আম্মার জাকারিয়া
সকল প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্র জন্য বরাদ্দ, যিনি তাঁর সুস্পষ্ট কিতাবে বলেছেনঃ (আর তার কথার চেয়ে কার কথা অধিক উত্তম হতে পারে যে আল্লাহ্র পথে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে আর বলে আমি একজন মুসলিম?
দুরুদ ও সালাম পেশ করি সর্বশ্রেষ্ঠ দা’ঈ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি, যিনি হলেন সর্বশেষ নবী। যাঁকে আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় তাঁর পথের দাঈ হিশেবে প্রেরণ করেছেন। আর তাঁর শানে আল্লাহ বলছেনঃ (হে নবী, আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরুপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহ্র আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপরুপে)।
আল্লাহ্র সন্তুষ্টিতে ধন্য হোক সাহাবী আর তাবিঈনদের জীবন যাঁরা আল্লাহ্র দাওয়াতকে সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন আর তাঁরই পথে প্রদর্শিত হয়েছেন। আর যারা তাঁদেরকে সঠিকভাবে কিয়ামত অব্দি অনুসরণ করবে তাদেরকেও আল্লাহ তাঁর সন্তুষ্টির চাদরে আবৃত করুন।
আরও পড়ুন: শেরপুরে ইসলাম গ্রহণ করলেন একই পরিবারের ৭ জন
বর্তমানে একাডেমিক পদ্ধতিতে গুরূত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কিছু শাস্ত্রের প্রাথমিক ধারণা সম্বলিত বই লেখাটা অত্যন্ত আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যাতে করে মানুষ সেগুলোর সাথে পরিচিত হতে পারে এবং সেগুলোর বিষয়বস্তু ও সারকথাগুলো যেন পাঠকদের সামনে তুলে ধরা যায়।
কোনো শাস্ত্র যত বেশি মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়, তার বিষয়বস্তুর ভিন্নতা ও বৈচিত্র তত বেশি দেখা দেয় এবং আলাদা করে উৎপত্তি ও ইতিহাস তৈরী হয়, তখন লেখার মাধ্যমে সেটার প্রাথমিক ধারণা দেওয়াটা আরো বেশি দরকারী হয়ে পড়ে।
দাওয়াহ্ শাস্ত্র যেহেতু উৎপত্তিগতভাবে একেবারে নতুন একটি শাস্ত্র এবং বিষয়ভিত্তিক বিন্যস্ত একটি ইসলামী জ্ঞান সেহেতু এই শাস্ত্রের ব্যাপারেও প্রাথমিক ধারণা দেওয়া দরকার, যার মাধ্যমে পাঠক সহজেই এই জ্ঞানটিকে বুঝতে পারবে আর অজ্ঞরা তা সম্পর্কে জানতে পারবে।
ইসলামী দাওয়াত বলতে শুধুমাত্র স্বতঃস্ফূর্ত কোনো তৎপরতা কিংবা শুধু মানুষকে উপদেশ দিয়ে যাওয়া এবং তাদেরকে ইসলামের মাহাত্ম্য ও শিষ্টাচার স্মরণ করিয়ে দেওয়া বুঝায় না, – যেমনটি অনেক মুসলিম মনে করে থাকেন ওবং অনেক দাঈরাও সাম্প্রতিক সময়গুলোতে এটারই চর্চা করে আসছেন – বরং ইসলামী দাওয়াত তার সুচনালগ্নে যেমন একটা তাত্বিক ও প্রায়োগিক তৎপরতা হিসেবে পরিচিত ছিলো এখনও সেরকমই আছে। যার আছে স্বতন্ত্র মূলনীতি, উদ্দেশ্য ও উৎস, যা একাডেমিক্যালি পঠিত কিছু মূলনীতির উপর ভর করে আছে এবং নির্দিষ্ট কিছু শারঈ বিধির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। সুতরাং ইসলামী দাওয়াত এভাবেই তার জন্য সবচেয়ে সঠিক পন্থা, সবচেয়ে সুদৃঢ় পদ্ধতি আর উত্তম উপায়টাকেই বেচে নেয়। কারণ এটি হলো সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাজ যা তাঁর আগের রাসূলরা (আঃ) আঞ্জাম দিয়েছিলেন। পাশাপাশি এটি তাদেরও কাজ যারা সঠিকভাবে বুঝেশোনে মুহাম্মাদ (সাঃ) কে অনুকরণ করেছে।
আল্লাহ বলেনঃ ( সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রসূলগণকে প্রেরণ করেছি যাতে তাঁদের পর আল্লাহ্র প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে। আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশীল ও প্রাজ্ঞ।)
তিনি আরো বলেনঃ (আপনি বলুন, এটাই আমার পথ। আল্লাহ্র প্রতি মানুষকে আহবান করি সজ্ঞানে আমি এবং আমার অনুসারীবৃন্দও…।)
মানুষ এমন এক সময়ে এসে হাজির হয়েছে যেখানে তারা দাওয়াহ্ মানে বোঝে শুধুমাত্র ওয়াজ নসিহত করা অথবা ইবাদত ও যিকির করা কিংবা জ্ঞানার্জন করা অথবা আন্দোলন ও জিহাদ করা ইত্যাদি। দাওয়াতের অর্থকে তারা এর যে কোন একটা বিষয় অথবা মতবাদে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। তারা ভুলে গেছে যে দাওয়াতের মধ্যে যাবতীয় সব কল্যাণ নিহিত আছে। ফলে দাওয়াতের প্রভাবটা মানুষের মধ্যে দুর্বল হয়ে পড়েছে, জীবনে এর কল্যাণ সংকুচিত হয়ে গেছে আর এর অর্থে অনেক ভেজালের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
আর এই কারণে এই গুরুদায়িত্বটা একনিষ্ঠ আর সংস্কারক আলিমদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দাওয়াতের ভুল অর্থকে ঠিক করে তার সঠিক অর্থ প্রকাশ করতে ও সেটার ভিত্তিতে জাতি গঠন করতে তাঁদের বেগ পেতে হচ্ছে। তাঁদের দাওয়াতি তৎপরতাকে উম্মাহর শত্রুদের বহিরাগত সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আগেই মুসলিমদের আভ্যন্তরীণ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর এ কারণে সংস্কার ও জাগরণের কাজে মন্থরতা চলে এসেছে।
আমি কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দাওয়াহ্ শাস্ত্রের গুরুত্ব ও পড়াশোনা নিয়ে অবহিত করেছি। এর ফল হিসেবে কিছু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দাওয়াহ্ শাস্ত্র নিয়ে বিভাগ খুলেছে। তন্মধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এটার জন্য আলাদা ফ্যাকাল্টিও খুলেছে।
১৩৯২ হিজরীতে (১৯৭২ খ্রি) যেদিন ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিয়াদে উচ্চতর ইসলামী দাওয়াহ্ ইন্সটিটিউট খুলে সেদিন দাওয়াতি কাজ ও গবেষণার গুরুত্ব অনুধাবণ করে আমার খুব ইচ্ছা হয়েছিলো অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কর্মস্থল শরিয়া ফ্যাকাল্টি থেকে সেখানে চলে যাই। কিন্তু এটা খোলার পরের বছরেই আমার পদত্যাগের দৃঢ় ইচ্ছা আর নিজের দেশে ফেরাটা সেটা আর হতে দেয়নি। (চলবে…)।
লেখক: ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর,
আফাদ