1. kalamazad28@gmail.com : risingcox.com : Rising Cox
  2. msalahuddin.ctg@gmail.com : RisingCox :
  3. engg.robel@gmail.com : risingcoxbd :
বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৪:২১ অপরাহ্ন

ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে ভুল মাস্ক

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০২০
  • ৬ Time View

শুকদেব কুমার বিশ্বাস : দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আজ আমরাও আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার। কিন্তু উদ্বেগজনক সত্য হচ্ছে, দেশে বর্তমানে প্রচলিত মাস্কগুলোর বেশির ভাগই চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে মোট আমদানি করা ও উৎপাদিত মাস্কের সিংহভাগ হচ্ছে প্রচলিত নন-উভেন থার্মোপ্লাস্টিক শপিং ব্যাগের কাপড় দিয়ে। নন-উভেন থার্মোপ্লাস্টিক কাপড় হচ্ছে বর্তমান বাজারের সবচেয়ে সস্তা প্লাস্টিক। এ–জাতীয় কাপড়কে বলা হয় পিপি-ফেব্রিক্স, অর্থাৎ এটি প্রোপিলিনের পলিমার দিয়ে তৈরি। পলিথিন যেমন ইথিলিনের পলিমার, পিপি-ফেব্রিক্স তেমন প্রোপিলিনের পলিমার দ্বারা তৈরি। ফলে নন-উভেন কাপড় তৈরিতে কোনো সুতা ব্যবহার করা হয় না; এটি সরাসরি তাপ-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হয়।

এ–জাতীয় কাপড়ের তৈরি মাস্কে সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে কাপড়টির উভয় পাশে (ওপরে ও নিচে) প্রচুর পরিমাণ ফ্লটিং ফাইবার বা আলগা তন্তু (আঁশ-আঁশ) থাকে; এই আলগা তন্তুগুলোকে বলা হয় মাইক্রো-প্লাস্টিক। এ ধরনের কাপড়ে তৈরি একটি মাস্ক আপনি মাত্র কয়েক মিনিট নাকেমুখে রাখা মানে অসংখ্য মাইক্রো-প্লাস্টিক আপনার ফুসফুসে পুরে নেওয়া। অতিক্ষুদ্র এসব পার্টিক্যালের কিছু আপনার ফুসফুসের অত্যন্ত গভীরের টিস্যুতে আটকে যেতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে ফুসফুস ক্যানসারের কারণ হতে পারে। সবচেয়ে ছোট কিছু উপাদান সরাসরি রক্তনালিতে চলে যেতে পারে, যা পরিণতিতে স্নায়ুরোগ, ক্যানসার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ অন্যান্য রোগের অতি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। মানবশরীরে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই, যার মাধ্যমে শরীর এসব উপাদান বের করে দিতে পারে অথবা নিঃশেষ করে দিতে পারে। ফলে এ জাতীয় মাস্ক পরিহার ও বর্জন করাই শ্রেয়।

মাস্ক যদি শপিং ব্যাগের কাপড়ের বদলে ভালো মানের নন-উভেন কাপড়েও বানানো হয়, তবুও তা দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা অনুচিত। প্লাস্টিক নিজে মানবস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর আর প্লাস্টিক প্রসেসিংয়ে যুক্ত থাকা অন্যান্য রাসায়নিক, যেমন থ্যালেট, বিপিএ সমমাত্রায় ক্ষতিকর। সরাসরি নাকে সংযুক্ত থাকায় এ–জাতীয় কাপড়ে তৈরি মাস্ক থেকে উচ্চমাত্রায় থ্যালেট, লিড, মারকারি, ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতব এবং বিপিএ উপাদান মানবশরীরে প্রবেশ করবে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুসারে এসব রাসায়নিক উপাদান মানবশরীরে ক্যানসার, জন্মগত ত্রুটি, ক্রনিক ব্রংকাইটিস, লিভার ও চর্মরোগ, স্থূলতা, শ্বসনতন্ত্রের রোগ, হরমোনের তারতম্য, স্তন ক্যানসার, হাঁপানি, নারী-পুরুষের উর্বরতা হ্রাস, পুরুষের যৌনাকাঙ্ক্ষা হ্রাস, শুক্রাণুর মান ও সংখ্যা হ্রাসসহ বহুবিধ রোগের সঙ্গে যুক্ত। উন্নত বিশ্বের সব দেশে এসব উপাদানের মাত্রা পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর তা বাজারজাত করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। দেশে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধিবিধান বা রেগুলেশন আছে কি না, আমার জানা নেই। থাকলেও তার কতটুকু প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়, সেটি বিবেচ্য।

নিতান্ত প্রয়োজনে উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন স্থানে পিপি মাস্ক অল্প সময়ের জন্য পরিধান করা যেতে পারে। তিন স্তরের সার্জিক্যাল মাস্ক ভালো বিকল্প হতে পারে। আন্তর্জাতিক মানসম্মত ল্যাবে (টেক্সটাইল এবং মাইক্রোবায়োলজিক্যাল) পরীক্ষিত কয়েক স্তরের টেক্সটাইল মাস্ক সর্বোত্তম সমাধান হতে পারে।

আরেকটি বিষয়। থার্মোপ্লাস্টিক এসব মাস্কে প্রতারক মাস্ক ব্যবসায়ীরা কোনো এয়ার ফিল্টার বা বায়ু ছাঁকনি ব্যবহার না করেও শুধু একটি প্লাস্টিক চাকতি দিয়ে জনসাধারণকে প্রতারিত করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে। কিছু অতিচালাক ব্যবসায়ী ফিল্টার চাকতির নিচে বসিয়ে দিয়েছে লাল, নীল নমনীয় প্লাস্টিক, যাতে সাধারণ কেউ তাদের এই প্রতারণা ধরতে না পারে। এ ক্ষেত্রে হয় প্লাস্টিক চাকতিটি শুধু দুপাশ থেকে চাপ দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া (মাঝখানে কোনো ফিল্টার উপাদান নেই), নাহয় মাস্কটির নির্দিষ্ট জায়গাটি কেটে তাতে ফিল্টার কাপড় বা উপাদান না বসিয়ে মাঝখানে একটি নমনীয় প্লাস্টিক বসিয়ে দুই পাশ থেকে আটকে দিয়েছে। সত্যিকারের ফিল্টার না থাকার কারণে শ্বাস নেওয়ার সময় ফুসফুসের নেগেটিভ প্রেশারে তুলনামূলক অতিমাত্রায় মাইক্রো-প্লাস্টিক ব্যবহারকারীদের ফুসফুসে ঢুকে পড়ছে।

সাধারণ অর্থে পিপি কাপড় ধোয়ার যোগ্য নয়, অজ্ঞতাবশত অনেকে এটি ধুয়ে আবার ব্যবহার করছেন; ধোয়ার ফলে আরও উচ্চমাত্রায় আলগা সুতা, থ্যালেট ও বিপিএ উপাদান মানবশরীরে প্রবেশ করছে। করোনার ঝুঁকি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে জাতিগতভাবে আমরা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে চলে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক, সব সংবাদমাধ্যম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

শুকদেব কুমার বিশ্বাস: বস্ত্র প্রকৌশলী।

(প্রথম আলো থেকে সংগৃহীত)

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 Rising Cox
Theme Customization By NewsSun