নিউজ ডেস্ক : কক্সবাজারের আদালত চত্বরে সংঘটিত বহুল আলোচিত ‘গণধর্ষণ’ মামলার বাদী রুনা আক্তারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
১৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নিজের বসতবাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া রুমা আক্তার কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের আউলিয়াবাদ এলাকার শফিকুল ইসলামের মেয়ে।
ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কবির জানান, বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা ৩০/২৩ নাম্বার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানার একদল মহিলা পুলিশ বসতবাড়ি থেকে রুনা আক্তারকে গ্রেফতার করেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের মার্চে কক্সবাজারের আদালত চত্বরে কথিত গণধর্ষণের মামলা দায়ের করেন রুনা আক্তার। মামলাটি আদালত কর্তৃক মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি রাশেল উদ্দিন বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭(২) ধারার ওই মামলার বাদীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন আদালতে। এই মামলায় রুনা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন’ দাখিল করেছে পুলিশ।
মামলার আসামি ফিরোজ আহমদ (৪৭), রাসেল উদ্দিন (৩৮), মো. শরীফ (৪৮) ও নুরুল ইসলাম (৪৮)কে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের নিমিত্তে ১৭৩ ধারা মতে গত বছরের ২৫ জুলাই আদালতে ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন’ জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) নাছির উদ্দিন মজুমদার।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৭/৯ (৩)/৩০ তৎসহ ৩৮০ ধারায় গত ১৫ মার্চ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন ঈদগাঁও ইসলামাবাদের ৮ নং ওয়ার্ডের আউলিয়াবাদের শফিকুল ইসলামের মেয়ে রুনা আক্তার (২৯)। যার জিআর মামলা নং-১৭৭/২০২২। এ মামলায় এজাহারভুক্ত ৪ আসামি ছাড়া অজ্ঞাতনামা ছিল আরো ৫ জন।
পুলিশের দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান আসামি ফিরোজ আহমদ বাদিনী রুনা আক্তারের স্বামী। ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার্ড কাবিননামামূলে ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সাংসারিক বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য ও বিরোধ দেখা দেয়।
গত ১৪ মার্চ স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া থামানো ও নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন রাসেল উদ্দিন, মো. শরীফ ও নুরুল ইসলাম।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তদন্তকালে সাক্ষ্যপ্রমাণ, সিসিটিভি ফুটেজ, ডাক্তারি রিপোর্ট বিশ্লেষণে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। বরং এলাকার কতিপয় কু-চক্রিমহলের কুপরামর্শে স্বামী ও তার বন্ধুদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছে। বাদিনী রুনা আক্তার অভিযোগের স্বপক্ষে কোন তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন নি।
এদিকে, পুলিশের দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে ‘নারাজি’ দিয়েছিলেন বাদিনী রুনা আক্তার। গতবছরের ১০ আগস্ট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কক্সবাজার আদালতে আবেদন দেন। পরবর্তী ধার্য তারিখে আবেদনের শুনানি হয়। শুনানিতেও মামলা থেকে সকল বিবাধীদের অব্যহতি দেয়া হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সহ-সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) সাহাব উদ্দীন সাহীব বলেন, বাদিনী নিজের স্বামীকে এজাহারে ‘স্বামী’ স্বীকৃতি না দিয়ে তথ্য গোপনপূর্বক মামলা দায়ের করেন। মামলাটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত, মিথ্যা ও সাজানো।
তিনি বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীগণ বিজ্ঞ আদালতের নিকট ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধরামতে জবানবন্দিতে ‘এমন ঘটনা ঘটেনি’ মর্মে জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্যপ্রমাণ, জবানবন্দি ও ঘটনার পারিপার্শ্বিক সব কিছু বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন’ দাখিল করেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এডভোকেট সাহাব উদ্দীন বলেন, যা সত্য তাই তদন্তে ওঠে এসেছে। মামলাটি চূড়ান্তভাবে আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় ওই মামলা থেকে আসামীদের অব্যহতি দেওয়া হয়।
Leave a Reply