীরজাফর, নেত্র সেন, গোলাম আজম, খন্দকার মোশতাক, ছালাবাী…। এজনই এ ধরনের নাম অন্য কেউ রাখে না এখন।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের যারা কক্্সবাজার মহাকুমা অঞ্চলে পাক নামের না পাক বাহিনীদের সাহায্য করেছিল তাদের সহস্তলিখিত দালিলিক সংযোজনায় ‘রাজাকারনামা’ ৮ ফর্মার পেপারব্যাক গ্রন্থটি বিশেষ কৃতিত্বের দাবি রাখে। কারণ এ রকম দালিলিক বর্ণনা সহকারে যদি বাংলাদেশের সব জেলা থেকে আরো ‘রাজাকারনামা’ প্রকাশিত হয়, তাহলে তথ্য ও সত্যের আলোকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা এবং স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালতি কার্যক্রমের রেফারেন্স এবং জাতির ইতিহাস রচনায় ‘রাজাকানামা’ এবং এ জাতীয় গ্রন্থের মূল্য অনেকাংশে বেশি গুরুত্ব পাবে।
এ গ্রন্থের প্রথমে বাঙালি গণহত্যা ও শান্তি কমিটি, পাকিস্তান শান্তি ও কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মৌলভী ফরিদ আহমদের ভূমিকার প্রসঙ্গ তথ্যযুক্ত। আর পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রিয় শান্তি কমিটি ও মৌলানা সিদ্দিক আহমদের ধর্মের ফতোয়াবাজির আড়ালে ধর্মরক্ষার অজুহাতে বাঙালি নিধনে বিবৃতিসহ সহ সিদ্দিক আহমদের উস্কানি এবং দেশ স্বাধীন পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাকে গাদ্দার উল্লেখ করা সহ বিভিন্ন ভূমিকা প্রসঙ্গিত আলোচনা রয়েছে তৃতীয় অধ্যায়ে। এ বইয়ের কক্সবাজারে শান্তি কমিটি, আলবদর ও রাজাকার বাহিনীর তৎপরতা অধ্যায়ে কক্সাবাজারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পাক বাহিনির দোসরদদেও তৎপরতা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে কক্সবাজার শান্তি কমিটি গঠন, কক্সবাজারের আনসার বাহিনীর কমান্ডার আবু তাহের চৌধুরী, সুলতান আহমদ প্রকাশ মুইচ্চা সুলতানদের ক্যাপ্টেন ফরহাদ বাহিনীর বিরদ্ধে ষড়যন্ত্র, অত্যাচার নির্যাতন এবং পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি এবং সুবেদার আবদুল লতিফ, সিপাহী আবুল হোসেন, ছাত্র ইউনিয়ন তো সুভাষ দাশসহ ১৭জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা এবং দোহাজারীতে অবস্থানরত পাক বাহিনীকে কক্সবাজারে নিয়ে আসার জন্য মইদুর রহমান চৌধুরী, নাজির মকবুল আহমদ, এডভোকেট বদিউল আলম (সাংবাদিক সায়েদ জাালাল আহমদ এবং কক্সবাজার সিটি কলেজের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিনের জ্যেঠা), আনসার কমান্ডার সুলতান আহমদ খানকে পাঠানো এবং ৫ মে কক্সবাজারের পতনের বিরুদ্ধে পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের তৎপরতা ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। মূলত ক্যাপ্টেন ফরহাদ এবং তার দলকে রাজাকার কর্তৃক গ্রেফতারের পর থেকেই কক্সবাজারের প্রতিরোধ যুদ্ধ থেমেই যায় এবং পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের দোসর স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজত্ব কায়েম হয়। এ সময় কারা কারা জড়িতে ছিলেন সেসব প্রসঙ্গ রাজাকারনামা’য় বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে শান্তি কমিটি, আলশামশ এবং আলবদর বাহিনী কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষকে অত্যাচারের কাহিনী।

রাজাকানামা (২০১৬)

আলোচনা করা হয়েছে পিডিপি আজিজুর রহমান, আলবদর প্লাটুন কমান্ডার এনামুল হক মঞ্জু (যিনি পরবর্তীতে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের বাংলাদেশ সংস্করণ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং তৃতীয় সভাপতি, ১৯৯১ সালে জামায়াতের জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন), জালাল আহমদ চৌধুরী ও কুতুবদিয়া শান্তি কমিটি, টেকনাফ শান্তি কমিটি ও আবদুল গফুর চৌধুরীর একাত্তরের বিতর্কিত ভূমিকা প্রসঙ্গেও।
সামরিক জান্তা এবং শান্তি কমিটির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ এবং বিমানবন্দরে হামলা অধ্যায়ে ৪ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় মহকুমা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে মহকুমা শহরের সমস্ত কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এক জরুরি সভায় মুক্তিকামী বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, শিক্ষক এবং উচ্চ পদস্থ সরকারি অফিসারদের হত্যা করার তালিকা তৈরিকরণ। এ সভা শুধু কক্সবাজারে নয়, পূর্ববাংলার ১৭ জেলার ৫২ মহকুমার প্রতিটিতে বুদ্ধিজীবী, স্থানীয় নেতা ও উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের গণনিধনের দিন ধার্য ছিলো। স্থানীয় নেতা , গণ্যমান্য লোক ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের সভা হতে সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে অনেককে উঠিয়ে নিয়ে সেনা সদস্যদের জিম্মায় আলবদর বাহিনীর হাতে তুলে দেবার কথা ছিলো। একটি তালিকা তৈরি করে তা যাচাই বাছাই করার জন্য ভোরে কুখ্যাত নরখাদক পাঞ্জাবি ক্যাপ্টেন আসিফ রেজভি, মউদুর রহমান চৌধুরী, এডভোকেট সালামত উল্লাহ, মহকুমা মেডিকেল অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান নামে কুচক্রী মহল অপারেশন প্ল্যান তৈরি করতে বিমানবন্দরে মিলিত হন হন । কিন্তু ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজার বিমান বন্দরে বোমা বর্ষণ করায় এবং তাতে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মইদুর রহমান চৌধুরী নিহত এবং শহর শান্তি কমিটির আহ্বায়ক পিডিপি নেতা নাজির আহমদ পঙ্গত্বু বরণ করায় শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর কমিটি এবং পাক হানাদার বাহিনীর হত্যা পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এ দিকে পাক বাহিনীর অবস্থায় এমন পর্যায়ে এতটা খারাপ হয়ে গেল যে, পাকিস্তান তার সমাধান খুঁজে না পেয়ে ৩ ডিসেম্বর ভারত আক্রমণ করলে ভারতও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আস্তে আস্তে পাক বাহিনীর ঘাঁটিতে বোমা ফেলতে শুরু করে। পাশাপাশি বিমানবন্দরও ধ্বংস করে তারা। ৪ ডিসেম্বর শনিবার সকালে ‘রণতরী ভ্রিকান্ত’ এর সহায়তায় ভারতীয় বিমান বাহিনী কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রায় ২০ মিনিট হামলা চালিয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে। ‘ভারতীয় বিমানবাহী রণতরী ‘বিভ্রান্ত’ কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের ঘাাঁটিগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে।…চট্টগ্রাম বন্দর ও কক্সবাজারের ওপর বিমান আক্রমণ চালিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী ছয়টি জাহাজ রকেট নিক্ষেপে ক্ষতি করেছে। বিমানবন্দরের সমস্ত সামরিক দ্রব্য, তেলের ডিপো ও কক্সবাজারের ওয়ারল্যাস স্টেশন অকেজো করে দেওয়া হয়েছে।
সাহসী লেখক কালাম আজাদ ‘রাজাকারনামা’ গ্রন্থের ভূমিকায় বলে দিয়েছেন-‘ একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীদের তৎপরতা, নির্যাতন এবং তাদের দোসরগিরির চিত্র নিয়ে রাজাকারনামা’। জানি, এ গ্রন্থ প্রকাশ হওয়ার পর আমার উপর নানামাত্রিক চাপ আসবে। তবুও শাসক কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি, কারো কোনো প্রলোভন বা হুমকি আমায় দায়িত্ব ও কর্র্তব্যপথ থেকে বিচ্যুত, সত্য উচ্চারণ থেকে বিরত করতে পারবে না। আমৃত্যু সত্যের উচ্চারণ করে যাবোই। ’ ঘাতক দালালেরা আজ সমাজের সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। রাজনৈতিক মাঠে তারা বিচরণ করছে বহাল তবিয়তে। বইটি পাঠ করে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির প্রতি ঘৃণা এবং সেই শক্তিকে নির্মূল করার প্রয়াস পেলেই তবে আমার পরিশ্রমের সার্থকতা মিলবে। ’ সত্যিই সাহসী কালাম আজাদের পরিশ্রমের সার্থকতা যে তিনি রাজনৈতিক আড়ালে ঘৃণিত ব্যক্তিদের চরিত্র উন্মোচন করেছেন এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে ঘৃণা করতে বলেছেন এবং ্আপামর জনসাধারণ রাজাকার ও তাদের গোষ্ঠীদের ঘৃণার চোখে দেখছেন।
সাহসী লেখক সাংবাদিক কালাম আজাদের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি এবং এবং দোয়া করি যেন সামনে আরো কঠিন কঠিন কাজে হাত দিতে পারেন।


ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজারের ভূমিকা প্রসঙ্গ
আলী প্রয়াস

আমাদের মানস চেতনার উচ্চ পটভূমির নাম ভাষা আন্দোলন। বাঙালি জাতির মহৎ অহংকারের অনন্য নির্মাণ। বায়ান্নে বাঙালি তার মাতৃভাষাকে সমুন্নত রেখেছিলো এক আশ্চর্য লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে। যে লড়াই পূর্ববাংলা জুড়ে সাবলীল ও সংগ্রামী গতি খুঁজে পেয়েছিল। জন্ম হয়েছিলো অসাধারণ এক জাতীয় জাগরণের। সেই জাগরণের ঢেউ কক্সবাজারেও লেগেছিলো। যা ওই সময় এবং তৎপরবর্তী আন্দোলনকে জনঋদ্ধ করেছিল তাৎপর্যমণ্ডিতভাবে। ফলে কক্সবাজারের প্রগতিশীল ও সমাজ সংলগ্ন চিন্তাধারাকে দান করেছিল প্রত্যয় ও সংস্কৃতি চর্চার আন্তরিক প্রেরণা।

নিষ্ঠাবান তরুণ গবেষক কালাম আজাদ তাঁর নিজ জেলার ভাষাসংগ্রামের স্বচ্ছচিত্র অঙ্কন ও ইতিহাস উৎঘাটনের প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ ও জেলার জন্য নতুন সংযোজন। সংগ্রামমুখর দিনগুলোর ইতিহাস উজ্জ্বল করতে অঞ্চল বা জেলাভিত্তিক যে তথ্য-উপাত্ত দরকার তা পাওয়া দুষ্কর বটে কিন্তু সংগ্রহ করা সম্ভব। সেই দিনগুলোর অনুপুঙ্খচিত্র ও চরিত্র তুলে ধরার জন্য ভাষাসংগ্রামীদের স্মৃতিচারণের উপর নির্ভর করতে হয়েছে লেখককে। এটি কেবল ভাষা আন্দোলন কিংবা ভাষা-জাগরণের উপর সময়ের রচনা বা অনিবার্য প্রকাশ নয়, একই সাথে এতে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সামাজিক চিত্র তথা জনমানসের সামগ্রিক পরিবেশও ওঠে এসেছে। তাই ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার একদিকে অঞ্চলের কথকতা, অন্যদিকে ধারণ করে জাতির ইতিহাস পরিচয়।

ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার

ভাষা আন্দোলন রক্ত আর অশ্রুসিক্ত ইতিহাস। বয়সে নবীন হলেও কালাম আজাদের পরিশ্রমলব্ধ ভাষা -ইতিহাসের এই বই কক্সবাজার জেলাকে গৌরবান্বিত করবে। লেখক নিজেও গৌরবান্বিত হবেন। আমরা যারা জেলাভিত্তিক ইতিহাসের বড় সম্ভাবনার কথা ভাবছিলাম এবং অভাব অনুভব করছিলাম-এই বই তার কিছুটা লাগবে করবে। তবে এই বইয়ে ১৯৫২ থেকে আজ পর্যন্ত জেলার একুশ উদযাপন, একুশ কেন্দ্রিক লেখালেখি, প্রকাশনা ও শহিদমিনার এর ইতিহাসের স্বতন্ত্র অন্বেষণ এবং তথ্যচিত্র সংযোজনের প্রয়োজন ছিল। ভবিষ্যতে কোন গবেষক হয়তো সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের সন্ধান দিবেন।

স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রামাণ্য দলিল : রাজাকারনামা
বঙ্গ রাখাল

বর্তমান সাহিত্যে উপন্যাস, কবিতা, ছোটগল্পের গ্রন্থ মিললেও উচুমানের গবেষণাধর্মী গ্রন্থের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটা। নবীন বা প্রবীণদের দুয়েকটা গ্রন্থ ভালো মানের মনে হলেও তা অধিকাংশই হয়েছে চর্বিত চর্বন। কিন্তু সম্প্রতি বর্ণচাষ নামক একটি প্রগতিশীল প্রকাশনা প্রকাশ করেছে কবি-প্রাবন্ধিক কালাম আজাদ-এর গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘রাজাকারনামা’।

এ গ্রন্থের শিরোনামেই বোঝা যায় একাত্তর সালে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাক হানাদার দোসর হিসেবে যারা- শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস, রাজাকারদের দোসরগিরি করেছে তাদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

এ গ্রন্থ পাঠ-বিশ্লেষণে বোঝা যায় যে, লেখক কালাম আজাদ ‘রাজাকারনামা’ প্রণয়নে গভীর নিরীক্ষা এবং একনিষ্ঠ পাঠের মাধ্যমে কঠোর পরিশ্রমী গবেষকের পরিচয় দিয়েছেন। অনেক হুমকি ধমকি এসেছে তার উপর। কিন্তু কোনো কিছুকে পরওয়া না করে নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে রাজাকার তথা স্বাধীনতাবিরোধীদের তৎপরতা, নির্যাতন, এবং তাদের দোসরগিরির চিত্র সম্পর্কে জানান দিতেই তিনি রচনা করলেন ‘রাজাকারনামা’।

কালাম আজাদ একজন সচেতন গবেষক। জীবন ধরে কাজ করতে চান ইতিহাস-ঐতিহ্যকে আশ্রয় করে। সে লক্ষ্যেই হাত দিয়েছিলেন ‘রাজাকারনামা’ গ্রন্থ প্রণয়নে। সেই সূত্র ধরে নিবিড় পাঠ, সরকারি নথিপত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ও ডায়েরি, স্বাধীনতাবিরোধীদের ডায়েরি এবং ওই সময়ে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা এবং মাঠ পর্যায়ে ফিল্ড ওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন তথ্য এবং উপাত্ত।
এ গ্রন্থটিতে মূলত কক্সবাজারের ঘটনাবহুলতায় ফুটে ওঠেছে। কক্সবাজারের চিত্র তুলে ধরতে পাকিস্তান শান্তি ও কল্যাণ কাউন্সিলের সভাপতি-পিডিপির সহ-সভাপতি মৌলভী ফরিদ আহমদ (স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ধৃত হন এবং নিহত হন) এবং পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রিয় শান্তি কমিটির প্রভাবশালী সদস্য- নিখিল পাকিস্তান নেজামে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রধান মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, আলবদর প্লাটুন কমান্ডার এনামুল হক মঞ্জুর (সাবেক এমপি ও বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রিয় নেতা) তৎপরতা তুলে ধরতে গিয়ে জাতীয় ও আন্তজার্তিক বিষয়াদি তুলে ধরেছে এ গ্রন্থে। এ হিসেবে বলা যায় মূলত কক্সবাজারের স্বাধীনতাবিরোধীদের তৎপরতা, নির্যাতন এবং তাদের দোসরগিরির চিত্র নিয়ে রাজাকারনামা রচিত হলেও তা বাঙালি জাতির ইতিহাসের অংশ।

কারণ জাতীয় ইতিহাস রচনা করতে প্রয়োজন আঞ্চলিক ইতিহাস। আঞ্চলিক ইতিহাস ব্যতিত কখনো জাতীয় ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। এ কারণে আঞ্চলিক ইতিহাসের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কালাম আজাদ ‘রাজাকারনামা’ প্রণয়ন করে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের জেলা ভিত্তিক পরিচিতি তুলে ধরে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির প্রতি ঘৃণা এবং সেই শক্তিকে নির্মূল করার প্রয়াস চালাতে।

এ গ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পারবো রাজাকার শব্দের উৎপত্তি, শব্দটি কখন কিভাবে কাদের দমন করার জন্য ব্যবহার করেছেন এবং ‘রাজাকার’ গুন্ডাবাহিনী কিভাবে মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করেছে এবং পাক বাহিনীর হাতে উপঢৌকন হিসেবে তুলে দিয়েছেন তার চিত্র।
এ গ্রন্থে তিনি কক্সবাজারের অতীত ইতিহাস নির্ভর অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান দিয়েছেন যা অন্য গবেষকরা কখনো দিতে সাহস করেনি। কালাম আজাদ বাম প্রগতিশীল ছাত্র-যুব সংগ্রামের রাজনীতিক এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিবারের সদস্য হওয়াতে নির্ভয়ে তা সবাইকে জানাতে সক্ষম হয়েছেন বলে আমার মনে হয়েছে।

এ গ্রন্থ প্রকাশের দায়িত্ব নিয়ে ঝকঝকে ছাপা এবং গ্রন্থটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করায় বর্ণচাষের প্রকাশক মিফতায়ুর রহমান এবং আকষর্ণীয় প্রচ্ছদ করায় নির্ঝর নৈঃশব্দ্যকেও অশেষ ধন্যবাদ। বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Comments are closed.

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 Rising Cox
Theme Customization By NewsSun