ছেলেকে লিখি
কী জানতে চাও , বাবা, পুকুর পাড়ে
বাতাবি লেবু , দাঁড়িয়ে আছে,
যদিও , ঝড়েজলে কিছুটা হেলেছে ,
তোমার মায়ের কবর,এই আষাঢ়েও
আল্লাহর করুণা, পুরোটা অক্ষত,
যৎসাামান্য, ধ’সে নি বেলেমাটি;
কিন্তু, জেনে লাভ, তোমার তো
বোধ হয়, আসা আর হল না,
হবে না, কামনা বাসনা অবশেষে,
আর যদি সম্ভবও হয়, ভয়ে থাকি;
এই যে শুনি, বায়োটেক বৈজ্ঞানিক,
এ আই ,কী সব আগ্রসনে,দ্রুত
আজ, শিম্পাঞ্জি চিনবে না মানুষ
দেখা হলে, বাবা, তুমি কি চেনো
আমাকে বা আমি তোমাকে, এতটাই
হারিয়ে যাই, একে অন্যজন থেকে
দূরদেশি বলে নয়, অদৃশ্য চালিত
নিখাদ অবয়বে, মস্তিষ্কমহজ্, বাবা
পদ্মদিঘি পদ্মপাতা টলমল জল, পাপড়ি
আমি , এই ভোরে, দাওয়ার কিনারে, ঘ্রাণ পাই
উপপাদ্য, ছায়া
এ মূহুর্তে, চোখের ওপর,
হাঁটে ঘোরে ফেরে চলে আসে,
বুক ফেঁড়ে শ্বাস, মুখ আগলে,
কাছে দূরে বহুদূর দূর
চেনা বা অচেনা আধচেনা
কৈশোর যৌবন বার্ধক্যের
আখণ্ড বিখণ্ড দ্বিখণ্ডিত
ধূপছায়া, দৃষ্টির গহ্বরে
কার ছায়া, কে জানে , কে বলে,
কুণ্ডলি পাকিয়ে কোন, এক
মন্দাকিনী তীর বরাবর,
সমাচ্ছন্ন সংকেত, দুরূহ
অপাঠ্য দুষ্পঠ্য, নিষ্প্রোয়জনীয়
বেশ আছি, আরও কিছুকাল
সাগরে, ঢেউয়ের ছায়া
বাতাসে আলোর, ধূসরাভ !
তর্পণ
কে ঘুমায় , কে এখনো জেগে ,
কোথায়, সে কালে পাপড়ি মেলে
হাওয়া, দিল তাল, বেতালের ;
সকল বন্ধুর, ছায়াআলো
মুখ, ওই ভৈরব ওপারে,
অপস্রিয়মাণ; ফিরে আসে ;
ফেরে কি ফেরে না, চতুর্দিকে
খঞ্জনা- খঞ্জনি, অকুলান
পরিত্রাহি, পবন বাউড়ি;
প্রৌঢ়ত্বের, জাদুমন্ত্র ভেলা;
মাতামহুরির, বন্য ঢল,
পাড়ি ধরা, এত কী সহজ ;
কাল অকালের প্রতীক্ষার,
নাই অবশেষ, জলমাটি
হাড় ধ’সা গর্তে, জেগে আছি
সাতকাহনের, পারাপারে
জনকথিকার, আদি পদ
অস্তাচলে, রঙে ও রেখায়
শেষ যুদ্ধ, রিক্ত বংশধর,
শূন্য বৃন্তে, রেণু ঝরে গেলে ;
ঝাঁকে – ঝাঁকে, ভ্রমর-ভ্রমরা !
প্রত্যার্পণ
ধরণির প্রান্তসীমা তীরে
খাদ বরাবর, অসীমের
অমিত নী:সীম, বনাঞ্চল
ফুললতাপশুপ্রাণিপাখি
মানবসন্তান, জড়াজড়ি
বহুকাল অন্তকাল পার,
অরব নিরব ঘুমস্বপ্নে,
আদ্যিযুগ, বরফ ফসিল,
প্রত্নপ্রতিমা, ধূপকুয়াশার ;
স্বপ্ন থেকে ঘুম, যতদূরে
ঘুম থেকে স্বপ্ন, ছুটে মরে,
বেছে নিক পথ, বেপথের
পড়িমরি,আত্মহননর;
জেগে ওঠে , চাঁদের কিরণ
গান, কোটিকণ্ঠে ঐকতান
অলীক বন্দনা,নাক্ষত্রিক
প্লাবনে ভাসিয়ে: ওই শোনে
মাশুল
সূর্যখোঁড়া মূকচিত্র , কালা ও বধির ;
তালবিরিক্ষির ডগা ছুঁয়ে, আমি,
ভেসে চলি জোছনাআলোকে, দূর
প্রান্তদেশে, সীমাঅসীমের ভেঙে, খাঁচা
দিগন্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকি, লাশ
আমি সাক্ষী, আদি ও অন্তের, কুশীলব
কঙ্কাল তো নয়, শুধুমাত্র একখানি, হাত,
চাঁদবালু অভিসারে, পরিপূর্ণ ও স্বাধীন,হাসি
ধাঁধা বা কৌতুক, চিত্র থেকে খসে মুখ, ভাঁড়
চেয়ে আছি, সৃষ্টিজ্বলা চোখ হতবাক ও বিমূঢ়,
কাঙাল ভিখারি নিষ্করুণ খুনি বা ধর্ষক ;
কোন ফাঁকে, পাঁয়তারা কষা হয়ে গেছে, মেধায়মননে,
সুবাতাস, চতুর্থ পঞ্চম সমরের, ভেবে মরি, কোন লোকে;
সামাল সামাল হে বৈরাগ্য, তবুও বা, হয় হয়তো হয়
মাটি পাওয়া নিজজীবাশ্মে বিরুদ্ধে জাগরণ, নয় অসম্ভব !
চিঠি
এক রোজ , টিয়েপাখি ভোর,
কেন যে,, হঠাৎ কোনো এক
প্রেমিকের, প্রেমপত্র বলি,
দিয়েছে আমাকে, পড়ে দেখো
লিখেছিল, কে কাকে, কে বা কে,
ধরে নি, পর্বত সমুদ্রকে,
হয়তো, তৃণগুচ্ছ বৃষ্টি বরাবর
দুর্ধর্ষ খরার, প্রান্ত দিনে
বিধুর আকাশ, ধরণিকে;
হতভম্ব, বিমূঢ় গর্ধভ,
প্রকম্পিত একজোড়া হাতে,
মেলে ধরি, চক্ষু মুখোমুখি
এ কী , ইতস্তত বা বিস্রস্ত
আঁক রেখা সম্পাদ্য ত্রিভুজ
সমীকরণের বামূঢ় বা
আসা-যাওয়া,অপস্রিয়মাণ
রোদ্দুরে উধাও, সেই পাখি,
বলে গেল, তুমি হে বাতিল,
সময় এখনো, যতটুকু
হাতের নাগালে, কেটে পড়ো
ভীতআতঙ্কিত শিরদাঁড়া
বেয়ে, সরীসৃপ উর্ধ্বগামী ,
পরাভূত, নিষ্পপ্ন নিষ্কামা;
ঠাঁয় বসে, ভুবনেশ্বর হে ;
কোন কালে, দয়িত- দয়িতা,
মন বিনিময় লেখাজোখা
শব্দলিপি ইংগিত ইশারা,
মান, হায় রাধে হায় খোদা !
ভাবি নি
আমি চাই, বিকল্প ধরণি,
স্মরণে অনন্য ভূমণ্ডলে ;
তীর্থযাত্রা, রক্তের আগুন
জলে, কল্পহীন কল্পলোকে;
আগ্নেয়গিরি উদ্গীরণ
হৃদকমলের, পদ্মফোঁটামধু ;
আণবিক বিসিফোরণ্ শিলা,
তার কণ্ঠে, সাতনরীহার ;
গড়িয়ে পড়েছি ভূমিখাদে
শ্বেতকবরীতে মোড়ো, মাথা
থেকে পা,সঙ্গিনী, কেউ ছিল,
জানি, আদিপিতা নই, তবু
কে লেখে নিজের শোকগাথা,
খুঁডে তোলে , বিস্মৃত পাথরে
বিভ্রান্ত ,বিরূপ কাহিনির,
সীলবদ্ধ, নির্বীর্য লক্কড়ে !
কারো জন্য নয়
জন্ম, যে হল এ-ভাবেই,
সব আয়োজন, ভালুকের;
ঝোপঝাড় সুন্দরি গজারি
নদীস্রোত সাম্রাজ্য তৃণের ;
লুকিয়ে থাকার অবসর
মিলেছে প্রচুর, ঘাপটি মেরে ;
মানব- মানবী চোখেমুখো ,
ঘোঁয়াকুয়াশার আচ্ছন্নতা
ঘোরে, দেখি, বেশুমার কুঁডি
ফেটে বনলতাগুল্ম ফুল
সাদা- সাদা, বরফের হিম,
ঢেকে ফেলে দিগন্ত মেরুর ;
স্বদেশ প্রত্যার্তন, ঘটে
আগামি বছর, নির্ধারিত
বুকে জ্বেলে, শীতার্ত প্রদীপ,
ঘৃতচন্দনের ঘ্রাণ, জিভে ;
ভোররাত, ভালুক মায়ের
কান্না, হিমবাহে ধ’স, ডাকে