রাইজিং কক্স ডেস্ক: চট্টগ্রাম করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ‘সর্বোচ্চ ঝুঁকি’তে রয়েছে- স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এমন বার্তা এসেছে আগেই। বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের নিয়েই এ শঙ্কা ছিল সংশ্লিষ্টদের। কারণ আগতদের মধ্যে আক্রান্ত ভাইরাসবাহী থাকলে তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত কক্সবাজারে শনাক্ত হওয়া এক বৃদ্ধা নারীর করোনা শনাক্ত হওয়ার পর এই ভাইরাসের ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়ে চট্টগ্রাম নগরীও।
সৌদি থেকে দেশে ফিরে নগরীর দুই ছেলের বাসায় তিন দিন ছিলেন তিনি। এরপর তিনি কক্সবাজার যান। এ ঘটনায় শুধু কক্সবাজার নয়, করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামেও। যদিও নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা ও বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজারে দুটি বাড়ি প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউন করে দেয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে আক্রান্ত নারীর সন্তানের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেয়ায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ তিন কর্মকর্তা হোম কোয়ারেন্টিন পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অবশেষে বুধবার চট্টগ্রামে এসেছে করোনা শনাক্তকরণ কিট। ফৌজাদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডিতে এ কিট দিয়ে শুরু হয়েছে পরীক্ষা কার্যক্রমও।
অপরদিকে নগরীর খুলশী থানাধীন উত্তর খুলশী এলাকার ২নং রোডের ৬১/সি নম্বর বাসায় মঙ্গলবার লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ওই বাসায় অবস্থানরত সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে আসা প্রায় ৩০ জনের বেশি নাগরিক করোনো ভাইরাস প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে নিয়মিত অফিস করছেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম জানান, আকিরো সাইতো নামের এক জাপানি নাগরিক ১১ মার্চ বাংলাদেশে এসে হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে তার কর্মস্থল চট্টগ্রাম ইপিজেডের সেকশন-৭ এ নিয়মিত অফিস করছেন। শুধু আরিকো সাইতো নন সেখানের ৩০ জনের বেশি বিদেশি নাগরিক কোয়ারেন্টিন নিয়ম মানছেন না।
মঙ্গলবার বিকালে ইমিগ্রেশনের তথ্য অনুসারে বিদেশ ফেরত ওই সব নাগরিকের হোম কোয়ারেন্টিন তদারকি করতে গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়। এ বিষয়ে খুলশী থানাকে নজরদারি করতে বলা হয়েছে।
১৩ মার্চ সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আক্রান্ত ওই নারী উঠেছিলেন নগরীর চান্দগাঁও থানার সিডিএ আবাসিক এলাকার ছেলের বাসায়। এরপর বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজার এলাকায় অপর ছেলের বাসায় এক দিন থেকে কক্সবাজার গিয়েছিলেন।
ওমরা হজ্জ পালন শেষে সৌদি ফেরত এ নারীর করোনা লক্ষণ দেখা দেয়ায় রক্তের নমুনা ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের বাসিন্দা ওই নারীর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ৭৫ বছর বয়সী ওই নারী কক্সবাজারের চকরিয়ার খুটাখালীর বাসিন্দা।
১৩ মার্চ দেশে ফিরে তিনি তার দুই ছেলের চট্টগ্রাম নগরীর বাসায় অবস্থানের কথা জানান। ১৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি তার দুই ছেলের বাসায় ছিলেন। এরপর ২১ মার্চ ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা নিয়ে কক্সবাজারের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন।
প্রথমে তিনি বিদেশ ফেরত তা জানাননি। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসক-সেবিকাসহ সংশ্লিষ্টরা স্বাভাবিক রোগীর মতোই তাকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন। পরে ওই নারী বিদেশ ফেরত এবং তার মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দেয়ায় পরদিন পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়।
দু’দিন পর ঢাকা থেকে পাঠানো রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসে। এটাই বৃহত্তর চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া প্রথম করোনা রোগী। আর এই খবর আসার পর ওই নারীকে যারা চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তারা যেমন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তেমনি ওই নারী যেসব বাসায় অবস্থান করেছেন সেসব বাসায় পরিবারের সদস্য ও স্বজনরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
বুধবার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. ফজলে রাব্বি যুগান্তরকে বলেন, কক্সবাজারে করোনা শনাক্ত হওয়া ওই নারীর দুই ছেলের বাড়ির সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত নগরী ও জেলায় মোট ৯৬৫ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ায় ৮ জন কোয়ারেন্টিনের আওতামুক্ত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ৩ কর্মকর্তা হোম কোয়ারেন্টিনে : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সৌদি ফেরত নারীর সন্তানের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়ায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্ত্তীসহ তিন কর্মকর্তা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্ত্তী বলেন, রোববার সকালে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কক্সবাজারের ১৩ জন কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডে একটি বৈঠক করি।
বৈঠকে করোনা শনাক্ত হওয়া নারীর এক সন্তানও ছিলেন। উনিও কেন্দ্র সচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। বৈঠকে আমি ছাড়াও বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও কলেজ পরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন। আমরা তিনজনই হোম কোয়ারিন্টিনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
চট্টগ্রামে এসেছে করোনা শনাক্তকরণ কিট, পরীক্ষা শুরু: বুধবার করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট চট্টগ্রাম এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) পরিচালক আবুল হাসান। তবে কি পরিমাণ কিট পৌঁছেছে তা জানাতে পারেননি তিনি।
বিআইটিআইডি’র পরিচালক প্রফেসর আবুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, দুপুরে কিট হাসপাতালে এসেছে। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে দুটি স্যাম্পলের রিপোর্ট জানতে কাজ শুরু করেছি। তবে এ রিপোর্ট পেতে ৮-১০ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। -যুগান্তর
Leave a Reply